গাজীপুর

তুরাগপাড়ে সকালে উচ্ছেদ, বিকেলে দখল

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রায় এক ঘণ্টার ঝটিকা অভিযান। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় টঙ্গীর তুরাগপাড়ের দেড় শতাধিক অবৈধ দোকানপাট। সতর্ক করা হয় দোকানিদের। কিন্তু অভিযান শেষে কর্মকর্তারা চলে গেলে শুরু হয় ভেঙে দেওয়া দোকানিদের দৌড়ঝাঁপ। একটা-দুইটা করে আবার দোকান বসতে থাকে। বিকেলের মধ্যেই বসে যায় অর্ধেক দোকান। এই দৃশ্য গত সোমবারের। আর মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, আগের অবস্থায় তুরাগতীর।

সরকারের নির্দেশে সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে নদ-নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে সোমবার সকালে তুরাগপাড়ে টঙ্গী বাজার অংশে অভিযান চালান জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নদের জায়গায় গড়ে ওঠা দেড় শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করেন তাঁরা। কিন্তু অভিযান শেষে চলে যাওয়ার পর বিকেলের মধ্যেই পুনরায় দখল হয়ে যায় নদের পাড়। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আগের অবস্থায় তুরাগতীর, ফিরে এসেছে অবৈধ স্থাপনা।

gazipurkontho
তুরাগের তীরবর্তী এলাকায় উচ্ছেদের সময়।

তবে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, নদপাড়ের এই জায়গা ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইজারার নামে দোকানগুলোকে এখানে বসতে দেন। এ নিয়ে তিন থেকে চারবার অভিযান চালিয়ে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। নাম না প্রকাশের শর্তে টঙ্গী বাজারের একজন আসবাব ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনার পাশেই টঙ্গী পৌর ভূমি কার্যালয়। তাদের চোখের সামনেই এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে, কিন্তু তারা কিছুই বলছে না। এটা অনেকটা চোর–পুলিশ খেলার মতো অবস্থা।

মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় পুরোদমে চলছে ব্যবসা। টঙ্গী বাজার মসজিদের সামনে থেকে টঙ্গী পৌর ভূমি কার্যালয় পর্যন্ত গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, শুঁটকি, সবজি , হাঁড়িপাতিল, মাছ, মাংসসহ নানা পণ্যের দোকান। দোকানগুলো আপাতত বসেছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ ত্রিপল দিয়ে ছাউনি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউবা ভেঙে দেওয়া দোকানগুলো মেরামতের চেষ্টা করছেন। এই দোকানিরা বলছেন, তাঁরা দোকানপ্রতি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে এখানে বসেন। দোকানভেদে চাঁদার পরিমাণ ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। একজন নির্দিষ্ট লোক বা লাইনম্যান প্রতিদিন সেই টাকা তুলে নেন।

একজন শুঁটকি বিক্রেতা বলেন, ‘সরকারি খাজনার নামে প্রতিটি দোকান থেকে টাকা নেওয়া। কিন্তু সরকারি কোনো উচ্ছেদের সময় তারা আমাদের দোকান রক্ষা করে না। মাঝখান দিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।’

বেলা ১১টার দিকে জসিম উদ্দিন নামের একজনকে দোকানগুলো থেকে টাকা তুলতে দেখা যায়। এ সময় টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা তাঁর চাকরি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মো. মিলন মিয়া নামের আরেকজনকে দেখিয়ে দেন তিনি। পরে বাজারেই কথা হয় মিলনের সঙ্গে। মিলন বলেন, ‘এই পুরা বাজার (টঙ্গী বাজার) গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। এটা ফুটপাত, ভাঙা পড়তে পারে জেনেই দোকানিরা বসেন।’

যোগাযোগ করা হলে সোমবার উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেওয়া টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার এ কে এম গোলাম মোর্শেদ বলেন, উচ্ছেদ হওয়ার পরও যদি আবার দখল হয়, তবে আবারও অভিযান চালানো হবে। সরকারি জায়গায় কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না।

 

আরো জানতে…

টঙ্গীতে তুরাগের তীরবর্তী এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button