গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের অধস্তন আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে আহ্বান জানানো হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের পর এসব পদের জন্য বর্তমান কর্মকর্তাসহ সরকারপন্থি আইনজীবীদের তদবির শুরু হয়েছে।
তবে সব আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বলা হবে না বৃহস্পতিবার এমন ইঙ্গিত মিলেছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কাকে কাকে বলা হবে তা শিগিগর ঠিক করব। আমরা চিন্তা-ভাবনা করে বলব। দ্রুত এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। সংশ্লিষ্টদের সবার সঙ্গে পরামর্শ করব।’
আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে তাদের কিছুটা অস্বস্তি ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও তার বক্তব্য যৌক্তিক। দায়িত্বরতদের অনেকেই আছেন, যারা এক দশকের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকলেও আদালতে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় তারা দিতে পারেননি। তাদের পদত্যাগের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর গত কয়েক দিন ধরেই আইনজীবীরা তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কেউ স্বপদে বহাল থাকতে, কেউ চান কাজের স্বীকৃতি, কেউ আসছেন পদোন্নতির জন্য। কেউ আসছেন আইন কর্মকর্তা হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়ার জন্য।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আইনমন্ত্রী যাদের উদ্দেশে পদত্যাগের কথা বলেছেন, তাদের অনেকে ১০ বছরের বেশি সময় আগে বিএনপি থেকে এসেও আইন কর্মকর্তা হয়েছেন। এসব কারণে আইনমন্ত্রী তাদের পদত্যাগের কথা বলেছেন। আইনজীবীদের অনেকে, বিশেষ করে তরুণ আইনজীবীরা প্রতিনিয়ত আসছেন। কেউ পদ ধরে রাখতে, কেউ আসছেন পদোন্নতি পেতে। কাজের স্বীকৃতি চান অনেকে। এখন সবার বিষয়টি তো আর বিবেচনা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমাদের কাছে অনেকে আসতেই পারেন। এখন আইনমন্ত্রী যেহেতু দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, বিষয়টি একান্তই এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আমরাও আলোচনা করে দেখব কী করা যায়।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গত রবিবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে সব আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বলা হবে।’ পরে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, পিপি, এপিপি, জিপি, এজিপিদের পদত্যাগ করতে বলা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থি এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অনেকেই আমাদের কাছে তদবির নিয়ে আসছেন। আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের কথা বলা ও নতুন নিয়োগ এগুলো একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সব আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগের কথা বললে আদালত কীভাবে চলবে সেটিও একটি ব্যাপার। বিষয়টি একটি পদ্ধতির মাধ্যমে হবে। আমরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করব।’
আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টে সরকার সমর্থক আইনজীবী নেতাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বিগত সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। কিন্তু নিকট অতীতে সুপ্রিম কোর্ট বারে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের ভরাডুবি ঠেকানো যায়নি।
আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানানোর ঘোষণাকে ‘প্রসিকিউশন’ ঢেলে সাজানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সরকার সমর্থক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। তারা বলছেন, যারা আইন কর্মকর্তার পদ আঁকড়ে থাকলেও নিষ্ক্রিয় এবং ত্যাগী নন, তাদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ও কর্মঠদের নিয়োগ দিয়ে প্রসিকিউশন শাখাকে শক্তিশালী করা হবে। এতে করে ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের বারগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভেকেট আবদুর বাসেত মজুমদার বলেন, ‘অনেকে আট-দশ বছর ধরে দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। এজন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন অঙ্গনে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়া আমরা করতে পারিনি। কেউ সুবিধা পেয়েছে, কেউ পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর অনেকেই আমাদের কাছে আসছেন। দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বা বহাল থাকার জন্য তদবির চলছেই। যারা আসছেন, চাইলেই তো তাদের জন্য তাৎক্ষণিক কিছু করা সম্ভব হবে না। আমাদের সংগঠনের (বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ) যারা নেতৃস্থানীয় তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে সাব্যস্ত করব।’
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘যে আইনজীবীরা পাঁচ-দশ বছর ধরে আদালতে প্রাকটিস করছেন, যারা দল করেন, যোগ্য তারা আইন কর্মকর্তা হওয়ার আশা করতেই পারেন। আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, সংগঠন করি আমাদের কাছেই তারা আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘যারা আসছেন তাদের অপেক্ষা করতে বলছি। প্রক্রিয়া শুরু হলে জীবনবৃত্তান্ত দিতে বলেছি, কিন্তু আশ্বস্ত করছি না। কারণ আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ তো আমি দেব না। এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আর যেহেতু এটি প্রক্রিয়াধীন সেহেতু বেশি কিছু বলাটা আমার জন্য সমীচীন নয়।’
সূত্র: দেশ রূপান্তর