ইরানের শীর্ষ জেনারেলকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডসের অভিজাত বাহিনী কুদ’স ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি ইরাকে নিহত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।
পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে যে তাকে ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়েছে’।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে হওয়া এক হামলায় মারা যাওয়া বেশ কয়েকজনের মধ্যে কাসেম সোলেইমানি রয়েছেন।
ইরানের শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি জেনারেল সোলেইমানি। তার কুদ’স বাহিনী সরাসরি দেশটির প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে রিপোর্ট করে।
মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইরানের সাথে সম্পর্ক আছে, এমন লক্ষ্যবস্তুতে তারা হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি।
মার্কিন হামলা বা কারো নিহত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া গ্রুপ পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস রয়টার্সকে জানিয়েছে, জেনারেল সুলেইমানি ও ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হয়েছেন।
এর আগের খবরে বলা হয় বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রকেট হামলায় অনেক মানুষ মারা গেছে।
এই হামলার পরপর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রায় ৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
কীভাবে জানা গেলো হামলার ঘটনা?
পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশে থাকে মার্কিন নাগরিকদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী এক অভিযানে জেনারেল সুলেইমানিকে হত্যা করেছে।”
“ইরানের ভবিষ্যত আক্রমণের পরিকল্পনা বানচাল করতে এই হামলা চালানো হয়। সারাবিশ্বে মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।”
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডসও জেনারেল সোলেইমানির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে বড় সংখ্যক ইরাকি মিলিশিয়া আটক হয়েছে বলেও খবরে জানা যাচ্ছে, তবে এবিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কয়েকদিন আগে বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করার পর মার্কিন সেনাদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয় – ঐ ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরে এই হামলার ঘটনা ঘটলো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন যে ঐ অঞ্চলে মার্কিন কোনো ব্যক্তির ওপর আক্রমণ তারা বরদাস্ত করবে না।
দূতাবাসে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেন মি. এসপার।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের ওপর কোনো হামলা হলে তার জবাব আমাদের পছন্দের জায়গায় ও সময়ে দেয়া হবে। ইরানি শাসনব্যবস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন তাদের হঠকারি কার্যক্রম বন্ধ করে।”
ইরান কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে?
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ যারিফ এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি টুইট করেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের হঠকারিতার ফল ভোগ করবে।”
The US' act of international terrorism, targeting & assassinating General Soleimani—THE most effective force fighting Daesh (ISIS), Al Nusrah, Al Qaeda et al—is extremely dangerous & a foolish escalation.
The US bears responsibility for all consequences of its rogue adventurism.
— Javad Zarif (@JZarif) January 3, 2020
রেভোলিউশনারি গার্ডসের সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজায়েই বলেছেন, “ইরান অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেবে।”
ইরান সরকারের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে ঘন্টাখানেকের মধ্যে দেশটির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা এই ‘অপরাধী কার্যক্রম’এর বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসবেন।
জেনারেল কাসেম সোলেইমানি কে ছিলেন?
১৯৯৮ সাল থেকে মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ইরানের কুদ’স ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে থাকে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের ইরান সমর্থিত সরকারকে মদদ দেয়া এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জেনারেল সোলেইমানি।
১৯৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি প্রথম পরিচিতি লাভ করেন।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএস’এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা।
জেনারেল সোলেইমানি দুই বৈরি ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইরানের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও গত কয়েকবছরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের হেজবোল্লাহ অভিযান ও প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামি জিহাদের মত যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করতে ইরানের ‘প্রাথমিক অস্ত্র কুদ’স ফোর্স।’
এসব সংগঠনকে তারা অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
ইরানের রোভোলিউশনারি গার্ড ও তাদের অধীনস্থ কুদস ফোর্সকে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিজ্নিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
সূত্র: বিবিসি