আলোচিত

‘আশঙ্কার কথা’ জানিয়ে পাঁচবার জিডি করে শেষমেশ খুন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন’ জানিয়ে থানায় পাঁচটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন আলী। আশঙ্কার কথা জানিয়ে আবেদন করেছিলেন পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছেও। শেষমেশ তিনি খুন হয়েছেন। তাঁর লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে।

ইয়াছিন আলী ছিলেন শল্য (সার্জিক্যাল) চিকিৎসাসামগ্রীর ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে এসব সামগ্রী আমদানি করে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মহানগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে’ বিক্রি করতেন। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিপরীতে নিজের সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর তাঁর এই প্রতিষ্ঠান। তিনি অবিবাহিত। ব্যবসার পাশাপাশি গানবাজনায় ছিল তাঁর বিশেষ মনোযোগ। নিজে গান গাইতেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে গানের আসরও বসাতেন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইয়াছিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিজের ছোট ভাইয়ের খুনের মামলার বাদী হিসেবে আদালতে হাজিরা শেষে ওই দিন তিনি বগুড়া থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। ইয়াছিনের গলায় আঁচড়ের দাগ ছিল। ঘটনার পর দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইয়াছিনকে খুনের কারণ বা এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

ইয়াছিনের লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ তদন্ত করে। তারা কোনো কিনারা করতে না পারায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে তা হস্তান্তর করা হয়। ঘটনাটি তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াছিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক জটিলতা ছিল। খুনের পেছনের সব দিক তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।

সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইয়াছিন ছিলেন সপ্তম। তাঁর গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলার পশ্চিম করমজায়। একসময় প্রবাসে থাকলেও আশির দশক থেকে ঢাকায় ব্যবসা করেন। প্রথমে কলাবাগানে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা ছিল। এরপর ২০০০ সালের দিকে তিনি সার্জিক্যাল পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। বেশ অর্থবিত্তের মালিক হলেও সাধারণ জীবন যাপন করতেন বলে জানিয়েছেন বন্ধু-স্বজনেরা।

নিরাপত্তার কথা জানিয়ে থানায় করা ইয়াছিনের পাঁচটি জিডির দুটি ধানমন্ডি থানায়, দুটি মোহাম্মদপুর থানায় এবং একটি কলাবাগান থানায়। ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর—এই সময়ের মধ্যে তিনি জিডিগুলো করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রমনা অঞ্চলের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এর দুই বছরের মাথায় তিনি খুন হলেন।

২০১০ সালের ২২ জুন মোহাম্মদপুর থানায় করা প্রথম জিডিতে ইয়াছিন উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে তাঁর ছোট ভাই মতিউর রহমানের খুনের মামলার বাদী তিনি। এই মামলার আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে না যায়, সে জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। তারা কয়েকবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করেছে। ওই দিনও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন এসে তাঁর সন্ধান চায়। তাঁকে না পেয়ে দোকানের কর্মচারীদের বলে যায়, মামলা তুলে না নিলে ভাইয়ের মতোই তাঁর পরিণতি হবে। এরপর তিনি দোকানে এসে দেখতে পান, উল্টো পাশে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. খাজা, মো. বাদশা ও মো. ফরহাদ একটি সিএনজিতে বসে ফোনে কথা বলছে। এ অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে জিডিটি করেন।

এরপরের চারটি জিডিতে ইয়াছিন তাঁর একটি ব্যবসায়িক বিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন। জিডিতে তাঁর দাবি, পূবালী ব্যাংক থেকে তাঁর এক দূর সম্পর্কের মামা নিজের প্রতিষ্ঠান মার্প বাংলাদেশের জন্য একটি চলতি ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণ নেওয়া হয়েছিল ইয়াছিনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ৫ দশমিক ৪৮ কাঠা জমির বিপরীতে। ওই মামার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মার্প বাংলাদেশের পরিচালকের দায়িত্ব পান। কিন্তু তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আরও ঋণ নেন। সুদ-আসলে এই ঋণ ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়। এ নিয়ে তিনি কথা বলতে গেলে মামার ছেলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার কাছে করা অভিযোগেও তিনি এই বিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন।

ইয়াছিনের খুনের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তাঁর বোনের জামাই এ কে এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, ঋণের বিষয়টি সমাধান করতে ইয়াছিনকে শেষমেশ প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যাংককে দিতে হয়েছিল। ঋণ নিয়ে যখন ঝামেলা চলছিল, তখন ইয়াছিন ওই জিডিগুলো করেছিলেন। এর মধ্যে দুবার পুলিশ সব পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিল বলে তিনি জানেন। কিন্তু তাঁর নিরাপত্তার জন্য কখনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে তিনি দেখেননি।

ইয়াছিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক মুরাদুজ্জামান বলেন, ব্যবসা নিয়ে ইয়াছিনের অনেকের সঙ্গেই বিরোধ ছিল। এ ছাড়া তাঁর ভাইয়ের খুনের মামলারও বাদী তিনি। এদের কেউ তাঁর খুনের সঙ্গে জড়িত কি না, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।

 

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Klobásy v cestíčku: Lahodné recepty na domáce pečenie Tipy a originálne recepty na prípravu cesta na kotlety Zabudnite na boršč a okrošku: neuveriteľný prvý Ako pripraviť chutný šalát s kuracím mäsom a ananásom: recept Najlepšie recepty na knedle: tradičné a originálne slovenské