গাজীপুরের সুখ-দুঃখ-৩: ময়লার শহর গাজীপুর
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ময়লার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে গাজীপুর শহর। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন হলেও এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কিছুই গড়ে ওঠেনি। নেই নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন। পুরো শহরই বলতে গেলে অপরিচ্ছন্ন।
ঢাকার আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পার হলেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা শুরু। সেখান থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে কিছু দূর পর পর ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ সড়ক ধরে এগোলে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের কোনায়, বোর্ডবাজার এলাকায়, মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সামনে, আরেকটু সামনে মালেকের বাড়ি এলাকায়, চান্দনা চৌরাস্তা পেরিয়ে উল্কা সিনেমা হলের সামনে মূল সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। এসবের পাশাপাশি গোটা শহরের অনেক জায়গায় আবর্জনা চোখে পড়ে।
শহরের আবর্জনার অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ডাম্পিংয়ের জন্য ৬০টি জায়গা প্রয়োজন। গৃহস্থালির আবর্জনা রাখার জন্য প্রায় ২০০ বিঘা জমির প্রয়োজন। সে জমি সিটি করপোরেশনের নেই। আমি সরকারের কাছে জমি বরাদ্দের জন্য চিঠি দিয়েছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেয়ে যাব।’
সরেজমিন গাজীপুর জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। খোদ শহরের অনেক জায়গায় দেখা গেছে খোলা জায়গায় ময়লার ভাগাড়। এর মধ্যে কিছু আছে সাধারণ মানুষের চলাচলের পথে। বোর্ডবাজার থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সড়কের দুই পাশে নর্দমার বাইরে আলাদা নালা করা হয়েছে। এখানেও ময়লার ছড়াছড়ি। এ ছাড়া এ স্থানে খোলা নালার পানি কুচকুচে কালো। সেই পানি ময়লা-আবর্জনা আজ পলিথিনের ব্যাগে ঠাসা। এখান থেকে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ এলাকার বেশির ভাগ দোকানে ঢুকতে হলে সড়ক থেকে কাঠের বা বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয়।
এ এলাকার শাপলা হাউজিং নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর হলো এই নালা কাটা হয়েছে। নালার পাশে দাঁড়িয়েই আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আগে বেশির ভাগ সময় নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাখতাম। এখন অনেকটা সহ্য হয়ে গেছে।’ চান্দনা চৌরাস্তা থেকে হাতের ডানের সড়ক ধরে জয়দেবপুর, সিটি করপোরেশনের মূল কেন্দ্র। স্থানীয়দের ভাষায় গাজীপুর শহর। সেখানে যেতেও ময়লার পাহাড় চোখে পড়বে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। শহরে ঢুকতে সার্ডি রোড ও শিববাড়ী মোড়ে ফেলা হয় বসতবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। এ দুই জায়গা বাদে রেলক্রসিংয়ের আগ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে কিছু দূর পর পর আবর্জনা চোখে পড়ে। সার্ডি রোডের মোড়ে যেখানে বর্জ্য ফেলা হয়, এর একটু ভিতরেই পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয়।
পরিবেশ অধিদফতর ওই জায়গায় আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন বলছে, আপাতত তারা নিরুপায়। এখানেই শেষ নয়। টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কেও কিছু দূর পর পর দেখা যায় খোলা জায়গায় বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এই সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়ালসড়কের মুখে, শিমুলতলী ব্রিজ, মরকুন ও আমতলী এলাকায় মূল সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। সাধারণ মানুষ এসব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে বিষয়টি তা নয়। সিটি করপোরেশনই এসব খোলা জায়গায় আবর্জনা স্তূপ করে রাখছে।
পুরাতন টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা এলাকা থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে সপ্তাহে বা নিয়ম করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় অন্য এলাকাগুলো থেকে। ১০-১৫টি জায়গায় সেগুলো জমানো হয়। পরে কড্ডায় সড়ক ও জনপথের একটি জায়গায় সেগুলো প্রাথমিক ডাম্পিং করা হয়।
স্থানীয় ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী তমা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, মূল শহরের বেশির এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ মাড়িয়ে নাকে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয়।
জয়দেবপুর জংশন পেরিয়ে ছায়াবীথি, টাংকির পাড়, জোড়পুকুর আবাসিক এলাকার অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়।
বর্তমান মেয়রের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম স্লোগান ছিল ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’। মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে প্রতিদিনের গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণের জন্য মাত্র ৯০ জন লোকবল দিয়ে সেবা দিচ্ছি। এটা পর্যাপ্ত নয়। শিগগিরই আরও লোক নিয়োগ করা হবে।’
আরো জানতে…..
গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ২: জিএমপি’র ৪০ লাখ বাসিন্দার সেবায় ১১৫০ পুলিশ
গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ১: ভয়াবহ যানজটে স্থবির টঙ্গী-গাজীপুর
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন