গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের ৫ জন সদস্য কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন আজ রোববার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কারাগারা কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাদের সাক্ষাতের অনুমতি না দিলেও পরবর্তীতে তাদেরকে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, প্যারোল নিয়ে খালেদা জিয়াকে বোঝানোর জন্যই পরিবারের ৫ সদস্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্যারোল নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতিবাচক মনোভাবকে দূর করার জন্যই বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধু এবং বোনরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার মনে করছে, আইনী প্রক্রিয়ায় বা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে এখন মুক্ত করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা খালেদা জিয়াকে উপলব্ধি করানোর জন্যই পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা প্যারোলের বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করতে চাচ্ছেন না, এই নিয়ে তারা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করতে চাচ্ছেন না। কারণ বেগম জিয়ার একজন আত্মীয় বলেছেন যে, বিএনপির নেতৃবৃন্দ কি করতে পারবে, তা তারা এই দুইবছরে দেখে ফেলেছে। কাজেই তাদের ওপর আর কোনো আস্থা নেই, ভরসাও নেই।
এই বাস্তবতায় খালেদা জিয়ার পরিবার এখন নিজেরাই এখন সরাসরি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং দর কষাকষি করছেন।
তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার প্যারোলের যে শর্তগুলো একবছর আগে সরকার দিয়েছিল, সেই শর্তে সরকার অব্যাহত রয়েছে। সেই শর্তে খালেদা জিয়াকে প্রথমে তার দোষ বা অপরাধ স্বীকার করে নিতে হবে। এছাড়াও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে। প্যারোল পেলে তিনি কোনোরকম রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারবেন না- এই মর্মে মুচলেকা দিতে।
এই শর্তগুলো অপমানজন মনে করে বেগম জিয়া এতদিন প্যারোলে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এখন যেহেতু তার মুক্তির আর কোনো বৈধ পথ নেই, এজন্যই প্যারোলের দিকে যাচ্ছেন। বেগম জিয়াকে আজ কারাগারে বোঝানো হয়েছে, কৌশলগত অবস্থান এবং তার সুচিকিৎসার জন্য এটা ছাড় আর কোনো উপায় নেই।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এর আগে খালেদা জিয়া প্যারোলের ব্যাপারে অনঢ় এবং অনমনীয় অবস্থানে থাকলেও এখন অনেকটাই ইতিবাচক অবস্থানে এসেছেন। বিশেষ করে তিনি শর্তগুলোতে একটু নমনীয় হলে প্যারোল নিতে পারেন বলে তাঁর পারিবারিক সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলের ব্যাপারে পাল্টা শর্ত দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে, অপরাধ স্বীকারের ব্যাপারটা তিনি উহ্য রাখবেন যে তিনি অপরাধ করেছেন কিংবা তিনি দোষী কিনা সেটা উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, রাজনীতি থেকে অবসর নিবেন- এমন ঘোষণা তিনি দিতে চাচ্ছেন না। তবে প্যারোল করলে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন- এমন শর্ত তিনি মেনে নিয়েছে এবং তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন- এমন শর্তও তিনি মেনে নিয়েছেন বলে বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, খালেদা জিয়ার পরিবার আশা করছেন যে, সিটি নির্বাচনের আগেই একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারবেন।
তবে কোন কোন রাজনৈতিক মহল বলছে, সিটি নির্বাচনে বিএনপি ছাড় দিবে এমন শর্তে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হতে পারে।
তবে সরকারের একাধিক সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং সরকার বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলের আবেদন করলে সেটা বিবেচনা হবে আইনানুগ প্রক্রিয়ায়।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আইনগত ভাবে খালেদা জিয়ার জামিন দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। এটা আদালতের এখতিয়ার। আর বিএনপি যে আন্দোলনে করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে সেটা বিএনপির ব্যাপার। সরকারের হাতে একটি বিষয় আছে তা হলো প্যারোল। খালেদা জিয়া যদি প্যারোলের আবেদন করে তারপরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাতের পর প্যারোলের বিষয়টি কোন পথে এগোয় সেটিই দেখার বিষয়।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার