আলোচিত

নির্বাচন প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ যাচাই করেনা কমিশন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আসছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের হলফ নামায় সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন সেটি নিয়ে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে।

২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ আট বিষয়ের তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে সম্পদ নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। প্রার্থীদের দেয়া সম্পদের বিবরণ কতটা সত্য সেটি নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, সম্পদের এ বিবরণ দিয়ে নির্বাচন কমিশন কী করে? নির্বাচনের উপর এর আদৌ কোন প্রভাব থাকে?

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফ-নামায় তিনি যে সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে নিজের নামে বাড়ি থাকলেও তার নামে কোন গাড়ি নেই।

তাঁর ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং স্থাবর এবং অস্থাবর – সবমিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে তার প্রতিন্দ্বন্দ্বি বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও একজন ব্যবসায়ী। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে তার।

তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

প্রার্থীরা যাতে সম্পদের বিবরণ জমা দেন সেজন্য সেসব সংগঠন বহু আগে থেকে দাবি তুলে আসছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন।

সুজনের সাথে সম্পৃক্ত অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, প্রার্থীদের দেয়া তথ্য কতটা সঠিক সেটি নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় আছে।

মি: আহমেদ বলেন, “সম্পদের বিবরণের মাধ্যমে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয় এবং এগুলো বেশ আলোচিত হয়। ইলেকশন কমিশনের কাজ হচ্ছে এ তথ্যগুলো চ্যালেঞ্জ করা। নির্বাচন কমিশন যদি এগুলো যাচাই করে দেখে তাহলে বিরাট কার্যকারিতা এসে যায়।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপস হলফ-নামায় দেখিয়েছেন, অস্থাবর এবং স্থাবর- সব মিলিয়ে তার সম্পদ ১০০ কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন সব মিলিয়ে প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেমার মুনিরা খান বলছেন, প্রার্থীদের দেয়া তথ্য সঠিক কিনা সেটি যাচাই করে দেখা কোন সময় সাপেক্ষ কাজ নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রার্থীরা সম্পদের যে বিবরণ দিচ্ছেন, তাতে তথ্য গোপনের মতো বিষয় থাকতে পারে বলে তাদের আশংকা।

যেহেতু সম্পদের বিবরণ নির্বাচন কমিশন যাচাই করেনা সেজন্য এ হলফনামা ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারছেন না।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন এসব তথ্য যাচাই করে না?
নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রার্থীরা যদি হলফ-নামায় কোন ভুল তথ্য দিয়ে থাকে তাহলে সেটির দায়-দায়িত্ব প্রার্থীর উপর বর্তায়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মি: আলমগীর বলেন, “প্রার্থীদের দেয়া হলফনামা আমরা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি যাতে জনগণ যেন এটা দেখতে পারে। ভোটাররা যাতে তাদের মূল্যায়ন করে ভোট দিতে পারেন। এটা হলো আইনগত বিষয়। “

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি মনে করে যে প্রার্থীরা যদি সম্পদের হিসেবে গরমিল করেছেন, তাহলে তারা বিষয়টিতে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সম্পদের হিসেবে যাচাই না করে নির্বাচন কমিশন তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, এসব তথ্য যাচাইয়ের পরেই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা উচিত।

তবে সম্পদ যাচাই করার কাজটি নির্বাচন করতেও চায়না। সচিব মি: আলমগীর মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এতো দায়িত্ব নিলে কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কঠিন হবে সব ক্ষমতা একটি জায়গায় কেন্দ্রীভূত হবার আশংকা রয়েছে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button