গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে সভাপতির পদে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এই একটি বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেন, সভাপতি পদে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে অনাগ্রহী। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের বলছেন, অনেক হয়েছে, তিনি এবার দায়িত্ব ছাড়তে চান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তিনটি কাউন্সিলেই তিনি সভাপতি পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নেতা কর্মীদের আবেগের কাছে তিনি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। নেতা কর্মীরা তাকে সভাপতির দায়িত্ব পালনে বাধ্য করে। এবারো তেমনটি ঘটবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের চিত্র আলাদা হবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো আভাষ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন এবারই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন না। এবার কাউন্সিলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়াও সুনিদিষ্ট ঘোষনা দেবেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয় তিন বছর পর পর। কাজেই এবার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার তিন বছর মেয়াদ শেষ করে তিনি আর সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন না এরকম একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সভাপতি পদে শেষ পর্যন্ত হয়তো দলের নেতা কর্মীদের অনুরোধে “শেষ বারের মতো তিনি সভাপতি পদে থাকবেন”। তবে এ ক্ষেত্রে তার সুনিদিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে;
১. এবারই শেষ। পরবর্তী কাউন্সিলে তাকে আর সভাপতি বানানোর জন্য চাপ বা আবেগ দেখানো যাবে না। এই সময়ের মধ্যে একজন নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেওয়ার জন্য সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
২. দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং তৃণমূলের নেতৃত্বে যারা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন তাদেরকে শপথ নিতে হবে তারা কেউ দূর্নীতি করবেন না। এছাড়া দূর্নীতি, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াবেন না। এর পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না।
৩. রাজনীতির মূল যে চিন্তা রাজনীতি হচ্ছে মানুষকে দেবার জন্য, কিছু পাবার জন্য নয়। কাজেই যারা রাজনীতিতে থাকবেন তাদেরকে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে দেশ এবং জনগণের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
৪. দলের মধ্যে কোন্দল-বিভক্তি এবং নিজের দল ভারি করার জন্য গ্রুপিং করা যাবেনা এবং এটাকে কেউ প্রশ্রয় দিবেন না।
৫. দলে জামাত-বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ৫ টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চাইবেন কাউন্সিলে আগত নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে। তাঁরা যদি এই ব্যাপারে অঙ্গীকার করে যে তাঁরা এই শর্তগুলো পূরণ করবে, তাহলে শেষবারের মতো তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে, কাজে এই মুজিববর্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকছেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু এরপর তাকে সভাপতি পদে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি এরকমই একটা দিক নির্দেশনা দিবেন। নতুন নেতৃত্ব খুঁজে বের করার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছে, সভাপতি পদ ছাড়লেও তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়বেন না। বরং তিনি আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করবেন এবং অবসরে যাবেন।
উল্লেখ্য যে, এর আগেও তিনি একাধিকবার বলেছিলেন যে, তিনি সভাপতি পদ ছাড়তে চান। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বলছে, এবার তিনি এ ব্যাপারে সিরিয়াস এবং এই কাউন্সিলই হয়তো আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেষ মেয়াদে দায়িত্ব নিবেন শেখ হাসিনা।