আলোচিত

তিন হাজার কোটি টাকার স্বীকারোক্তি জি কে শামীমের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম তার সুবিধাভোগীদের নাম প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। প্রকাশ করেছে তার সম্পদের পরিমাণও। কিন্তু দুদক তাদের চার্জশিটে তার অবৈধ সম্পদের বিষয়টিই রাখবে, সুবিধাভোগীদের নয়।

তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুদক।

দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে জি কে শামীমকে। জানা গেছে, দুই বছর আগে একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে চার কোটি টাকা দেন তিনি। ওই সংগঠনকে মাসে দিতেন ৫০ লাখ টাকা। আর যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলেই দিতেন ১০ লাখ টাকা। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাকে এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে।

এর বাইরে গণপূর্তের প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তিনি নিয়মিত মাসোহারা দিতেন। তার এই মাসোহারায় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রশাসন, সাংবাদিক এবং সেলিব্রেটি বা তারকারাও রয়েছেন। তারকাদের তিনি মূলত দেশে ও দেশের বাইরে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন।

জি কে শামীম গণপূর্তের অধীনে ঠিকাদারির একচ্ছত্র কাজ করলেও তার সিন্ডিকেটে ওয়াসা, মেডিক্যাল, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি যারা করেন তাদের একটি অংশ তার সিন্ডিকেটের সদস্য।

দুদক সাত দিনের রিমান্ডে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে রোববার থেকে। আর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সোমবার থেকে।

জি কে শামীমের সম্পদ কত?
জানা গেছে জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদের কথা স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি দুবাইতে বসবাসের কথা ভাবছিলেন৷ ডিসেম্বর মাসেই সেখানে তার ফ্ল্যাট কেনার কথা ছিল।

জি কে শামীমের অসুস্থতার দাবি
রোববার জি কে শামীমকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনার পর পরই বুকে ব্যথার কথা জানান তিনি। এরপর দুদকের নিজস্ব চিকিৎসক ডেকে এনে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসক সবকিছু পরীক্ষা করে স্বাভাবিক বললে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে ব্যর্থ হন। জানা গেছে, এখন জি কে শামীম স্বাভাবিকভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তবে তাকে যেকোনো প্রশ্ন একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বেশ ভেবেচিন্তে জবাব দেন।

দুদকের লক্ষ্য

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর দুদক এ পর্যন্ত নয়টি দুর্নীতির মামলা করেছে, যার মোট আসামি ১৬ জন। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলায় ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক। আর খালেদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনা হয়েছে। জানা গেছে, দুদক মামলার চার্জশিটে তাদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সুবিধাভোগীদের বিষয় থাকবে না। তারা এসব ব্যাপারে বাড়তি যে তথ্য দিচ্ছেন তা দুদকে আর্কাইভ আকারে নথিভূক্ত করা হবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এইসব তথ্য নিয়ে আলাদা তদন্ত হবে৷দুদক যুবলীগ নেতা সম্রাট, আরমান, মিজান ও রাজীবের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জি কে শামীম বা খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছু জানায়নি সংস্থাটি। তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘‘এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আমরা যাচাই বাছাই করব। আমরা দেখব এরমধ্যে কতটুকু সারবত্তা আছে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আরো মামলা হবে কিনা বা আমরা কতটুকু এগুবো। তার আগে কিছু বলা যাবে না।’’

মামলার ধরন:
গত ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব। এরপর পর্যায়ক্রমে খালেদ, সম্রাট ও আরমানসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ২৭৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।

শামীম, খালেদ, সম্রাট ও আরমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি দমন আইনে তিন ধরনের মামলা হয়েছে৷ এরইমধ্যে র‌্যাব জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে।

শুরুতে শামীমকে আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়। ডিবি উত্তরের উপ কশিনার মশিউর রহমান বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা কী পেয়েছি তা প্রকাশ করা যাবে না। তবে আমরা যা পেয়েছি তা সবই র‌্যাবকে পাঠিয়েছি। আমরা প্রধানত তার অর্থের উৎস, সুবিধাভোগী, সম্পদের পরিমাণ এইসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।’’

এদিকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে যে তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে ওই তথ্য তারা দেননি। আর মঙ্গলবার চেষ্টা করেও র‌্যাবের দায়িত্বশীল কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button