শ্রীপুরে স্কুলের মাঠ দখল করে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকায় দুটি বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। বিদ্যালয়ের মাঠে মেলার কারণে খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, উপজেলার মাওনা জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাওনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী তাঁত ও বস্ত্রশিল্প মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হস্ত ও কুটিরশিল্প ফাউন্ডেশন। দুটি বিদ্যালয়ের মাঠে এ মেলার আয়োজন করায় সেই মাঠে এক মাস খেলাধুলা বন্ধ থাকবে। ক্লাস চলাকালীন মেলা চলায় পাঠদান ব্যাহত হবে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েকজন মেলার প্রবেশ ফটকে ভাঙচুর চালান। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে এ ধরনের আয়োজন বন্ধ করতে বলেন তাঁরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, মাঠে মেলার আয়োজন করায় ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবে দুই হাজার শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হয়েছে একটি অডিটরিয়াম থেকে। অথচ আগে এই মাঠে জমকালো পাঠ্যপুস্তক উৎসব হতো। এক মাস মাঠে শিশুরা খেলতে পারবে না—এটা মানতে পারছেন না অনেক অভিভাবক।
স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি ফিরোজ আহমেদ বলেন, মাঠে স্টল তৈরির জন্য করা গর্তগুলোর কারণে দীর্ঘদিন এ মাঠ খেলার অনুপযোগী হয়ে যাবে। গর্তের আশপাশে রাখা মাটি শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, মেলার মতো বড় আয়োজনে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। এর প্রভাবে সবুজ দূর্বা মরে যাবে। মেলা শেষে মাঠের সৌন্দর্য সহজে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
স্থানীয় মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ঐতিহ্যবাহী একটি স্কুলমাঠে ক্লাস চলার সময় মেলার আয়োজন, এটা কীভাবে সম্ভব। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে যাঁরা এই মেলার অনুমতি দিয়েছেন, তাঁরা কোন বিবেচনায় এটা করেছেন। অনতিবিলম্বে এ মেলা বন্ধ করে মাঠ সংস্কার করতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে মাওনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মেলার জন্য স্টল তৈরি করা হচ্ছে। পুরো মাঠে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত খুঁড়ে বাঁশ স্থাপনের কাজ চলছে। কিছু স্টল তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অনেকেই জানিয়েছেন এ মাঠে ছোট-বড় অন্তত ২০০ স্টল হবে। স্টলের কারণে আড়াল হয়ে পড়বে দুটি বিদ্যালয়ের সব কটি ভবন।
মাওনা জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিম বলেন, এবার তাঁদের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষ ও অডিটরিয়াম থেকে বই দিতে হয়েছে। অন্যান্য সময় মাঠে উৎসব করে বই দেওয়া হতো। তিনি বলেন, সমস্যার কথা লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তাঁরা।
মাওনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে জেনে আমরা মেলার অনুমতি দিয়েছি। তবে আমাদের মাঠের একটি অংশ ঈদগাহের। তারা অনুমতি দিয়েছে কি না, জানি না।’
বাংলাদেশ হস্ত ও কুটিরশিল্প ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুল গনি মিয়া বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমতি নিয়েই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এ মেলার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি আছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমি শুনেছি, মেলা আয়োজনকারীরা ডিসি অফিসের অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তাঁরা তা পেয়েছে কি না, জানি না।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকতে পারে। তবে একটা স্কুলে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় মাঠে মেলা চলার বিষয়টি আপত্তিকর। তারা অনুমতি পেয়েছে কি না, তা রোববার নিশ্চিত হতে পারব।’
স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মেলার যে কাজ চলছে, এটা অনৈতিক। এতে স্কুলের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটবে। এই মেলা বন্ধ করার জন্য আমি ইউএনও এবং ওসিকে বলেছি।’
আরো জানতে…..
খেলাধুলা ছাড়া সবকিছু হয় রাজবাড়ি মাঠে
কালীগঞ্জে ‘সরকারী স্কুল মাঠে’ অনুমোদন বিহীন মাসব্যাপী মেলার আয়োজন!