কালিয়াকৈরে ইট ভাটায় চলছে অমানবিক ‘শিশুশ্রম’!
গাজীপুর কণ্ঠ : সূর্যের আলো পুরোপুরি উঠার আগেই ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী জোবায়ের, ঈমন, রোয়ানা ও শাকিবসহ আরও অনেক শিশু শ্রমিক ইট টানার কাজ শুরু করে দিন শেষে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার ইট বহন করে প্রতিদিনই। বিনিময়ে পায় ১০০ টাকা।
টাকা দিয়ে কি করবে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে ঈমন বলে টাকা দিয়া পেপসি কিনে খাব।
ঈমন ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। কিন্তু অবুঝ এ শিশুটি পারিবারিক অভাব-অনটনের শিকার হয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছে।
জোবায়ের কেবলই শুরু করেছিল স্কুলে যাওয়া কিন্তু বেশি দিন নয় অজ্ঞাত কারণে বাবার সাথে সেও ইট ভাটার শ্রমিক।
শুধু ঈমন আর জোবায়ের নয় এমন আরও অনের শিশুরা কাজ করছে কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নে আষাড়িয়া বাড়ী এলাকায় অবস্থিত বড়ইবাড়ী ন্যাশনাল ব্রিকস (বিএনবি) নামের একটি ইট ভাটায়।
২০১৮ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন’ ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা। ওই আইনে বলা হয়েছে কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে।
কিন্তু ইট ভাটার মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ কতটা পালন করেছে তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বছরের কম বয়সী এমন অনেক শিশুরা কাজ করছে দিব্বি। রোজ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ইট তৈরি ও ইট টানার মত কঠিন কাজ করানো হয় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে। যে হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা তার পরিবর্তে অল্প বয়সী জোবায়ের, ঈমন, শাকিবের মতো শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইট তৈরির মতো কঠিন কাজ। শুধু ছেলে শ্রমিক নয় রয়েছে কিছু মেয়ে শ্রমিকও যাদের বয়স ১২ এর নিচে।
জানা যায় ইট পরিবহণের মতো এমন ভারী কাজ করতে গিয়ে অনেক শিশুকেই নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্নক আহত হতে হয়। আহত বা অসুস্থ্য হলেও তাদের নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা, খুজ নেয়না ভাটা মালিক পক্ষ।
যদিও ন্যাশনাল ব্রিকস (বিএনবি)এর মালিক মালেক সরকার এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর ইট ভাটায় কোন শিশু শ্রমিক নেই।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ শহজাহান মিয়া বলেছেন শিশুশ্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা শিশুশ্রমের সাথে সম্পৃক্ত আছে তারা যেই হক না কেন অবশ্যই তাদের উপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে এটাই আমাদের দাবী।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী হাফিজুল আমিন বলেন, যদি কোন ইট ভাটয় এমন শিশুশ্রম দেখা যায় তবে সেই ভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
