গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কাউন্সিল নিয়ে আওয়ামী লীগের বাইরে বিরোধী ও সমমনা রাজনৈতিক দলে আছে ব্যাপক আগ্রহ। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের আছে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তাই গণতন্ত্রে ফিরে আসাই হবে আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলের বড় অর্জন।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ৷ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷ তাই গণতন্ত্রে ফিরে আসাই হবে আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলের বড় অর্জন।
২০ এবং ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল৷ এই কাউন্সিলে ফের আওয়ামী লীগের সভাপতি হচ্ছেন শেখ হাসিনা তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নিয়ে। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়৷ শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চতূর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
কিন্তু এই দলটি এখন গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘‘এই দলটি দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তার ভূমিকা অনেক। দলটিও মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে গর্ব করে। আর এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রেক্ষাপটে এই দলটি ছিলো পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল।”
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগ এখন বিতর্কিত ভূমিকায় চলে গেছে৷ বিশেষ করে গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা তাতে তারা যেন নির্বাচনের রীতি ভুলে গেছে। নির্বাচন করা একটি দল এভাবে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এর আগে বিশ্বে কোথাও দেখা যায়নি। তারা গণতন্ত্র থেকে সরে গেছে। তাই আমার কাছে মনে হয় আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে তাদের গণতন্ত্রে ফিরে আসা। তারা সেটা করলেই সম্মেলন সফল হবে বলে মনে করি।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলটির সংগ্রামী ঐতিহ্য আছে। মানুষের পক্ষে কথা বলার, অধিকার আদায়ে আছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। আমি আশা করি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের যে নতুন নেতৃত্ব আসবেন তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা দলটির ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। সামনে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশে পরিণত করতে তারা ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি।”
আর গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মনে করেন, আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির পাওয়ার কিছু নাই। তারা তাদের দলের কাউন্সিল করছে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতা আরো সংহত করার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করায় এখন তাদের ভূমিকাই প্রধান। আর যেভাবে তারা চলছেন তাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে তাদের কোনো আকাঙ্খা বা ইচ্ছা দেখতে পাচ্ছি না। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা বা মানুষের সমস্যা সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখি না।’
এদিকে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের ভেতরে কী হচ্ছে তাতো আমরা জানি না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সম্মেলনের পরে হয়তো বোঝা যাবে কী হলো।”
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিএনপির চার নেতাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারাও দাওয়াত পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের কূনীতিকদেরও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনের কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।