গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ২: জিএমপি’র ৪০ লাখ বাসিন্দার সেবায় ১১৫০ পুলিশ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরের ৪০ লাখ বাসিন্দার সেবায় নিয়োজিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ১ হাজার ১৫০ জন পুলিশ সদস্য। ভাড়া বাড়িতে চলছে এ সিটির পুলিশের কার্যক্রম। জনবল, আসবাবপত্র, যানবাহন ও অবকাঠামো সংকট নিয়ে চলছে নবগঠিত জিএমপি।
শিল্প অধ্যুষিত সর্ববৃহৎ এ সিটি এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনে জিএমপির যাত্রা হয় ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। জিএমপির সদর দফতর ও আটটি থানা এলাকার জন্য জনবল বরাদ্দ হয় ১ হাজার ১৫২ । তবে জরুরি কাজে জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ধার করে চলতে হচ্ছে জিএমপিকে।
জিএমপি কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ গাজীপুর জেলা পুলিশ ইতিপূর্বে ১ হাজার ৮০০-এর মতো জনবল নিয়ে চলতে গিয়ে হিমশিম খেত। সেখানে ১ হাজার ১৫২ জনবল নিয়ে মেট্রোপলিটনের সবকিছু সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। মহানগর অঞ্চলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ অন্য কাজেও পর্যাপ্ত পুলিশ দরকার। বর্তমানে জেলা পুলিশ থেকে ধার করেই সবকিছু সামাল দিতে হচ্ছে। তবে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে তাদের আরও ২ হাজার জনবল প্রয়োজন বলে মনে করেন পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, জনবল, অবকাঠামো ও যানবাহন সংকটের মধ্যেও জিএমপি দায়িত্ব নেওয়ার পর গাজীপুরে যানজট সমস্যার উন্নতি হয়েছে। মহাসড়কের অবৈধ ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল পেলে জিএমপি গাজীপুর সিটির নাগরিকদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারবে। এ মহানগরকে জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস ও যানজটমুক্ত রাখতে জিএমপি কাজ করছে।
গাজীপুর মহানগরের নলজানি এলাকায় ঢাকা-জয়দেবপুর রোডের পাশে একটি ভবনে জিএমপি হেডকোয়ার্টারের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখানে সিটি ডিবি, এসবি, ডিসি ট্রাফিকসহ বিভিন্ন অফিসের কার্যক্রম চালানোর জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে।
মূলত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে ৫৭টি ওয়ার্ড। প্রশাসনিক থানা রয়েছে আটটি। যাত্রার পর থেকে জনবল সংকটে ভুগছে এ সংস্থাটি। এ সিটির নিরাপত্তাসহ জানমাল হেফাজতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে অফিস ভবন, আবাসন ও যানবাহন সংকট।
পুলিশের সেবা সম্পর্কে মহানগরের বাসন এলাকার বাসিন্দা গোলাম কবির বলেন, কয়েক দিন আগে এ এলাকায় একটি ডাকাতি হয়েছে। থানা পুলিশকে সময়মতো জানানোর পরও তাদের পাওয়া যায়নি। পরে জানা গেছে যানবাহন না থাকায় তারা আসতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, আবাসন না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবার ছাড়াই গাজীপুরে বসবাস করছেন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আবাসনব্যবস্থা না থাকায় হেডকোয়ার্টার ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলায় পুলিশ সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ মহানগরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অন্যান্য অসুবিধার পাশাপাশি আবাসন ও যানবাহন সংকটে ভুগছেন। টহল কার্যক্রম পরিচালনা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। অফিস ভবন সংকটের কারণে অপরাধ দমনের কিছু কৌশল ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, জিএমপিতে একজন কমিশনারসহ ১ হাজার ১৫২ লোকবল দেওয়া হয়েছে। নগরের ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার আটটি থানায় জিএমপির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। থানাগুলো হলো জয়দেবপুর, বাসন, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, গাছা, পুবাইল, টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম। এ আট থানার মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম চলছে ভাড়া বাড়িতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর শহর এলাকায় ৪ শতাধিক ছোট-বড় গার্মেন্ট কারখানাসহ বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শহরের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার যানবাহন চলাচল করে।
এ শহরে একটি সমরাস্ত্র কারখানা, একটি সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (টাঁকশাল), বাংলাদেশ কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, দুটি রেলওয়ে জংশন, একটি রেলওয়ে স্টেশন, দুটি সরকারি হাসপাতাল, একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ১০-১২টি বাসস্টেশন, বিভিন্ন ব্যাংকসহ নানা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ছাড়া জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় ও জাতীয় ইস্যুতে প্রায়ই অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাখ লাখ মুসল্লির আগমন ঘটে। এ ছাড়া মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, পরিবহনে নৈরাজ্যসহ সব ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় জিএমপির সদস্যরা কাজ করছেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর মহানগর পুলিশে আরও জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। তবে বর্তমান জনবল নিয়ে সব ধরনের অপরাধ দমনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ১ হাজার ১৫২ জনবল নিয়ে যাত্রা করলেও এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা বাড়েনি। জনবহুল মহানগরের জন্য আরও জনবল প্রয়োজন। এ বিষযে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’
আরো জানতে…..
গাজীপুরের সুখ-দুঃখ ১: ভয়াবহ যানজটে স্থবির টঙ্গী-গাজীপুর
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন