আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে আটক ৫৯ ‘বাংলাদেশি’র ভবিষ্যত অনিশ্চিত

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কয়েকদিন আগে তাদের ধরে ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে হাওড়া জেলার একটি থানার তত্বাবধানে আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন নারী ও শিশু সহ ওই ৫৯ জন।

দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কয়েকদিন আগে নারী ও শিশুসহ ৫৯ জনকে ধরে ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। তারপর থেকে হাওড়া জেলার একটি থানার আওতায় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন তারা।

শনিবার হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানোর পরে তাদের আপাতত সে জেলার নিশ্চিন্দা থানার অধীনে একটি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়েছে পুলিশ পাহারায়।

সেখানে গিয়ে সোমবার কথিত সে বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করেন মানবাধিকার কর্মী সোনালী দাস ঘোষ। পুলিশ তাকে ঢুকতে দেয়নি।

তিনি বলেন, “থানার বাইরে এসে জানতে পারি যে কাছেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওদের রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে বলতে তিনি তালা খুলে দেন। কিন্তু আমরা ওপরে ওঠার সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই থানা থেকে অফিসার এসে আমাদের আটকিয়ে দেন, নিরাপত্তা কর্মীকে বকাবকি করতে থাকেন যে তিনি কেন আমাদের ঢুকতে দিয়েছেন।”

পরে স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান অর্থাৎ বিডিওর সঙ্গে দেখা করে ঢোকার অনুমতি চাইলে তিনি জানান যে তার এই অনুমতি দেওয়ার কোনও অধিকার নেই।

আটক থাকা ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ তাদের কোনও আদালতে হাজির করা হয়নি।

ব্যাঙ্গালোরের পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও বলেন, “ওদের আমরা হেফাজতে নেইনি, জেল হাজতেও পাঠাইনি, কারণ তারা অপরাধী নয়। তাদের বিদেশী নাগরিক রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে হাজির করা হয়েছিল। তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তাদের যেন নিজেদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয় পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে।”

অন্যদিকে বাংলাদেশি বলে এদের ধরে কলকাতায় আনা হলেও এখানকার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।

মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ
এসব ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপন না করে দীর্ঘদিন এভাবে আটকে রাখার কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। বিষয়টি নিয়ে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগও দায়ের করেছে সংগঠনগুলো।

মানবাধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একমাস ধরে আটক রাখা হলেও কেন তাদের আদালতের সামনে হাজির করানো হয়নি?

সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে মাসুম নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা।

মাসুমের প্রধান কিরিটী রায় বলেন, “একদিক দিয়ে কর্ণাটকের বিজেপি সরকারকে আমরা ধন্যবাদই দেব, কারণ এই মানুষগুলোকে তারা অপরাধী হিসাবে গণ্য করে বিদেশী আইনের ১৪ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করেনি। সেটা তারা আইন মোতাবেকই করেছে। কিন্তু যেটা বেআইনি করেছে তা হল এতদিন ধরে তাদের কোনও আদালতে পেশ করা হয়নি। তাদের ডিপোর্ট করার কোনও অনুমতি কি পুলিশ আদালত থেকে নিয়েছে? তা তো নেয়নি!”

যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কাউকে আটক করার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করানোর নিয়ম আছে। কিন্তু ২০০৯ সালে জারী করা একটি বিধি অনুযায়ী যে কোনও রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে কাউকে আটক করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের না করে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন, কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের প্রোগ্রাম হেড মধুরিমা ধানুকা বলেন ২০০৯ সালের ওই বিধির বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

তার কথায়, “চলতি আইন অনুযায়ী ব্যাঙ্গালোর পুলিশ হয়তো আইনের পরিধিতে থেকেই কাজ করেছে, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জারি করা ২০০৯ সালের ওই নিয়মটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। ওই নিয়মের ফলে পুলিশ যাকে খুশি আটক করছে বিদেশী বলে। আমরা বেশ কয়েক বছর আগেই এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছি কলকাতা হাইকোর্টে

এদিকে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সূত্র বলছে ৫৯ জনকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আর কর্ণাটক রাজ্য সরকারের মধ্যে যেসব পত্রালাপ হয়েছে, সোমবার তাদের কাছে তা পাঠানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসকে জানানো হয়েছে যে রাজ্য পুলিশের সীমান্ত গোয়েন্দা বিভাগ দূতাবাসকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য দেবে। তারপরেই তারা ওই ৫৯ জনের সঙ্গে দেখা করার জন্য কনস্যুলার অ্যাক্সেস চাইবেন। তখনই প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে দূতাবাস নিশ্চিত করবে সত্যিই তারা বাংলাদেশি কিনা।

তারপরে তাদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চালু হবে।

কিন্তু তা কবে হবে তা কেউই বলতে পারেন না। ।”

 

সূত্র: বিবিসি

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button