সেনাবাহিনীকে কেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন শি জিনপিং?
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার (০৪ জানুয়ারি) উচ্চপদস্থ চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, সেনাবাহিনীকে সর্বোতভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। চীনা প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ায় দেশটির স্বার্থের সুরক্ষার জন্য একটি আইনে সম্মতি দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট লিখেছে, এর মাধ্যমে তাইওয়ানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। আর শি জিনপিংয়ের যুদ্ধপ্রস্তুতির আহ্বান এলো তার ঠিক পরেই।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বার্থগত বহু বিষয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। একদিকে দুই দেশ যেমন পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে তেমনি, তাদের বিবাদ আছে দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা প্রশ্নে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরে বিশাল অংশ নিজের একক মালিকানায় রাখার দাবি করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রের ওই অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক জলপথের অংশ মনে করে, যেখানে সবারই চলাচলের অধিকার আছে।
চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শুক্রবারের সভায় শি জিনপিং দেশটির সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন, চীনের জন্য দিন দিন ঝুঁকি ও বিপদ বাড়ছে। সেনাবাহিনীকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে তারা নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়রাম্যানও। তার ভাষ্য, ‘বিশ্ব এখন এমন নতুন সব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, গত একশ বছরে যা কেউ দেখেনি। আর চীন এখনও উন্নয়নের কৌশলগত সুযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার করছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’ তাই সেনাবাহিনীকে যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ তৎপর থাকতে হবে। তাদের প্রস্তুত হতে হবে নতুন পদ্ধতির যুদ্ধের জন্য।
গত বুধবার (০২ জানুয়ারি) শি জিনপিং বলেছিলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণের জন্য এবং দ্বীপটির স্বাধীনতার দাবি আদায় রুখে দিতে বলপ্রয়োগের অধিকার চীনের রয়েছে।
শি জিনপিং এই বক্তব্য দেওয়ার দুই দিন আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ট্রাম্প সম্মতি দিয়েছেন একটি আইনে, যার নাম ‘এশিয়া রিঅ্যাশুরেন্স ইনিশিয়েটিভ অ্যাক্ট।’ মার্কিন আইনটিতে বলা হয়েছে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো মিত্র দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্বস্ত করবে নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে। পাঁচ বছরে ধরে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ১৫০ কোটি ডলার খরচ করবে ওই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি দৃঢ় করতে।
‘এশিয়া রিঅ্যাশুরেন্স ইনিশিয়েটিভ অ্যাক্টে’ তাইওয়ানের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে সে তার আত্মরক্ষার অধিকারকে সমুন্নত রাখতে পারে।
‘তাইওয়ান ট্রাভেল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী ঘন ঘন তাইওয়ানে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানোরও পরামর্শ রয়েছে আইনে। বলা হয়েছে, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে থাকা বিরোধের মীমাংসা এমন হতে হবে যা ‘তাইওয়ান প্রণালির উভয় পাশে থাকা পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’
যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে নজরদারি প্রযুক্তি উন্নয়নে সহযোগিতা করবে, এমন পরামর্শও রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনটিতে।
চীন মনে করে, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পাশে থাকার বিষয়ে নিজের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এরকম সহযোগিতা পেতে থাকলে তাইওয়ান নমনীয় হবে না। আর সেক্ষেত্রে চীনও সংঘাত ছাড়া তাইওয়ানকে নিজের প্রদেশ হিসেবে ফিরে পাবে না।