লাইফস্টাইল

কেন জানুয়ারির প্রথম সোমবার পরিণত হয় বিচ্ছেদের দিনে?

গাজীপুর কণ্ঠ ,লাইফস্টাইল ডেস্ক : জানুয়ারির প্রথম সোমবারকে ‘বিচ্ছেদের দিন’ বলে ডেকে থাকেন পরিবার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা, এদিন অনেক মানুষ জানতে চান, কিভাবে ভালোভাবে তাদের বিয়ের সমাপ্তি টানা যায়।

সুতরাং কি এমন ঘটে, যা এতো যুগলকে এরকম উৎসবের মতো করে বিয়ে বিচ্ছেদে আগ্রহী করে তোলে?

ব্রিটেনের সম্পর্ক বিষয়ক একটি দাতব্য সংস্থার তথ্য মতে, দেশটির ৫৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ মনে করে, ক্রিসমাস আর নতুন বছর হচ্ছে অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং সম্পর্কে চাপের কারণ।

” কেউ বলছে না যে, ক্রিসমাসই কাউকে বিচ্ছেদ বা ছাড়াছাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি এর মধ্যেই নানা সমস্যার মধ্যে থাকেন, তাহলে এই উৎসবের অতিরিক্ত চাপ, যেমন অতিরিক্ত খরচ এবং পারিবারিক বিরোধে খারাপ লাগা শেষপর্যন্ত বিচ্ছেদের দিকে গড়াতে পারে”, বলছেন সিমোন বোস, রিলেটের একজন পরামর্শক।

ফলে ছুটি শেষে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিচ্ছেদের ব্যাপারে আলাক করতে চাওয়া যুগলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সেই সঙ্গে, যুক্তরাজ্যের অনলাইন এইচএম কোর্ট এন্ড ট্রাইব্যুনাল সার্ভিস জানিয়েছে, সংস্থাটি ক্রিসমাসের শুরু থেকে নববর্ষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের জন্য ৪৫৫টি অনলাইন আবেদন এসেছে। যার মধ্যে ১৩টি আবেদনই ছিল ক্রিসমাসের দিনে।

বিচ্ছেদ বিষয়ক একটি সহায়তা প্রতিষ্ঠান, অ্যামিকেবলের তথ্য মতে, শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই যুক্তরাজ্য জুড়ে ৪০৫০০ মানুষ ‘বিচ্ছেদ’ শব্দটি লিখে কম্পিউটারে সার্চ করেছে।

জানুয়ারির আগে ঠিক কী ঘটে?

”এটা পরিষ্কার যে, ক্রিসমাস আর নববর্ষ হচ্ছে এমন একটা সময় যখন যুগলরা লম্বা একটা সময় ধরে একত্রে থাকে এবং তাদের আবেগও উত্তুঙ্গ অবস্থায় থাকে,” বলছেন অ্যামিকেবলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেট ড্যালি।

সম্পর্ক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সন্তান বা পরিবারের কথা ভেবে অনেক যুগল তাদের খারাপ সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যান। অন্য অনেকে আরেকবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান।

অনেক সময় যুগলরা ক্রিসমাস বা কোন ছুটির দিনের কথা আলাপ করতে গিয়ে ঝগড়ার মতো পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন। তখন তারা পরিবার বা ভবিষ্যতে একসঙ্গে সময় কাটানোকে গুরুত্ব দেন।

কিন্তু সম্পর্ক যদি তলানিতে গিয়ে ঠেকে, তখন কোন আকর্ষণহীন জীবন কাটানো, ধরাবাঁধা পারিবারিক কাজের মধ্য দিয়ে গেলে সেটা ক্রমেই একঘেয়ে বলে মনে হতে পারে। হয়তো মনে হতে পারে এরকমটা আর বহন করা সম্ভব নয়।

