আইন-আদালতআলোচিত

ভুয়া ওয়ারেন্ট চক্রে আদালতের লোকও!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে ভুয়া ওয়ারেন্টের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এর সাথে আদালতের কিছু কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। ভুয়া ওয়ারেন্টের ফেরে হাজতবাসও করেছেন অনেকে।

ভুয়া ওয়ারেন্টের এই চক্র শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের আদালতেই সক্রিয়। এমনকি হয়রানি করতে এক জেলার মানুষের বিরুদ্ধে আরেক জেলার আদালতের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়। গত জুলাই মাসে এই ধরনের ওয়ারেন্টে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দুই ভাই হারুন পাটোয়ারী ও স্বপন পাটোয়ারীকে ১৪দিন কারাগারে থাকতে হয়। বান্দরবন জেলা আদালতের নামে পাঠানো একটি ভুয়া ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে কচুয়া থানা পুলিশকে তারা গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, ‘‘গ্রেপ্তারের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বান্দরবন আদলতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মামলার যে সূত্র দেয়া হয়েছে সেই মামলা আদৌ হয়নি। পরে বান্দরবন আদালত থেকে চাঁদপুর আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হলে তারা ছাড়া পান। আর এই প্রক্রিয়ায় তাদের ১৪দিন কারাগারে থাকতে হয়।’’

প্রশান্ত কুমার মজুমদার জানান, ‘‘ঢাকার সিএমএম আদালতের নামে যে ১০টি ভুয়া ওয়ারেন্ট পাঠানো হয় তার একটি ছিলো কুমিল্লার বরুরার মিজানুর রাহমানের বিরুদ্ধে। ভুয়া মামলাটি দেখানো হয় কেরানীগঞ্জে। তাকে জমিজমার বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ ওই ভুয়া ওয়ারেন্টের মাধ্যমে এলাকা ছাড়া করেছিল।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এইসব ভুয়া ওয়ারেন্ট ব্যবহার করা হয়। আর চক্রগুলো অর্থের বিনিময়ে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে দেয়।’’

কচুয়ার দুই ভাইয়ের ভুয়া ওয়ারেন্টে হাজতবাসের মতো আরো অনেক ঘটনা আছে। গত ৩০ জানুয়ারিতে নিলফামারীর রাশিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওয়ারেন্টটি ছিলো ঢাকার সিএমএম আদালতের নামে। কিন্তু পরে দেখা যায় সেটি ভুয়া। রাশিদুলের নামে কোনো মামলাই নেই। কিন্তু তারপরও তাকে ১২ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে।

আইনজীবীরা জানান, ‘‘এইরকম ভুয়া ওয়ারেন্ট সারাদেশ থেকেই পাওয়া যায় এবং সংখ্যাও অনেক। এটা আদালতের জন্য একটি সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শত শত নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’’

ঢাকার সিএমএম কোর্টের চিফ পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘‘এই ভুয়া ওয়ারেন্ট একটা বড় সমস্যা৷ আর এটা এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে এর সঙ্গে আদালতের কেউ না কেউ জড়িত। কারণ ওয়ারেন্টের যে ফর্ম তা কিন্তু অরিজিন্যাল। আর এটা বিজি প্রেস ছাড়া অন্য কোথাও ছাপারও সুযোগ নেই। এই বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখলে চক্রকে চিহ্নিত করা সম্ভব।’’

তিনি ভুয়া ওয়ারেন্ট থেকে রেহাই পেতে ওয়ারেন্ট যাচাইয়ের বিধান চালুর সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনো আদালত থেকে কোনো থানায় ওয়ারেন্ট গেলে তা যদি সংশ্লিষ্ট আদালতে যাচাই করে তামিলের বিধান করা হয় তাহলে ভুয়া ওয়ারেন্ট ধরা পড়ে যাবে তামিলের আগেই। এতে সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন।’’

 

 

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button