জাতীয়

‘গ্রেপ্তারে কোন এখতিয়ার নেই দুদকের’: প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে অভিযুক্তদের সরাসরি গ্রেপ্তার করে এবং রিমান্ডেও নেয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে দুদক এতদিন কোন আইনে এই কার্যক্রম চালিয়েছে।

রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বাসসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো গ্রেপ্তারের এখতিয়ার নেই, গ্রেপ্তারের জন্য তাদের কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদেরই বলতে হবে। তারা নির্দেশ দিতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা ধরে রেখে ওইখানে হাজতখানা বানাবে, হাজতে রাখবে এটা কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ না৷” শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘যার যার কাজ তার তার করতে হবে।”

এদিকে দুদক আইনের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিষয়ক ধারা ২০ এর উপধারা তিন-এ বলা হয়েছে এই আইনের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপরাধ অনুসন্ধান এবং তদন্ত কাজে থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা পাবেন।

আর ২১ ধারায় গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কমিশনের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যদি বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকে যে, কোনো ব্যক্তি তার নিজ নামে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির মালিক বা তার দখলে রয়েছে যা ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং যা ধারা ২৭ এর অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ তাহলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়েরের আগেই অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আবশ্যক হলে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

২০১৬ সালের মার্চ থেকে এ পর্যস্ত ৭৪৭ জনকে দুদক সরাসরি গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে গত বছর গ্রেপ্তার করেছে ১১৯ জনকে। শুধু গ্রেপ্তার নয় তারা আইনের অধীনে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডেও নেন। সাম্প্রতিক সময় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে আটক জিকে শামীম ও খালেদ হোসেন ভুঁইয়াকে তারা রিমান্ডে নেয়।

দুদক আইনে অনুসন্ধান আর তদন্তের দু’টি পর্যায় আছে। মামলার আগের প্রক্রিয়াকে বলা হয় অনুসন্ধান আর মামলার পরের কার্যক্রমকে বলা হয় তদন্ত। অনুসন্ধান, মামলা দায়ের, তদন্ত, চার্জশিট সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। প্রত্যেকটি পর্যায়েই তাকে আইনে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকুরেদের ব্যাপারে চার্জশিটের আগে গ্রেপ্তার করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন,‘‘দুদক এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের আইনগতভাবেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে দুদক আইনের কোনো ব্যাত্যয় ঘটেনি। কারণ দুদক আইনেই গ্রেপ্তারের এই ক্ষমতা দেয়া আছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে চাই না।”

দুদক সরকারের কাছে নিজস্ব বাহিনী গঠনের জন্য লোকবল চেয়ে আবেদনও করেছে। তবে এখন ঢাকায় অভিযান ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ থেকে দুদকের কেন্দ্রীয় দপ্তরকে ২৫ সদস্যের একটি টিম দেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে তারা গ্রেপ্তার বা অভিযানের সময় রিকুইজিশনের মাধ্যমে ফোর্স নেয়। দুদক সদর দপ্তরে একটি হাজত খানাও আছে। তবে এখনো সেটার ব্যবহার শুরু হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারের পর নিকটবর্তী থানায় রাখা হয়।

দুদকের গ্রেপ্তার এখতিয়ার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি জেনে মন্তব্য করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি একটু জেনে তারপর এনিয়ে কথা বলব।”

এদিকে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথার পরেতো আর কথা থাকে না। তার কথারতো একটা গুরুত্ব আছে। আর আমিতো এখন আর দুদকে নেই।”

তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন যে যার এখতিয়ারের মধ্যে কাজ করবেন, আমরাও সেটাই চাইব। সেক্ষেত্রে দুদকের যে আইন সে আইনে তাদের যে এখতিয়ার আছে তারা সেই আইনের মধ্যেই কাজ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একটা গুরুত্ব আছে৷ তার বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন যেটা বলছে সেটার সাথে যদি বিপরীত অর্থপূর্ণ হয় তাহলে সেটারও ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব দুদকের বলে আমি মনে করি। এই আইনটি তারা প্রয়োগ এবং চর্চা করছে। তাই যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে সেজন্য তাদের ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন।”

 

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button