গাজীপুর

র‌্যাবের অস্ত্র মামলার আসামি জুয়েল মন্ডলকে ‘প্রশংসা’ করে দায়মুক্তি দিল পুলিশ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি ও দুটি মোবাইল ফোনসহ মো. রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডলকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অস্ত্র আইনে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মামলাও করে। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গাছা থানাপুলিশ। এতে পুলিশ দাবি করেছে তথ্যগত ভুল, ঘটনার সত্যতা মেলেনি। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত জুয়েল মন্ডলের ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে। আর অস্ত্র ও গুলির উৎস সম্পর্কেও পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। তাহলে অস্ত্র-গুলি এলো কোত্থেকে? এমন অবধারিত প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সেই প্রতিবেদনে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বিব্রতবোধ করেন তদন্ত কর্মকর্তাও।

অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী মহল অস্ত্র মামলাটি ভিন্ন খাতে নিতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে। যে কারণে মামলাটি চার্জশিট না হয়ে পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে আদালতে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়েল মন্ডলের নামে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও দখলদারিত্বসহ নানা অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন থানায়। ফাইনাল রিপোর্টে জুয়েল মন্ডলের বিভিন্ন প্রশংসা করা হলেও রহস্যজনকভাবে তার পুরনো মামলার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাবের জব্দ তালিকা এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। আমলে নেওয়া হয়নি মামলার বাদীর বক্তব্যও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া মানে মামলাটি শেষ হয়ে যাওয়া নয়। মামলাটি এখনো সচল করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা আমাদের সময়কে বলেন, ‘অস্ত্র আইনের মামলায় সাধারণত এজাহারটাই চার্জশিট হয়ে যায়। আগে সব কাজ করে এজাহার করা হয়। এ জন্য এই মামলা তদন্ত করতেও বেশি সময় লাগে না। চার্জশিট হয়নি কেন, সেটা তাহলে তারা বলুক।’

গত ২৭ মে গাছা থানার চান্দরা গ্রামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় র‌্যাব ১-এর একটি দল। নিজ বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলিসহ জুয়েল ম-লকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অস্ত্র দুটি আমেরিকার তৈরি বলে গায়ে লেখা ছিল। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠায় র‌্যাব। র‌্যাব ১-এর জেসিও নায়েব সুবেদার কিরণ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত ৬ জুন মামলার তদন্ত শেষে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন গাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাফিজুর রহমান।

নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দেন জুয়েল মন্ডল। তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার পদ নেই বলে নিশ্চিত করেছে যুবলীগ। জুয়েল মন্ডল গাছা থানা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন এখন।

ফাইনাল রিপোর্টে এসআই হাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, আসামি জুয়েল মন্ডল পারিবারিকভাবে সম্পদশালী। তার পূর্বপুরুষ অনেক জমি-জমার মালিক। তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। এ ছাড়া এজাহারে বর্ণিত ঘটনাস্থল ও অস্ত্র উদ্ধারের স্থানের মধ্যে পার্থক্য এবং মামলার বাদীর অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি সেটাই দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ তাহলে কি র‌্যাব অস্ত্র-গুলি দিয়ে জুয়েল মন্ডলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ওই অভিযান চালিয়েছিল। অভিযানের পর র‌্যাব জানতে পারে, তার নামে আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের তথ্য র‌্যাবের কাছে রয়েছে।’

গাছা থানার স্থানীয় বাসিন্দারা জুয়েল মন্ডলের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। তবে ভয়ে কেউই নাম প্রকাশ করে মুখ খুলতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘এলাকায় যে কেউ তার সম্পর্কে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন তিনি কী কী করেন। আমি প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কথা বললে নিজেই এলাকায় থাকতে পারব না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল বলেন, ‘কোনো বাহিনী বা কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই। আমার কপালে ছিল তাই এটি হয়েছে।’ কিন্তু বিষয়টি ‘পুরনো’ হয়ে গেছে দাবি করে এটি নিয়ে কেন রিপোর্ট করছি সেটি জানতে চান তিনি।

গাজীপুর মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হারিস উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাকে বিষয়টি বাদী জানাননি। তাই নারাজি দিতে পারিনি। বাদী জানালে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

অস্ত্র মামলায় ফাইনাল রিপোর্টের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখানে পিপির উচিত ছিল বিষয়টি বাদীকে জানানো। এখন র‌্যাব আদালতে ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে পারে। এ ছাড়া র‌্যাব ও পুলিশ উভয় পক্ষ যেহেতু আইজিপির অধীনে, সেহেতু আইজিপি ও র‌্যাব মহাপরিচালক এটা খতিয়ে দেখতে পারেন। তাহলে আসল সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। এটি অবশ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। মামলাটি কিন্তু মরে যায়নি। এটি সচল করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’

 

 

আরো জানতে…

অস্ত্র ও গুলিসহ যুবলীগ নেতা জুয়েল মন্ডল আটক

 

সূত্র: আমাদের সময়

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button