‘এটিএম বুথ’ থেকে আসামির টাকা তুলে নেয় র্যাব সদস্য?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : র্যাব ২-এর এক সদস্যের বিরুদ্ধে আসামির ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা সিএমএম আদালতে মোহাম্মদপুর থানার একটি মাদক মামলার আসামি মো. নাদিম রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে বিচারকের কাছে এ অভিযোগ করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম মোরশেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে ওই রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়।
নাদিম রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন জিন্দাবাজার প্রথম লেনের মৃত নাসির উল্লার ছেলে। গত মঙ্গলবার মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলা বেড়িবাঁধ ৩ রাস্তার মোড়ে সুমাইয়া মার্কেটের সামনে থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলসহ নাদিম ও তার ছয় সহযোগীকে আটক করে র্যাব। পরে ওই রাতেই মোহাম্মদপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার নাদিমসহ ৭ আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে মোহাম্মদপুর থানার এসআই প্রদীব চন্দ্র সরকার তাদের আদালতে হাজির করেন।
শুনানিকালে নাদিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত ভূঁইয়া বাহাদুর অভিযোগ করেন, নাদিমকে গ্রেপ্তারের পর সাদা পোশাকে থাকা র্যাব সদস্যরা তার কাছে থাকা ডেবিট কার্ড নিয়ে নেন। পরে ওই র্যাব সদস্যরা নাদিমের হিসাব থেকে বেআইনিভাবে মোহাম্মদপুর এলাকার যে কোনো বুথ থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। ওই এলাকার বিভিন্ন বুথের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে কে টাকা তুলে নিয়েছে পাওয়া যাবে।
এ সময় বিচারক আসামি নাদিমকে ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তার ডাচ-বাংলা ব্যাংক ইসলামপুর শাখার হিসাব নম্বর ১১৮১০১১৪১৬৮৬। র্যাব সদস্যরা সিভিল পোশাকে ছিলেন। তাই যে তার ডেবিট কার্ড নিয়েছেন তার নাম জানতে
পারেননি। তাকে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে র্যাব গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বছিলা থেকে র্যাব ২-এর কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তাকে নিয়ে একটি বুথে এক র্যাব সদস্য প্রবেশ করে ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর জিজ্ঞাসা করেন। ভুল পিন নম্বর দেওয়ায় টাকা তুলতে না পেরে তাকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি সঠিক পিন নম্বর দিলে পরদিন সকালে র্যাব সদস্যরা দুই দফায় তার হিসাব থেকে এক লাখ টাকার মতো তুলে নেন।
শুনানির পর বিচারক ওই বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানালেও ডেবিট কার্ড নিয়ে টাকা তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে আইনজীবীর অভিযোগ লিখলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেননি। শুধু রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই মর্মে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ সম্পর্কে আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসনাত বলেন, আদালত অভিযোগটি শুধু আদেশে লিখেছেন। এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে আদালতের তদন্তের আদেশ দেওয়া উচিত ছিল।
জানা গেছে, মামলার এজাহার অনুযায়ী বাদী র্যাব ২-এর জেসিও নায়েব সুবেদার আবু আক্কাসের সঙ্গে গত মঙ্গলবার ওই অভিযানের সময় এসআই মো. খায়রুল হাসান, এএসআই মো. ফরহাদ আলী, নায়েক ফিরোজ হোসেন, ল্যান্স করপোরাল আরমানুল কবির, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ ও সারোয়ার হাসান ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে কার বিরুদ্ধে আসামি নাদিম অভিযোগ করছে তা স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি নিয়ে র্যাব ২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘আসামি নাদিম যদি আদালতের কাছে বলে থাকে, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে তবে সেটি অসত্য। এর মূল কারণ হলো, আগেও তাকে আমরা একাধিকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছি। সে একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ঢাকার একাধিক থানায় মাদক মামলা আছে। সর্বশেষ তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকা আছে। পরে তার সঙ্গে থাকা এটিএম কার্ড আমরা জব্দ করে ব্যক্তিগত মালামাল হিসেবে থানায় পাঠিয়েছি। আদালতের কাছ থেকে সুবিধা নিতে সে হয়তো এ ধরনের কথা বলেছে।’
সূত্র: আমাদের সময়