আলোচিতরাজনীতি

প্যারোলই খালেদার মুক্তির একমাত্র পথ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে আলোচনা। তিনি ‘বিদেশ যেতে চান’, বিএনপি নেতাদের এমন কথার উত্তরে অবশ্য আওয়ামী লীগ নিয়েছে অনেকটাই শীতল অবস্থান।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। মুক্তি পেলে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, বলেও আওয়ামী লীগকে জানান তিনি। কিন্তু জামিন, নাকি প্যারোল, এমন দোটানাতে রয়েছেন খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার দেখে আসার পর হারুনুর রশীদ বলেছিলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ রয়েছে, এগুলোর জন্য উনার অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দরকার। এটার জন্য বিদেশে তার চিকিৎসার দরকার। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বাস্তবিকই উনার জামিন পাওয়ার যে নৈতিক অধিকার, এই জামিনের অধিকার থেকে তাকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।”

জামিন পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন কি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চান? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব রশীদ বলেছিলেন, ‘‘উনি চিকিৎসার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশ যাবেন।”

কিন্তু জামিন বিষয়ে কোনো আলোচনায় যাওয়ার পথ নেই, এমনটাই বোঝা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে৷ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাকে কি বলেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি।

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনী বিষয়, জেলে থাকার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আইনা প্রক্রিয়ায় বা আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারা বিএনপির দায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগেরও কিছু করার নেই বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

তবে প্যারোল হতে পারে খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য মুক্তির পথ। আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে তারা (বিএনপি) আবেদন করেছেন। সেটা শুনানির জন্যও ওঠেনি৷ ফলে এই মুহুর্তে প্যারোলে ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির অন্য কোন পথ খোলা নেই।”

বিএনপি যদি প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে সরকার ইতিবাচকভাবেই তা দেখবে বলেও জানান রেজাউল করিম।

শনিবার সঙ্গে আলাপকালে অবশ্য সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সেই অবস্থান থেকে একটু সরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জামিন পাওয়া উনার (খালেদা জিয়া) অধিকার। জামিন পেলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন দেশে না বিদেশে চিকিৎসা করাবেন। উনি তো আপোস করার নেত্রী না। কোন আপোস তিনি মুক্তি চান না। রাজনৈতিক কারণে তাকে বন্দী রাখা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবেই তার মুক্তি হতে হবে।”

তবে আপোসহীনতার কথা বললেও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি শোনা গেলো না হারুনুর রশীদের মুখে। বরং ‘সরকারের কোন শর্তে আপনারা রাজি হবেন কি-না’, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘সরকার তো এখনো কোন শর্ত দেয়নি, দিলে দেখা যাবে।”

খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর তো প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷ অবশ্য শেষ পর্যন্ত দেখা না করেই তাকে ফেরত আসতে হয়৷ সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসুন। তাহলে উনিই মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।”

সরকার যাতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধীতা না করেন, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান বিএনপির এ সংসদ সদস্য। তবে এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস মিলেছে কিনা জানতে চাইলে এমপি হারুন বলেন, ‘‘না, তারা এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দু’টি মামলায় (জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) জামিন পেলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে তার আইনজীবীদের ভাষ্য। এ দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আবেদন আপিল বিভাগে এবং দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া ৭ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আবেদন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button