গাজীপুর

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ‘সড়ক সম্প্রসারণে’ থামতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকারি প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা, ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুস্পষ্ট আইন থাকলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এসবের ধার ধারছিল না। হুমকি-ধামকি, মামলা দিয়ে হয়রানি, পেশীশক্তি, বুলড্রোজার – এসব ব্যবহার করে সড়ক সম্প্রসারণের নামে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড খোবলা করে দেওয়া হয়েছে। গবীর-দুখি মানুষের আর্তনাদ, স্থানীয় মন্ত্রী-সাংসদদের পরামর্শ- কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। ধ্বংসযজ্ঞের নেশা পেয়ে বসেছিল।

কিন্তু এবার থামতেই হচ্ছে গাসিককে। ক্ষতিগ্রস্থদের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গাসিককে সুস্পষ্ট ও কড়া নির্দেশ দিয়ে আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়িতে হরিণাচালা- চমকনগর সড়ক সম্প্রসারণের নামে বসত-ভিটা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে একাকার করায় স্থাণীয় ক্ষতিগ্রস্থ রেহেনা পারভিনসহ ৯ জন ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট ( নং-১১৬৭৫-২০১৯ ইং) আবেদন করেন।

বিচারপতি এ.আর.এম. নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে.এম. কামাল কাদিরের যৌথ বেঞ্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি হরিণাচালা, চমকনগর তফসিলভুক্ত সম্পত্তির উপর সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আদেশ প্রদান করেন। সেই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো বসত-ভিটা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙতে – এমন কী কাউকে কোনো প্রকার বিরক্ত করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন গত ১৯ নভেম্বর ।

উচ্চ আদালতের এ আদেশে এলাকাবাসী যারপরনাই খুশি। ঘরে ঘরে আনন্দাশ্রু। ভুক্তভোগীরা সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা নিজেদের প্রয়োজন, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে পৈত্তিক জমি দিয়ে প্রয়োজনমত সড়ক নির্মাণ করে বসবাস করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ,মসজিদ নির্মাণ করেছেন। কেউ অন্যত্র থেকে এসে সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে দুই-তিন শতাংশ জমি কিনে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন।

হঠাৎ করেই যেন মগ দেশের অত্যাচারীদের কবলে পড়লেন তাঁরা। বলা-কওয়া নেই, নোটিশ নেই। বসতবাড়ি, দোকান-পাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সব স্থানে বুলডোজার-সন্ত্রাস।

এদিকে আদালতের এই আদেশ অনুপ্রানিত করেছে আশপাশের এলাকাবাসীদের। তারাও আদালতের শরণাপন্নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশপাশের কয়েকটি মহল্লাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, খুব শিগগিরই এসব এলাকা থেকেই ৫-৬ টি রিট করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি এলাকাতেই। লোকজনের প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস বলছে, সিটি করপোরেশেনের সড়ক প্রশস্থের অভিনব জবরদস্তি-স্টাইলের নিশ্চিত অপমৃত্যু ঘটছে।

রিট সম্পর্কে অবগত নয় গাসিক !

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পুরো টিম (সব কাউন্সিলর ও ব্যক্তিগত পছন্দের কয়েকজন ) নিয়ে চিন সফরে আছেন। ভারত থেকে ফেরার দুই দিনের মাথায় এই চিন সফর। সঙ্গতঃ কারণেই এ ব্যাপারে উনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সাম্রাজ্যে কোন প্যানেল মেয়র নেই। অগত্যা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি রিটের ব্যাপারে অবগত নন বলে দাবি করে বলেন ‘ আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম’। তিনি পাল্টা জানতে চান ‘ আদালত কী নির্দেশনা দিয়েছে’।

মেয়র রাষ্ট্রীয় সফরে !

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেয়র রাষ্ট্রীয় সফরে চিনে আছেন। মেয়রের অনুসারীরাও একই দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দখল করে ফেলেছে। কিন্তু কাউন্সিলর ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসাবে আছেন ঘনিষ্টসঙ্গী ইটাহাটা এলাকার আশরাফুল আলম রানা, সালনা এলাকার মাজহারুল ইসলাম ( স্থানীয়ভাবে দাঁতাল মাজহার হিসাবে পরিচিত) , বাড়িয়া এলাকার রাসেলসহ কয়েকজন। এরা কোন ক্যাটাগরিতে ‘রাষ্ট্রীয় সফরে’- এ প্রশ্ন করা হলে মোস্তাফিজুর রহমান কোন জবাব দেননি।

 

সূত্র: কড়া নজর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button