গাজীপুর

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ-৫: লাখো মানুষের দাবি একটি ওভারপাস

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বছরের পর বছর একটি মাত্র রেলক্রসিংয়ের কারণে ৪০ লাখ গাজীপুরবাসী কান্না করছেন। অনেকের মতে, এ আর এমন বেশি কি! দিনে ৮৮ বার যাতায়াত করে ট্রেন। হিসাব করে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় ৪/৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকে গেট।

মানুষের চাপে প্রতি মাসে গড়ে একজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। লাখ লাখ মানুষ বছরের পর বছর ধরে একটি ‘ওভারপাস’ নির্মাণের কথা বলে আসছেন। কিন্তু কেউ শুনছেন না সেসব কথা। নির্বাচনের সময় হলে নেতারা বলেন, গোপালগঞ্জের পরে গাজীপুরের মাটি আওয়ামী লীগের অন্যতম ঘাঁটি। তারপরও যেন কারও কানে যাচ্ছে না লাখ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি। ফলে শহরের একমাত্র প্রধান সড়কের রেলগেটটি হয়ে উঠেছে খোদ গাজীপুরের অন্যতম দুঃখ ও দুর্ভোগ হিসেবে।

এলাকাবাসী মনে করছেন, শহরে প্রবেশের একটি বিকল্প সড়ক এবং রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। শহরের প্রবেশমুখ শিববাড়ী মোড় থেকে যে সড়কটি মূল শহরের দিকে গেছে সেটিই শহরের একমাত্র পথ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রেললাইন মূল শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে। ওই সড়ক ছাড়া এপারে যারা বাস করেন তাদের আসা-যাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই। আরও যে সংযোগ সড়ক প্রয়োজন এ কথাটি পৌর চেয়ারম্যানরা যুগ যুগ ধরে উপলব্ধি করেননি। তবে নতুন গঠিত সিটি করপোরেশনের মেয়র এলাকার মানুষের স্বপ্ন পূরণে একটি ওয়াই আকৃতির ওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জানা গেছে, গাজীপুর শহরের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের প্রতিদিনকার ভয়াবহ যানজট ও দুর্ভোগ। বর্তমানে সমস্যা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে, দিন-রাত বেশির ভাগ সময় যানজটের কবলে পড়ে নগরবাসীর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এবং বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। এখানে অনেক শিল্প কলকারখানা থাকার সুবাদে এটি অধিক জনসংখ্যার এক জনপদ। এ সড়কটির রেলক্রসিংয়ে কোনো ওভারব্রিজ বা ফ্লাইওভার না থাকায় যানজটে নাকাল হতে হয় এলাকাবাসীকে। আবার রেলক্রসিংয়ের একেবারে কাছাকাছি জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনটি অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে যাওয়ার সূচনাস্থল হলো জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন। ময়মনসিংহ এবং জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলায় যেতে হয় এ স্টেশন দিয়ে। ফলে জয়দেবপুর রেল জংশনটির গুরুত্ব যথেষ্ট। শুধু ট্রেন চলাচল নয়, যখন ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে তার পুরোটা সময় রেলগেটটি বন্ধ থাকে। রেলগেটটির কারণে পুরো শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা আটকে থাকে।

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এ রেলওয়ে জংশন দিয়ে প্রতিদিন ৩৪টি আন্তনগর ট্রেন এবং ১৮টি কমিউটার, মেইল একপ্রেস ও ডেমু ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে জয়দেবপুর জংশন পর্যন্ত দুটি ডেমু ট্রেন এবং জয়দেবপুর জংশন থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত অপর একটি ডেমু ট্রেন চলাচল করে। অপরদিকে খুলনা থেকে সুন্দরবন ও চিত্রা আন্তনগর ট্রেন, রাজশাহী থেকে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন, পদ্মা ও ধূমকেতু, দিনাজপুর থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা ট্রেন চলাচল করে। লালমনিরহাট থেকে লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস এবং নীলফামারী থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী চাঁপাই মেইল ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস এ রেলক্রসিং দিয়ে সপ্তাহে চার দিন যাতায়াত করে। আইনজীবী নাজিম উদ্দিন জানান, আদালতে যেতে এবং আসতে রেলক্রসিংয়ে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়তে হয়। অবিলম্বে বিকল্প সড়ক নির্মাণসহ রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা দরকার।

সিমেন্ট ব্যবসায়ী মো. আবদুল হাকিম জানান, প্রতিদিন ছায়াবীথি থেকে শহরের শিববাড়ি আসতে তাকেও রেলক্রসিংয়ে যানজটের কবলে পড়তে হয়। জনভোগান্তি দূর করতে ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি রেল কর্তৃপক্ষেরও।

 

আরো জানতে…..

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ-৪: ভোগান্তির শেষ নেই জয়দেবপুর রেল জংশনে

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ-৩: ময়লার শহর গাজীপুর

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ২: জিএমপি’র ৪০ লাখ বাসিন্দার সেবায় ১১৫০ পুলিশ

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ১: ভয়াবহ যানজটে স্থবির টঙ্গী-গাজীপুর

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button