রাজনীতি

আওয়ামী লীগের নক্ষত্রের পতন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বটবৃক্ষ। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল যখন অনুষ্ঠিত হয় তখনই অনেকে সম্ভাবনা জাগান আবার অনেক নেতা আলোচিতও হন। কিন্তু তারা যখনই আওয়ামী লীগ থেকে চলে যান বা বিচ্যুত হন তখই তারা হিরো থেকে জিরোতে পরিণত হন। শুধু আজকে নয় যুগে যুগে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যেখান থেকে অনেক উজ্জল তারকা বেরিয়ে যেমন বিকল্প শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে পারেননি তেমনি নিজেরাও তাদের ত্রুটি সারাতে পারেননি। বরং ইতিহাসে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি করেছেন। বিভিন্ন সময় দেখা যায় মাওলানা ভাসানী, অলি আহাদসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা ছিলেন কিন্তু আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পর তারা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অধিবেশনে অনেক নেতার উত্থান হবে আবার অনেক নেতা আড়ালে চলে যাবেন। যা রাজনীতির চূড়ান্ত নিয়ম। কিন্তু যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থেকে অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। এখনো জীবিত আছেন তারা হয়তো আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা হতে পারতেন। কিন্তু তাদের নিজেদের বিচ্যুতির কারণে মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়েছেন।

রাজনীতি সম্ভবত এমনই একটি বিষয় যেখানে মূল ধারা থেকে ছিটকে গেলে বড় নেতা নিঃস্ব হয়ে যান। এ রকম কয়েকজন নেতাকে নিয়ে এই প্রতিবেদন;

ড. কামাল হোসেন

ড. কামাল হোসেন এক সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নীতি নির্ধারক ছিলেন। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অর্থনীতির নীতিতে পরিবর্তন এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিতে ড. কামাল হোসেন অনেক প্রভাব বিস্তার করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনিই মনোনিত হয়েছিলেন। সেই ড. কামাল হোসেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর দল ত্যাগ করে গঠন করেন গণফোরাম। ড. কামাল হোসেনের যেটুকু অস্তিত্ব আছে তা হলো মিডিয়াতে। না আছে জনগন না আছে কর্মী বাহিনী আর না আছে সংগঠন।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এক সময় আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তিনি একজন গবেষকও বটে। তিনি আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদিও মাঝখানে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবার ফিরে এসে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এখন রাজনীতির মাঠ অস্তিত্ববিহীন আবু সাইয়িদ।

মাহমুদুর রহমান মান্না

মাহমুদুর রহমান মান্না একজন জনপ্রিয় ছাত্র নেতা হওয়ার পাশাপাশি ডাকসুর ভিপি ছিলেন। বাসদ থেকে আওয়ামী লীগে আসার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের সময় হয়ে ওঠেন সংস্কারপন্থী। সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণেই তিনি আওয়ামী লীগে অপাংক্তেও হয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মাহমুদুর রহমান মান্না দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এক সময় তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নাগরিক ঐক্য নামে দল গঠন করেন। এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে শুধুমাত্র মিডিয়াতেই আছেন। তারও কোন কর্মী নেই, নাই কোন দল।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ

পচাঁত্তরের পর ছাত্রলীগের প্রথম ডাকসু ভিপি হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির স্নেহধন্য ছিলেন। রাজনীতিতে অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। অনেকেই তাকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সাধারণ সম্পাদকও ভাবতেন। কিন্তু এই সুলতান মোহাম্মদ মনসুরই ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী হন এবং সেই সময় তিনি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার প্রবক্তাদের সঙ্গে হাত মেলান।

২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচকে পরিণত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানেরশীষ প্রতীক নেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সংসদে এসেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর রাজনীতি শুরু করলেও এখন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে অনেক দূরে। এলাকার রাজনীতি ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতে তার কোন প্রভাব নেই।

এখানেই হলো আওয়ামী লীগের মহত্ব। অনেক বড় বড় প্রতিভাবান নেতা যারা নীতি এবং আদর্শের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারেননি। যত প্রতিভাই থাকুক না কেন দলের সঙ্গে না থাকলে তারা রাজনীতির মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়ে গেছেন। ভবিষ্যতে নেতাকর্মীদের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, রাজনীতির মূল ধারায় না থাকলে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে যত মেধাবী এবং সম্ভাবনাময়ী নেতাই হোক না কেন তিনি রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেন না।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button