গাজীপুর

শুধু পুলিশই দেখে না বাচ্চুর ইয়াবা বার

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘তিনটা বড়ি (ইয়াবা) নিব ৫০ টাকা কম আছে। আরে ভাই এমন করেন কেন? দেন না।’ এভাবেই ৯০০ টাকা দামের তিনটি ইয়াবা ৫০ টাকা কমে কিনলেন রহিম মিয়া। পাশেই পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামালের নেতৃত্বে একটি টহল দল ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি দেখছে। তাদের সামনেই ঘটল সব। কিন্তু তারা সাক্ষী গোপাল। কিছুই বললেন না। বিষয়টি দেখিয়ে জানতে চাইলে ওই এএসআই বললেন, ‘আরে ভাই গরিব মানুষ, করে খায়। বোঝেন না ব্যাপারটা?’

ঠিক এভাবে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে চলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজার মতো মাদকের বিকিকিনি। রাজধানী লাগোয়া গাজীপুরের টঙ্গীর মাজার বস্তি এলাকার চিত্র এটি। বিশাল বস্তি এলাকার ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ভিন্ন দৃশ্য। অন্য আর ১০টি বস্তির মতো মাদক বিক্রিতে এখানে রাখঢাখ নেই। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ও বসে শত শত লোক বিক্রি করছেন মরণ নেশার বিভিন্ন উপকরণ। পুলিশের সামনে সব কিছু ঘটলেও রহস্যজনক কারণে নীরব তারা।

এলাকাবাসী বলছেন, দিনে অন্তত কোটি টাকার ইয়াবার বিকিকিনি চলে এ বস্তিতে। আর এ মাদকের ডেরার সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হলেন বাচ্চু মিয়া ওরফে বাচ্চু। যাকে স্থানীয়ভাবে ইয়াবা গডফাদার হিসেবে চেনেন সবাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে চলে তার এ বাণিজ্য।

স্থানীয় লোকজন ও বাচ্চুর সহযোগী মাদক ব্যবসায়ীরা জানান, আড়াই মাস আগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্ত হয়ে আসেন বাচ্চু। বেশিরভাগ সময় টঙ্গীর বাইরে পালিয়ে বেড়ালেও স্থগিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় এই মাদক ব্যবসায়ী ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেন।

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরঘেঁষে গড়ে উঠেছে মাজার বস্তি। বিশাল আয়তনের বস্তিতে গত রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, ঢোকার মুখেই অবস্থান নিয়ে আছেন ১৫ থেকে ২০ তরুণ। প্রায় প্রতিটি প্রবেশপথেই এমন পাহারা। কে ঢুকছে আর বের হচ্ছে সেটি দেখাই তাদের কাজ। এ প্রতিবেদক স্থানীয় দুই ব্যক্তিকে নিয়ে মাদকসেবনকারী পরিচয়ে বস্তিতে প্রবেশ করেন। সেখানে পা দিতেই রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দেন মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১০টি বস্তিঘর পার হয়ে একটি ছোট্ট গলিপথ চোখে পড়ে। সেখানে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি। তিনি আমাদের বলতে লাগলেন, ‘ভাই আমার ঘরে আসেন। খাওয়ার (ইয়াবা সেবন) ভালো ব্যবস্থা আছে। পছন্দ না হলে টাকা দিতে হবে না। নিরিবিলি পরিবেশ।’ একটু পরে যাব জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। বস্তির মাঝামাঝি এলাকায় একটি সরুগলি ভেতরে ঢুকে গেছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ঘরে ইয়াবার সঙ্গে অন্য কিছুও হয় বলে আমাদের নিয়ে গেলেন এক ব্যক্তি। সেই অন্য কিছু হলো অতিরিক্ত টাকা দিলে মাদকসেবনের পাশাপাশি মিলবে নারী সঙ্গও। একটি বস্তিঘরের সামনের সামান্য ফাঁকা জায়গায় কাপড়ের ছামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। ভেতের যেতেই দেখা গেলে, মাদকসেবনের দৃশ্য। কেউ কেউ আবার সেবনের পর সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঢাকা থেকেও মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা ভিড় জমান সেখানে। অনেক ঘরে নারীরা দুপুরের রান্না করছিলেন। পাশাপাশি মাদক বিক্রির কাজও সামলাচ্ছেন সমানতালে। স্থানীয়রা সব কিছু দেখেও ভয়ে মুখ খোলেন না।

মাদক ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন বাচ্চু মিয়া। বিএনপি ঘরনার হিসেবে পরিচিত থাকলেও এই মাদক ব্যবসায়ী সিটি নির্বাচনে টঙ্গী এলাকার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালান। মূলত যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাকে ম্যানেজ করেই চলে তার বাণিজ্য। মাদক বিক্রির টাকার ভাগ তিনিই পৌঁছে দেন বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে। সব বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা ঢোকে তার পকেটে। আর এ কাজে বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুক্ত রয়েছেন স্বপন মিয়া, ইসমাইল, নূর মোহাম্মাদ, ডুবলি, দাঁত ভাঙা দুলাল, রফিকুল ইসলাম ও মোমেন। তাদের বেশিরভাগের নামেই মাদক ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাচ্চুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, মাজার বস্তিতে সব সময় আমাদের পুলিশের একটি টহল টিম থাকে। তাদের সামনে মাদক বিক্রির কোনো তথ্য আমার জানা নেই। একই জবাব দিয়েছেন গাজীপুর সদর সার্কেলের (জয়দেপুর-টঙ্গী) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ।

 

সূত্র : আমাদের সময়

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button