বছরের এই উৎসবের সময়টায় এসে অতিরিক্ত খরচ আর পারিবারিক চাপের কারণে এ ধরণের খারাপ সম্পর্কগুলো আর টিকে থাকতে পারে না, বরং দীর্ঘদিনের চাপা পড়ে থাকা বিষয়গুলো সামনে বেরিয়ে আসে।

সুতরাং মাস শেষে, যেমনটা বলছে ড্যালি, ”এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অনেক মানুষ বুঝতে শুরু করে যে, তারা অখুশি এবং ছাড়াছাড়ির বিষয়টি ভাবতে শুরু করে।”

এটা শুধুমাত্র ক্রিসমাস শেষেই হয় তা নয়, বরং গ্রীষ্মের ছুটি শেষেও বিচ্ছেদের এই প্রবণতা দেখা যায়।

নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি

সাধারণত নতুন বছরকে দেখা হয় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন করে ভাবার, নিজেদের পুনরায় গড়ে তোলার ও নতুন করে শুরু করার একটি সময় হিসাবে।

কোন মানুষ যদি ভাবতে থাকে যে, সে একটি খারাপ পরিস্থিতি বা সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে, তারা হয়তো সেই অবস্থায় আরো ১২টি মাস আর থাকতে চাইবে না-সেটা শারীরিক বা মানসিকভাবেই হোক না কেন।

”দুঃখজনক ব্যাপার হল, অনেক যুগল মনে করে যে, ফেরত যাওয়ার আর কোন উপায় নেই এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা বিচ্ছেদ করতে চান,” বলছেন ড্যালি।

অ্যামিকেবলের তথ্য বলছে, বিচ্ছেদ নিয়ে ২০১৮ মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের দিনটি ছিল বছরের প্রথম কর্ম দিবসটি।

দাতব্য সংস্থা রিলেটের তথ্যও বলছে, জানুয়ারির প্রথম কর্ম দিবসে বিচ্ছেদের বিষয়ে তারা ১৩ শতাংশ নতুন টেলিফোন পান এবং ওয়েবসাইটে ৫৮ শতাংশ ব্যবহারকারী বেড়ে যায়।

তবে তারা এটাও বলছেন, সঠিকভাবে পরামর্শ পেলে অনেক দম্পতি তাদের সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে পারে, অথবা অন্তত বেদনাহীনভাবে সম্পর্কটি শেষ করতে পারেন।

কিভাবে সম্পর্কের ঝামেলা এড়ানো যায়:

প্রতিটি সম্পর্কেই মনোযোগ ও যত্নের দরকার হয়। কিন্তু সেজন্য আপনি একা নন। আপনি যদি পারিবারিকভাব চমৎকার একটি ছুটি উপভোগ করার পরিকল্পনা করে থাকেন, সেজন্য রিলেটের কিছু পরামর্শ রয়েছে:

খরচের বিষয়টি ঠিক করুন: আপনার সঙ্গীর সঙ্গে বসে ঠিক করুন আপনাদের অবকাশটি কেমন হবে, কোথায় বেড়াতে যাবেন, খবর কেমন হবে এবং আপনি কতটা খরচ করতে চান। সেক্ষেত্রে হয়তো দুজনকেই খানিকটা ছাড় দিতে হবে, বিশেষ করে যদি টাকাপয়সা নিয়ে চিন্তার বিষয় থাকে।

কাজকর্ম ভাগ করুন: উপহার কেনা, বাড়ি ঠিক করা বা খাবার প্রস্তুত করার মতো বিষয় গুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিন। দক্ষতা ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে দুজনে কাজকর্ম ভাগ করে নেয়া ভালো।

নিজের ও আমাদের জন্য খানিকটা সময়: যখন আপনি একটি বড় পরিবারের মধ্যে বেশ কিছুদিন সময় কাটাবেন, তখন নিজের জন্য খানিকটা সময় বের করে নিন, যাতে নিজে ক্লান্ত হয়ে না পড়েন। নিজের রুমে গিয়ে পরস্পরকে খানিকক্ষণ জড়িয়ে রাখুন, খুব ভোরে উঠে একসঙ্গে খানিকক্ষণ হাঁটুন।

