জাতীয়

রাজাকারের তালিকা: মন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় থাকা অসম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রকাশিত তালিকা রাজাকারের তালিকা নয়। অনভিজ্ঞতার কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এরকম তালগোল পাকিয়েছে উল্লেখ করে, এ তালিকার কারণে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সবশেষ সভায় তিনি আরো জানান, বিজয় দিবসের আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই না করে, তাড়াহুড়ো করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনি এখন তাড়াহুড়ো করে এটা করতে যাইয়েন না। কারণ, এই তালিকার মধ্যে কি আছে না আছে দেখে নিতে হবে। আমি বলেছিলাম, তালিকায় অনেক ঝামেলা মিলিটারি ডিক্টেটররা করে রেখে গেছে।’

মহান বিজয় দিবসের একদিন আগে প্রথমবারের মত মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রকাশের সময় এ তালিকা যাচাই বাছাই শেষে প্রণয়ন করা হয়েছে দাবি করলেও, বস্তুত এ তালিকা ভুলে ভরা। রাজাকারের তালিকায় নাম আসতে দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় মুক্তিযোদ্ধারা ও তাদের পরিবার।

দলের কাউন্সিলকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে এ তালিকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসা অসম্ভব। খুবই খারাপ কাজ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে হঠাৎ একটা তালিকা বের করা হল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধে যারা গিয়েছিলো তাদের সকলের একটা তালিকা করে তাদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তান সরকার সেই সময় অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। যেটা পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই তালিকা ধরে ধরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বা শাস্তি দিয়েছে। আবার এরশাদের সময়ও সেটা ব্যবহার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে কোলাবরেটর হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা তাদেরটা নিতে গিয়ে সেখানে সব মিলিয়ে একটা গোলমাল করে ফেলেছে। সেখানে অনেকের নাম চলে এসেছে যারা মুক্তিযোদ্ধা।’

এ তালিকাকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে এটা ওয়েবসাইটে চলে গেলো সেটা রহস্য বটে। আসলে রাজাকারদের যে তালিকা তার কিন্তু আলাদা গেজেট করা আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার খেতাব দেয়া হবে না, হতে পারে না। এটা অসম্ভব। অন্তত আমার সময়ে না। কোনোমতেই এটা রাজাকারের তালিকা না।’

তিনি বলেন, ‘এটা চলে আসাতে খুব স্বাভাবিকভাবে একটা মানুষের কষ্ট লাগবে। যে পরিবারের মানুষ শহীদ হলো, যারা মুক্তিযুদ্ধ করলো তাদের যদি রাজাকার বলা হয় তাহলে এর থেকে আর বেশি দুঃখের কিছু থাকে না। যারা এই দুঃখ পেয়েছেন তাদের আমি বলবো, তারা যেন শান্ত হন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সরকারপ্রধান হিসেবে আমারও আরেকটু শক্ত হয়ে বোধহয় বলা উচিৎ ছিলো। আমিও বলেছিলাম, এটা দিয়েন না। কিন্তু উনি যে কেনো দিয়ে দিলেন জানি না। এটা দেয়ার কথা ছিলো না।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়ই দেশ চলবে। যারা এ তালিকা প্রকাশের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দেয়া হবে।’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button