গাজীপুর

টঙ্গীতে মাদক কারবারে যুব ও ছাত্রলীগ নেতারাও

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর মহানগর পুলিশের শীর্ষ ১০ মাদক কারবারি ও গডফাদারের তালিকায় উঠে এসেছে টঙ্গীর অনেক নেতাকর্মীর নাম। এই নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের। তালিকায় কৃষক লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামের পাশাপাশি রয়েছে ছাত্রলীগের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামও। রয়েছেন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও।

তালিকার শীর্ষে রয়েছে টঙ্গীর মরকুন টেকপাড়া এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সজনের (৩৬) নাম। তিনি গাজীপুর মহানগরের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সদস্য। স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর কৃষক লীগের প্রথম সারির এক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাঁর উত্থান। তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলছে টঙ্গীর কেরানির টেক ও মরকুন এলাকার মাদক কারবার।

তালিকার দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য রোকন শিকদারের (৩৮) নাম। তাঁর নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে টঙ্গীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া হাজীর মাজার বস্তি। মৃত তোতা শিকদারের ছেলে রোকনের নামে মাদক মামলা রয়েছে ১৯টি। একসময় ওই মাদক কারবার ছিল বাচ্চুর নিয়ন্ত্রণে। ২০১৮ সালের মে মাসে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু নিহত হওয়ার পর হাজীর মাজার বস্তির নিয়ন্ত্রণ নেন রোকন।

রোকনের পরই তালিকায় রয়েছে সাহাবুদ্দিন ওরফে দাবারুর (৩৬) নাম। হাজীর মাজার বস্তির মৃত সবল শেখের ছেলে দাবারু ছিলেন বাচ্চুর সহযোগী। তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শতাধিক ইয়াবা কারবারি। আগে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বর্তমানে তাঁর উঠাবসা যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে। তাঁর অন্যতম সহযোগী পূর্ব আরিচপুরের নুরু ভাঙ্গারীর ছেলে জুয়েল (২৮)।

তালিকার ৪ নম্বরে রয়েছে যুবদল নেতা টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তির কামরুল ইসলাম কামুর নাম (৪০)। একসময় এই বস্তির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল ২২ মামলার আসামি কামুর হাতে। জোড়া খুনের মামলায় তিনি এখন কারাগারে। কামুর অবর্তমানে এরশাদনগর বস্তির মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এরশাদনগরের বাসিন্দা আবদুল জলিল (৫০)। তালিকার ৮ নম্বরে রয়েছে তাঁর নাম।

তালিকার ৫ নম্বরে রয়েছে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরকার মশিউর রহমান বাবু এবং ৭ নম্বরে রয়েছে টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বাপ্পীর নাম।

মশিউর রহমান বাবু বর্তমানে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। চাউর রয়েছে, পদ পেতে কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী বাদ পড়ায় তাঁর সভাপতি হওয়ার বিষয়টি অনেকটা ঝুলে গেছে। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, এর পরও তিনি মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টঙ্গীর একাধিক সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা জানান, ২০০৯ সালে সাবেক টঙ্গী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আউচপাড়ার সরকার মশিউর রহমান বাবু। তাঁর বাবা সরকার নুরুল ইসলাম বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টঙ্গীর হাসানউদ্দিন সরকারের কাছের লোক হওয়ায় সেবার পদবঞ্চিত হন বাবু। কিন্তু ২০১৫ সালে ভাগ্য খুলে যায় তাঁর। মেহেদী কানন মোল্লাকে সভাপতি ও সরকার মশিউর রহমান বাবুকে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পদ পাওয়ার পরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাবু।

নিজেকে আড়ালে রেখে ঘনিষ্ঠদের দিয়ে শুরু করেন মাদক কারবার। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগকর্মী পূর্ব আরিচপুরের আল রাজি (৩২), মরকুন গুদারাঘাটের আসাদ, টঙ্গী বাজারের সাগর (২৫), জামাই বাজারের অস্ত্র ব্যবসায়ী পাপ্পু (৩০), দত্তপাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী চঞ্চল (৩৫), আউচপাড়ার রাসেল ওরফে ডন রাসেল (৩০) ও এরশাদনগরের ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ আল আদনান অন্তর (২৩)। দুই বছর আগে পাপ্পু গাড়িসহ ইয়াবা নিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। মাসখানেক আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের হাল ধরেছেন মাদক কারবারের। দেড় হাজার ইয়াবাসহ গত বছর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ আল আদনান অন্তর।

মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হচ্ছে না। কয়েকটি ওয়ার্ডে কমিটি করা হলেও সেগুলো নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলকর্মী ও মাদকাসক্তদের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। গত বছর সাবেক ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান পলককে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি করেন বাবু। পরে বিক্ষোভ ও তোপের মুখে তা স্থগিত করা হয়। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাদকাসক্ত আল-আমিনকে। একইভাবে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান কিছুদিন আগেও ছিলেন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে।

তালিকার ৭ নম্বরে থাকা হুমায়ুন কবীর বাপ্পী (২৭) গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর ঘনিষ্ঠ ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কর্মী রবিন মৃধা, একই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আল-আমিন, তাঁর ছোট ভাই ছাত্রলীগকর্মী রাব্বি ইয়াবা কারবারে জড়িত। ছাত্রলীগকর্মী তিস্তার গেট এলাকার মোস্তাক, মহসিন, আহাদ, আতিক ও এরশাদনগরের ছিনতাইকারী ছালাম টঙ্গী এলাকার ইয়াবা কারবারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক।

তালিকার ৬ নম্বরে রয়েছে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছাত্রদলকর্মী খাঁপাড়া সড়কের পিচ্চি স্বপনের (২৭) নাম। ৯ নম্বরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ, টঙ্গী শাখার সভাপতি আউচপাড়ার শফি এবং ১০ নম্বরে রয়েছে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রনেতা আউচপাড়ার রাজিবের নাম।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনো কর্মকর্তা সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদক কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকতা দানকারীদের নতুন তালিকায় ৬৬৭ জনের নাম উঠে এসেছে। যাঁদের কথা বলা হচ্ছে তাঁদের অনেকের নাম ওই তালিকায় রয়েছে।

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button