ধর্ষণ খুনখারাবি বেড়েছে
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আগের বছরের তুলনায় গত বছরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ ছিল। খুন, ধর্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের মতো অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন গত অর্থবছরের তথ্যের সঙ্গে আগের অর্থবছরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ছাড়াও সীমান্তে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকের জীবনহানি বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক প্রতিবেদনে। কারাবন্দি হাজতি ও কয়েদির সংখ্যা বেড়েছে। রেমিট্যান্স বাড়লেও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ৩৩ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেছে কিছুটা। এসব নেতিবাচক তথ্যের সঙ্গে ইতিবাচক তথ্যও রয়েছে প্রতিবেদনে। জন্ম ও মৃত্যুহার কমাসহ স্বাস্থ্য খাতের প্রায় প্রতিটি সূচকে উন্নতি হয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ আরও কয়েকটি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর খুন হয়েছে ৩ হাজার ৮১৩টি। যা আগের বছরের তুলনায় আড়াই শতাংশের বেশি। সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৭১৭টি। আগের বছর ধর্ষণ ছিল ১৯ শতাংশ কম। গত বছর নারী নির্যাতন বেড়েছে সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি। অর্থাৎ গত বছর নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজার ৫৭২টি। তার আগের বছর যা ছিল ১০ হাজার ৬৫৬টি। অস্ত্র আইনে মামলার সংখ্যাও ছিল ১৫ শতাংশের বেশি। গত বছর অস্ত্র আইনে মামলার ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৮৯টি। তার আগের বছর ২ হাজার ২৪৪টি। গত বছর বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার ছিল আগের বছরের তুলনায় ১৯২ শতাংশ বেশি। গত বছর বিস্ফোরক দ্রব্যে ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ১৭৫টি। আগের বছর যা ছিল ৪০২টি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় গত বছর খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী নির্যাতন, অস্ত্র আইনসংক্রান্ত ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ বাড়লেও অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, রাহাজানি ও গবাদি পশু চুরির অপরাধ কমেছে।
কারাবন্দি হাজতি ও কয়েদির সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর বিভিন্ন ধরনের হাজতি ও কয়েদির সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ২৪৯ জন। আগের বছর সেটা ছিল ৭৮ হাজার ২৬৮ জন। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল ১ হাজার ৭১৩ জন। আগের বছর সেটা ছিল ১ হজার ৫৪৬ জন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে গত বছর একজনের। আগের বছর কার্যকর করা হয়েছিল তিনজনের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত সংঘাত কমেছে। গত বছর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘর্ষ হয়েছে তিনটি। আগের বছর সেটি ছিল ১৭টি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আগের বছরের মতো গত বছরও কোনো সংঘর্ষ হয়নি। সীমান্তে সংঘাত কমলেও বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকের জীবনহানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর বিএসএফ ২০ জনকে হত্যা করেছে। আগের বছর সেটি ছিল ৯ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মহার কমেছে। গত অর্থবছরে ছিল প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক ৩ জন। আগের অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৫ জন। মৃত্যুহারও কমেছে। আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ১ জন। গত বছর সেটা হয়েছে প্রতি হাজারে ৫ জন। নবজাতক মৃত্যুর হার কমেছে উল্লেখযোগ্য। গত বছর নবজাতকের মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৬ জন। আগের বছর সেটা ছিল ২৮ জন। একইভাবে মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার বেড়েছে।
মন্ত্রীরা সামষ্টিকভাবে ১ হাজার ১৪০ দিন দেশে এবং ৮১৩ দিন বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। প্রতিমন্ত্রীরা ১ হাজার ৩৪৮ দিন দেশে এবং ৫২৬ দিন বিদেশে ছিলেন। সচিবরা ১ হাজার ২৫২ দিন দেশে এবং ১ হাজার ৭৬৭ দিন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
কর্মকর্তা নিয়োগের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে কর্মচারী নিয়োগের সংখ্যা। গত বছর কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৮ জন। আগের বছর সেটি ছিল ৮ হাজার ৭৯৮ জন। গত বছর কর্মচারী নিয়োগ হয়েছিল ২৩ হাজার ৭২৩ জন। অথচ আগের বছর কর্মচারী নিয়োগ হয়েছিল ৩১ হাজার ৮০১ জন।
সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য করা মামলার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫১২ থেকে বেড়ে ৬৫ হাজার ৮৬৭-তে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা কমেছে। গত বছর সেটা ছিল ১ হাজার ৫৭। আগের বছর যা ছিল ১ হাজার ৪৭৯।
বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। গত বছর বিদেশে জনশক্তি হিসেবে গিয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ১২৯ জন। আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। আগের বছর বিদেশে কাজ করতে গিয়েছিল ৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৬১ জন। জনশক্তি রপ্তানি কমলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে। গত বছর সেটা ছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় যা ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
স্থল, নৌ ও আকাশ পথে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর এসেছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৮২ জন। আগের বছর ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩৮ জন।
শূন্য পদের সংখ্যা কমেছে। গত বছর শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯ হাজার ৯৫৯ জন। তার আগের বছর শূন্য পদ ছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ জন।
গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। গত অর্থবছরে শেষ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। তার আাগের বছরের ওইদিন ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ১২৯ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। আর মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।