পরস্পরকে সমান গুরুত্ব দিন: আপনি হয়তো প্রিয় কোন আত্মীয় বা বন্ধুর সঙ্গে একত্রে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। অথবা কোন সন্তানের সঙ্গে বেশি একাত্মতা বোধ করেন। কিন্তু পরিবারে অন্য সদস্যদের সময় কাটানোর চেষ্টা করা উচিত, যাতে সবাই একাত্মতা বোধ করেন।

দ্রুত কিছু না করা: যদি আপনার সঙ্গী এমন কিছু করে, যা আপনাকে আহত করে তোলে, তাহলে তাদেরকে পরিবারের সবার সামনে অপদস্থ না করে অনুরোধ করুন যে, তার সঙ্গে আপনি আড়ালে গিয়ে কথা বলতে পারেন কিনা। যদি বাসায় মেহমান থাকে, তাহলে বাগানে যেতে পারে বা হাটতে যেতে পারেন এবং পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে পারেন।
.

……….অথবা ভালোভাবে বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে পারেন। বিচ্ছেদ যদি করতেই হয়, সেক্ষেত্রে ভালোভাবে সেটি করার জন্য বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ রয়েছে:

১.বিচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু পর যদি আপনি সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে আবার সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন, তাহলে হয়তো অযথাই সময় ক্ষেপণ হবে। কারণ আপনি এবং আপনার সঙ্গী হয়তো তখন ভিন্ন ধরণের মানসিক অবস্থায় রয়েছেন। আপনার সঙ্গীকে খানিকটা সময় দিন, যাতে তিনি পুরো বিষয়টি আবার ভেবে দেখতে পারেন। বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শক বা পেশাদারদের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা হয়তো বিচ্ছেদের সময়কার বেদনার কাটিয়ে ওঠা এবং মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে

২. আবেগ নয়, যুক্তির দিক থেকে আলোচনা করুন। বড় ধরণের কোন আইনি ঝামেলায় না গিয়েই আলোচনার মাধ্যমে ভালোভাবে বিচ্ছেদ করা সম্ভব। তবে বিয়ের সময় যেমন জীবনযাপন করেছেন, দুজনের কেউই হয়তো বিচ্ছেদের পরে আর সেরকম জীবনযাপন করতে পারবেন না- প্রথমেই এটা মেনে নেয়া ভালো।

৩. বিচ্ছেদ যদি করতেই হয়, তাহলে সঙ্গীর সঙ্গে একটি সময় ঠিক করে নিন, এবং সেই সময়ে স্থির থাকুন। কারণ বিচ্ছেদের বিষয়টি যতো দীর্ঘ হবে, ততো কষ্ট এবং খরচ বাড়বে।

৪. বিচ্ছেদের খরচ বা অর্থনৈতিক বিষয়ে দুজনে যৌক্তিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিন। সেখানে সম্পদ এবং ঋণ- উভয়ের ক্ষেত্রেই দুজনকে সমান দায়িত্ব নিতে হবে।

৫. প্রথমেই কোন আইনজীবীর কাছে না দৌড়ানো ভালো। কারণ সেটি খরচ বাড়িয়ে দেয়। বরং প্রথমে নিজে থেকে বিচ্ছেদের আইনকানুন জেনে নিন। অনেক সংস্থা এক্ষেত্রে বিনামূল্যে পরামর্শ ও সহায়তা করে থাকে- তাদের সাহায্য নিতে পারেন।

৬. অতীতের দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যতের দিকে নজর রাখুন। আলোচনার ধরণ পাল্টান। চিন্তা করুন, কিভাবে নিজেকে সুখী করা যায়। যদি সন্তান থাকে, তাহলে ভাবুন তাদের কিভাবে খুশী রাখা যায়। অতীত ভেবে নিজের সময়, শক্তি বা অর্থ নষ্ট করবেন

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button