আলোচিত

পাসপোর্ট পাওয়া আরও কঠিন হচ্ছে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পাসপোর্ট করতে আবেদনের সঙ্গে এতদিন জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি জমা দিতে হতো। এ সুযোগে এনআইডি থাকলেও বয়স কম দেখিয়ে বা ভিন্ন পরিচয়ে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে পাসপোর্ট করে নিচ্ছেন অনেকে। ফলে পাসপোর্টের ব্যক্তির সঙ্গে বাস্তবের তথ্যের মিল থাকছে না। এমনকি মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরও ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পাসপোর্ট জালিয়াতি বন্ধে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, এখন থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকেই এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। এমনকি ১৫ বছরের কমবয়সীদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়ের এনআইডির কপি দিতে হবে। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনআইডির ভেরিফাইড কপি জমা নেওয়া হবে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য অপরাধী বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে নানা রকমের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। এই নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা নিশ্চিত হয়েছে, অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় দালালচক্র এসব অপকর্ম করছে। এসব তথ্য পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ৮ ডিসেম্বর নতুন অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের অভ্যন্তরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস বা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসসমূহে আবেদনকারীগণ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে জন্মনিবন্ধন প্রদর্শনপূর্বক পাসপোর্টের আবেদন করছেন। এতে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।’

সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) মো. সাহজাহান কবির স্বাক্ষরিত আদেশে আরও বলা হয়েছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এনআইডি গ্রহণ সাপেক্ষে আবেদন জমা নেওয়া হবে। ১৮ বছর পর্যন্ত আবেদনকারীে

ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন গ্রহণ সাপেক্ষে আবেদন জমা নেওয়া যাবে। ১৫ বছরের কমবয়সীদের ক্ষেত্রে মা-বাবার এনআইডির কপি জমা দিতে হবে। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এনআইডির ভেরিফাইড কপি জমা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জালিয়াতি প্রতিরোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেক নাগরিকের ১৮ বছর বয়সেও এনআইডি থাকে না। তখন চিকিৎসাসহ যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার দরকার হলে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন তারা। এ ক্ষেত্রে প্রথমে তাদের এনআইডি করতে হবে। তারপর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। এতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। আর সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, পৌরসভা থেকে সঙ্গে সঙ্গেই জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বলেন, পাসপোর্ট জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পাসপোর্ট আবেদন করার সময় বেশকিছু কড়াকড়ি নিয়ম করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জালিয়াত চক্রের বেশকিছু সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করতে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকে, সেই ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। তবে ই-পাসপোর্ট কবে থেকে দেওয়া শুরু হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই উদ্বোধন করবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হয়নি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, এজন্য আরও দুই-তিন মাস লাগবে। তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকার যেদিন ঘোষণা দেবে ওইদিনই কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। বছর দুয়েক আগে কারিগরি সহযোগিতার জন্য জার্মানির ভেরিডোজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও সেনানিবাস অফিস থেকে ই-পাসপোর্টের সুবিধা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে এ সুবিধা নেওয়া হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ৭০টি মিশনেও ই-পাসপোর্ট পর্যায়ক্রমে চালু হবে। দুই ক্যাটাগরির ই-পাসপোর্টে চার ধরনের ফি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মধ্যে থাকবে জরুরি ও অতি জরুরি এবং এর মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছর।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, কার্যক্রম উদ্বোধনের দিনই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। ৩০ লাখ ই-পাসপোর্ট বই সরবরাহ করার কথা রয়েছে। ই-পাসপোর্ট হবে ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠার। সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হবে।

 

সূত্র: দেশ রূপান্তর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button