আলোচিত

আ.লীগের সভাপতি হলেন ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : টেকনাফে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হাম জালাল। ১৫ নভেম্বর, শুক্রবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে ওই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে নাম ঘোষণা করা হয়।

মাত্র কিছু দিন আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। সকল মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে না রাখতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকার পরেও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীকেই সভাপতি করা হলো।

ইউনিয়নের ছোট হাবিবপাড়ার হাম জালালের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনের অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে ৩০০০ পিস ইয়াবাসহ টেকনাফে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল তিনি। এর আগে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নেয়ার সময় চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন জালাল।

কিছু দিন আগে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ী বাহাদুর নিহত হয়। হাম জালালের ছোট ভাই হলেন নিহত বাহাদুর।

এ বিষয়ে টেকনাফের আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, হাম জালালকে কাউন্সিলে প্রার্থী হতে না দিতে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অমান্য করে জালালকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করেন।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ জানান, হাম জালাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ টেকনাফ থানায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাম জালাল। তার পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। কিছু দিন আগে জামিনে এসে হাম জালাল আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি হাম জালালকে আটক করার চেষ্টা করছে টেকনাফ থানা পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, ‘টেকনাফকে মাদকমুক্ত করার জন্য পুলিশ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে হাম জালালের মতো একজন চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।’

ওই ইউনিয়ন কাউন্সিলের বিশেষ অতিথি জেলা পিপি এড. ফরিদুর আলম বলেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে, সকল মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে না রাখতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে। সেখানে হাম জালালের মতো চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সভাপতি পদে প্রার্থী করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর। সম্মেলন চলাকালেই জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে হাম জালালকে বাদ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নুরুল বশর কেন্দ্র বা জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নির্দেশ মানেনি। তাই সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কাউন্সিল না করেই চলে আসেন।’

এ বিষয়ে নুরুল বশর জানান, ‘হাম জালাল দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ ও মামলা নেই।’

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার জানানো হয়েছিলো। বার বার নিষেধ করার পরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হাম জালালকে সভাপতি ঘোষণা করার বিষয়টি দুঃখজনক। দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাউন্সিল করায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সকল কার্যক্রম বাতিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তাছাড়া এ বিষয়ে আগামীকাল জরুরি সভা করবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ।’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button