আলোচিতরাজনীতি

ভেঙেই যাচ্ছে বিএনপি?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব এবং একদফা আন্দোলন এই চার ইস্যুতে ভাঙনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপি ইতিামধ্যেই বিভক্তির পথে হাঁটছে। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে দলের মধ্যে দুই সমান্তরাল গতিতে চলছে। তাই বিএনপির ভাঙন এখন আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মূলত পাঁচটি কারণে বিএনপির মধ্যে বিরোধ প্রবল আকার ধারণ করেছে।

বিএনপির নেতা কর্মীর বড় একটি অংশ মনে করছে আন্দোলনই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিরে একমাত্র পথ। সরকারের বিরুদ্ধে একদফা আন্দোলন না করলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অসম্ভব ব্যাপার। এই মতো মূল প্রবক্তা হলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি মনে করেন আইন আদালতের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অসম্ভব এবং অবাস্তব। আন্দোলন ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো পথ নেই।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মত, আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে গেলে দলের যে ক্ষতি হবে সেই ক্ষতিতে দল অস্থিতের সংকটে পড়বে। তা ছাড়া আন্দোলন করার মতো বাস্তব পরিস্থিতিও দেশে এখন নেই। আর এ নিয়ে দুই নেতার বিরোধ এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, দুই নেতার এখন মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে আছে।

দ্বিতীয় বিষয়টি বিএনপির মধ্যে মতো পার্থক্য তা হলো তারেক জিয়ার নেতৃত্ব। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন সব সময় তারেক বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি মনে করেন লন্ডন থেকে বসে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা না বুঝে যে নির্দেশনাগুলো দিচ্ছেন তারেক জিয়া তাতে দলের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি তা আত্মঘাতীও হচ্ছে দলের জন্য। তাছাড়া তারেক জিয়ার সকলের মতামত নিয়েও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।

অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম মনে করেন, তারেক জিয়াই খালেদা জিয়ার পর বিএনপিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আর তিনি যেহেতু নেতা তাই তার দেওয়া নির্দেশনা ভুল হোক বা সঠিক হোক সেটি বিএনপির পালন করা উচিত এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি বিএনপিকে ঐক্যমতে রাখবে। তারেক জিয়া বিএনপির ঐক্যের প্রতিক বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

তৃতীয় যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে মত বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে সেটি হলো বিএনপির ছয় জন এমপির পদত্যাগ প্রশ্ন। ড. খন্দকার মোশরফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতা এবং তৃণমূলের প্রায় ৮০ ভাগ নেতা কর্মী মনে করে, বিএনপির যে ছয় জন সংসদ সদস্য সংসদে গিয়েছেন তাদের অবশ্যই সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। সংসদে তাদের উপস্থিতি অর্থহীন। সংসদে থাকার মাধ্যমে তারা এই সরকারকে বৈধতা দিচ্ছে।

অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতালম্বীদের ভাবনা হলো, সংসদের ভেতরে এবং বাইরে যে আন্দোলন, ক্ষুদ্র হলেও সংসদে গিয়ে যেহেতু তারা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা বিএনপির জন্য ইতিবাচক। এটা ভবিষতের আন্দোলন ভীত তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষাবলম্বীরা এটাও মনে করেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বাইরে থেকে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব না।

চতুর্থ যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মধ্যে মত বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে তা হলো বিএনপিতে দ্রুত কাউন্সিল অধিবেশন করা। কাউন্সিল অধিবেশন করে নতুন নেতৃত্ব তৈরী করা। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা মনে করছেন যে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে এবং যারা এই সময়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করেছিলেন তারা যেহেতু সেই কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সফল হননি। তাই তাদের সরে যাওয়া উচিত। অবিলম্বে একটি কাউন্সিল করে বিএনপির শূন্য পদগুলো পূরণ করে নতুন নেতৃত্ব আনা উচিত। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে এবং তারেক জিয়া দেশের বাইরে। তাই এই অবস্থায় সম্মেলন করলে বিএনপিতে আরো বিভক্তি দানা বাধবে। সম্মেলন হবে বিএনপির জন্য ক্ষতিকারক।

সর্বশেষ যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ প্রবল আকার ধারণ করেছে তা হলো ২০ দলীয় জোট বনাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির আদর্শিক জোট নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধিকাংশ নেতা বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যেগুলো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনরা মনে করেন যে, বিএনপির মূল শক্তি ছিল ২০ দলীয় জোট এবং ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় এবং সচল করার মধ্য দিয়েই বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। এজন্যই ২০ দলকে উপেক্ষা করার যে নীতি তা থেকে বিএনপির সরে আসা উচিত। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোশাররফদের এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য সব মহলের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরী করা দরকার। মির্জা ফখরুল মনে করেন যে, ২০ দলীয় জোটে থাকার ফলে আন্তর্জাতিক মহলের যে সমর্থন তা থেকে বিএনপি বঞ্চিত হয়। কারণ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধাটা সাধারণ মানুষ যেমন পছন্দ করে না। তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও পছন্দ করে না। বরং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য ঐক্য বিএনপির কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক।

কিন্তু এই দুইজনের বিরোধের ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও যেমন কার্যকর নয় তেমনি ২০ দলও মৃতপ্রায়।

সাম্প্রতিক সময় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকোচ হয়ে যাওয়ার পর এই বিরোধগুলো এখন আবার প্রকাশ্য দানা বেধে উঠেছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের পর বিএনপির করণীয় কি এনিয়ে এখনো পর্যন্ত বিএনপি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মূলত শীর্ষ পর্যায়ের বিভক্তির জন্য। আর এই বিভক্তি এখন প্রকাশ্যে আসার অপেক্ষায় রয়েছে এমনটাই আশংকা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংকটে পড়া দিকভ্রান্ত বিএনপি এখন আরেকটা ভাঙ্গনের মুখে।

 

 

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button