আলোচিত

বিশ্ববিদ্যালয়ে খুনের কেন বিচার হয় না?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত এক দশকে খুন হয়েছেন দুই ডজন শিক্ষার্থী। আর স্বাধীনতার পর থেকে হিসাব করলে এই সংখ্যা দেড় শতাধিক। কিন্তু কোনো হত্যাকাণ্ডেই অপরাধীর সাজা কার্যকর হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচারই হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের কেন বিচার হয় না? জানতে চাইলে সমাজ বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘এটা তো শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, আমাদের দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি এটি তারই প্রতিফলন, দেশের রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রশাসন ঘুষ-দুর্নীতিতে ভরা। বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা যথেষ্ট রাখা যায় না। পুলিশ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই তো একটা অরাজগতা চলছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে থাকবে কেন?’ শিক্ষক রাজনীতি কি এর জন্য দায়ি? জবাবে অধ্যাপক হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে কত শিক্ষক আছেন? কিন্তু একজন শিক্ষকের নাম কি আপনি বলতে পারবেন, যাকে চিন্তাবিদ বলা যায়? এমন তো কাউকে দেখি না।’

গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে রাজনৈতিক সহিংসতায় লাশ হয়েছেন দুই ডজন শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই এক দশকে খুন হয়েছেন ৮ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন; দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। এর একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি।

বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘‘বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি সেটা তো শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে না, সবক্ষেত্রেই। আর যদি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হয় তাহলে তো কথাই নেই। এটা তো একটা দিক, এর বাইরে রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কারণ যে সরকার ক্ষমতায় আসে তার দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মূলত এসব ঘটনায় জড়িত হয়ে পড়ে। এসব কারণে দেখা যায়, এ হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশের বিচার হয় না। রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না।”

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলিতে সাত খুনের ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা সেটিই প্রথম বলে ধরা হয়। এ ঘটনার চার বছর পর শফিউল আলম প্রধানসহ অন্যান্য অভিযুক্তরা আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তারা মুক্তি পান। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই৷ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এখানে খুন হয়েছেন অন্তত ৭৪ জন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ জন খুন হয়েছেন। ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই পরে গোলাগুলির মাঝে পড়ে নিহত হন বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। এ ঘটনার ১৭ বছর পার হলেও পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত মুকি ও টগরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদের গ্রেফতারে পুলিশের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটা বিষয়, এর পাশাপাশি আসলে যেটা দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা। কারণ তারা তাদের ছাত্রসংগঠনকে কি অবস্থায় দেখতে চান? সেটা এখন গুরুত্বপূর্ণ৷ আর আমাদের সুশীল সমাজের একটা অংশ এই সুযোগে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলছেন/ এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাজনীতিবিদ তৈরীর যে ক্ষীণ বাতিটা এখনও জ্বলছে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে সেটাও নিভে যাবে।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button