আলোচিত

যখন পেঁয়াজ নিষিদ্ধ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পেঁয়াজ নিয়ে বর্তমানে হাহাকার চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় এই সবজিটির চড়া মূল্যের কারণে অনেকেই এটি ছাড়াই তরকারি রান্না করার কথা চিন্তা ভাবনা করছেন। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল, যখন পেঁয়াজ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি এটি খাওয়ার অপরাধে শহর থেকে অনেককে বেরও করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া এই উপমহাদেশে বর্তমানে পেঁয়াজের যে জনপ্রিয়তা তার পিছনে মূলত কাদের অবদান ছিল? এসব কিছুই জানা যায় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিন্ট এ প্রকাশিত এক ফিচার থেকে।

আমাদের রান্না-বান্নায় পেঁয়াজের আগমন কীভাবে ঘটলো তা নিয়ে খুব কম মানুষই জানেন। মূলত রান্নার কাজে প্রয়োজনীয় এই সবজিটি জনপ্রিয় করেছিল মুঘল শাসকেরা।

ভারতীয় খাদ্য ইতিহাসবিদ পৃথা সেন জানান, যে পেঁয়াজ নিয়ে বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশ জুড়ে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে তা একসময় ব্রাত্য বলে গণ্য ছিল। মানুষজন পেঁয়াজ খাওয়া এড়িয়ে চলতো।

হাজার হাজার বছর আগে এই অঞ্চলের মানুষ পেঁয়াজের সরবরাহ নিয়ে মাথাই ঘামাতো না। কারণ সেসময় এই পণ্যটির কোন চাহিদা ছিল না। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে পেঁয়াজ খাওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো।

পৃথা সেন উল্লেখ করেন, মুঘলরা আসার আগে ভারতীয় রন্ধন প্রণালী আদা নির্ভর ছিল। পেঁয়াজ এবং রসুন কার্যত অব্যবহৃত ছিল। যদিও ২ হাজার বছর আগে আয়ুর্বেদের জনক হিসেবে পরিচিত চরক তার চরক সংহিতা বইয়ে পেঁয়াজের উপকারিতার কথা তুলে ধরেছিলেন। অস্থি সন্ধির ব্যথা সারাতে এবং খাবার হজমে পেঁয়াজের ভূমিকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

চরক সংহিতার ৪শত বছর পরে অন্যান্য আয়ুর্বেদিক বইয়ে পেঁয়াজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই খাদ্য দ্রব্য শরীরে অবসাদ এবং যৌন কামনা সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করে এটিকে ক্ষতিকর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং সপ্তম শতাব্দীতে ভারত ভ্রমণ করেন। সেসময় তিনি দেখতে পান, পেঁয়াজ খাওয়ার অপরাধে বেশ কয়েকজনকে শহরের বাইরে বের করে দেয়া হচ্ছে।

তবে মুঘলরা আসার পর অর্থাৎ ১৫২৬ থেকে ১৫৫৬ সালের মধ্যেই পেঁয়াজের কদর বাড়তে থাকে। সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেঁয়াজকে সমাদরে গ্রহণ করা হয়। তবে ব্রাক্ষ্মণ এবং জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ এখনো পেঁয়াজ এড়িয়ে চলে।

বর্তমানে পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা ভাবাই যায় না। সবজিজাতীয় এই পণ্যটি ছাড়া রান্না সুস্বাদুও হয় না। তবে কেবল রান্নার কাজেই নয় বরং সালাদ এবং নাস্তা জাতীয় খাবার যেমন পুরি, সিঙ্গারা, সমুচার সঙ্গেও অনেকে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে ভালোবাসে। এছাড়া গরীব মানুষ পান্তা ভাতের সঙ্গে তরকারির বিকল্প হিসেবে কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে থাকে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button