জাতীয়

‘তালিকার ভুল জানতে কবর থেকে তুলতে হতো’ : আ ক ম মোজাম্মেল

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ব্যাপক বিতর্কের মুখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজাকারের তালিকার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘‘এই তালিকা প্রকাশ শাপে বর হয়েছে।’’

মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন যারা রাজাকার ছিলেন না তারা তা সংশোধনের সুযোগ পাবেন। ১০০ বছর পর প্রকাশ হলে সেই সুযোগ তারা পেতেন না।”

১৫ ডিসেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুাযায়ী ‘রাজাকরের তালিকা’ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১০ হাজার ৭৮৯ জনের এই তালিকায় সরকারের গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের নামও রয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও এই তালিকা প্রকাশের পক্ষে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন,‘‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া তালিকা প্রকাশ করেছি। এর দাড়ি, কমা, সেমিকোলন কিছুই পরিবর্তন করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের করা এই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিলো। এই তালিকা সঠিক কিনা তা জানতে হলে যারা এটা করে গেছেন তাদেরকে আমাকে কবর থেকে তুলতে হতো।”

যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকাটি প্রকাশ ঠিক ছিল বলে মনে করেন মন্ত্রী। তার মতে এটি প্রকাশ করা ঐতিহাসিক কারণে জরুরি ছিলো। তিনি বলেন, ‘‘এই তালিকা তো একদিন না একদিন প্রকাশ হতো। আরো ৩০ বছর পর যদি প্রকাশ হতো, ১০০ বছর পর প্রকাশ হলে তা যারা এখন বলছেন তারা সংশোধনের সুযোগ পেতেন না। এখন তো আমরা সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছি। তারা বলতে পারছেন, আমরা রাজাকার ছিলাম না। এই তালিকা প্রকাশ তাই শাপে বর হয়েছে। তারা এখন সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন।”

তালিকাটি প্রকাশের পর নিজের মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম এসেছে বলে জানান বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার বাবা এডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং-১১২ পৃষ্ঠা-৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার।”

তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘আমার ঠাকুরদা এডভোকেট সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

প্রকাশিত ওই তালিকায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ সংগঠকের নাম রয়েছে। এসেছে বগুড়ার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যসহ একডজনের বেশী শীর্ষ নেতাদের নামও৷.

এই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাজাকারের তালিকায় রাখার মাধ্যমে তাদের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা খ্যাতিমান ব্যক্তি তাদের আমরা চিনি। কিন্তু যাদের চিনি না তাদেরটা কিভাবে যাচাই করব? আমি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমিতো আগেই বলেছি এই তালিকা আমরা করিনি৷ আমাদের যাচাই বাছাইয়ের প্রশ্ন কেন?”

তালিকায় নিজের নাম থাকলে তিনি যতটা দুঃখ ও কষ্ট পেতেন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও যাদের নাম রাজাকারের তালিকায় উঠেছে তারাও ততোটাই দুঃখ পেয়েছেন বলে মনে করেন মন্ত্রী। তারপরও এর দায় নিতে নারাজ তিনি।

যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে অনেকের নামের পাশে লেখা আছে অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তাহলে তাদের নাম প্রকাশের যুক্তি কী? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এর চেয়ে আর কী ভালো লেখা থাকবে বলেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটাতো ভালো। তারা বলতে পারবেন আমরা নির্দোষ।”

মন্ত্রী জানান, এটি প্রথম তালিকা। ধাপে ধাপে আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হলেও তারা তালিকা পাঠাননি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন,‘‘জাতি যেখানে রাজাকারদের তালিকা চায় সেখানে জেলা প্রশাসকদের এই অবস্থা!”

এদিকে রাজাকারের তালিকার ভুল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ আবেদন করলে যাচাই করে সেই নাম বাদ দেয়া হবে। এ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা আপত্তি করবেন তথ্য প্রমাণ দেখে তাদেরটা সংশোধন করা হবে। এটা আমরা নিজেরাও করব, কিন্তু সময় লাগবে। তবে ব্যক্তি নিজে আবেদন করলে তাড়াতাড়ি হবে।”

কোনো বিচারের জন্য এই তালিকা নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ইতিহাসের প্রয়োজনে এই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। আর যারা হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে তাদের বিচারতো চলছেই। আমরা জাতিকে ইতিহাসের ঘটনা অবহিত করছি।”

রাজাকারদের তালিকায় যারা আছেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হবে না বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যে অপরাধ করেছে সে তো দলীয় পরিচয়ে করেনি। আর তখনতো অনেক দল সৃষ্টি হয়নি। তখনতো বিএনপি ছিলো না, জাতীয় পার্টি ছিলো না।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button