রেলের নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তুষ্ট গাজীপুরের যাত্রীরা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রেল সেবা সপ্তাহ শুরু হলেও রেলওয়ের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন গাজীপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। গাজীপুর জেলা ও মহানগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-রাজশাহী কিংবা এই রুটের খুলনার সঙ্গে চলাচলকারী কোন ট্রেনের যাত্রীগণই বেপরোয়া অপরাধীদের কারণে নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারছেন না। গামছা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া।
প্রায়ই দুবৃর্ত্তদের হাতে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। চলতি বছরে ছিনতাইকারী চক্রের হাতে একজন প্রবাসীসহ কমপক্ষে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্নস্থানে। একদিনেই নগরের ধীরাশ্রম স্টেশন এলাকা থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। টঙ্গী, ধীরাশ্রম, জয়দেবপুর, ভুরুলিয়াসহ বিভিন্নস্থান থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার হয়। যদিও এর কোন সঠিক হিসেব দিতে পারেননি স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর জেলা ও নগর প্রাণকেন্দ্রের রেলওয়ে স্টেশন জয়দেবপুর জংশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অপেক্ষমান কয়েকজন যাত্রী জানান, সেবা সপ্তাহ শুরু হলেও কয়েকটি ব্যানার টানানো ও কিছুটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ছাড়া তেমন কোন পরিবর্তন তাদের চোখে পড়েনি। বিপর্যয়ে থাকা সিডিউলও স্বাভাবিক হয়নি।
শান্তাহারগামী এক নারী যাত্রী জানান, এর আগের ভ্রমণের সময় তার ব্যাগ চুরি হয়েছে। নানা ধরনের উদ্যেগ, উৎকণ্ঠা নিয়েই তাদের ট্রেনে ভ্রমণ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, ট্রেনে ওঠেও আমরা নিশ্চিন্তে যেতে পারি না এই কারণে যে, চিন্তায় থাকি কখন যে ব্যাগ ছিনতাই হবে, মোবাইল নিয়ে যাবে, কখন যে চকলেট খাইয়ে অজ্ঞান করে দেবে, এ ধরনের বিষয় নিয়ে আমরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। যদি এই আতঙ্কটা কমাতে পারে আর সময় মতো ট্রেন আসা-যাওয়া করে তাহলে আমাদের সুবিধা হয়।
ময়মনসিংহগামী একজন যাত্রী বলেন, আমরা যখন বাড়িতে যাই তখন ট্রেন সময় মতো আসে না, লেট করে। টোকাইরা ঢিল মারে, ব্যাগ নিয়ে যায়। এসব অত্যাচার সহ্য করে তো আরামে চলাচল করা সম্ভব নয়। সেবা সপ্তাহ নাম না দিয়ে সেবা বাড়ানো দরকার।
ঢাকা যাওয়ার ট্রেনের উদ্দেশ্যে দাড়িয়ে থাকা গাজীপুরের সরকারদলীয় একজন নারী নেত্রী জানান, আমরা নারীরা যারা ট্রেনে ঢাকায় যাওয়া আসা করি তাদের অনেক সমস্যা হয়। দেখা যায়, কখনো কখনো মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হয়। কেউ ওড়না ধরে টানছে, ব্যাগ ধরে টানছে, মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অনেক সমস্যা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশ রেলওয়েকে বলবো মেয়েদের জন্যে, মহিলা যাত্রীদের জন্যে আলাদা বগির ব্যবস্থা করা হোক।
অপর একজন যাত্রী জানান, আমরা বিভিন্ন সময় দেখছি টঙ্গী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ছেলে-পেলে বা টোকাইরা ঢিল ছুড়ছে। এছাড়াও নানা অঘটনের শিকার হতে হয় আমাদের রেলওয়ের সেবা সপ্তাহ শুরু হলেও সেগুলোর ব্যাপারে বা নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন আমি দেখিনি। ট্রেনে খুন, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাতো আছেই সাথে রয়েছে নারীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাও। সংঘবদ্ধচক্র নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণে চেইন ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র লুট করে আবার যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে বা ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করছে। টঙ্গীর দিকে প্রায় ট্রেনে ঢিল ছোড়ায় নানা অঘটনও ঘটছে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এই রেলপথ।
তাদের দাবি, গাজীপুর অংশে রেলওয়ের নিরাপত্তা দ্রুত জোরদার করা ও সেবার মান বাড়ানো হউক।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান জানান, সকল ধরনের সেবা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ট্রেনে ঢিল ছোড়া, যাত্রী ছিনতাই, হয়রানী, শৃঙ্খলার সাথে টিকিট কাটা, নিরাপদে ট্রেনে ওঠানামাসহ অন্যান্য সেবা বাড়ানোর এবং যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব করার বিষয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।