আলোচিত

নজরদারিতে যুবলীগের ২৫ নেতা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সম্প্রতি চলমান ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান আরো জোরদার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্যাসিনোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার হতে পারে আরো কয়েকজন রাঘববোয়াল। এরই মধ্যে ২৫ জন যুবলীগ নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে যুবলীগ উত্তরের ১২ এবং বাকিরা দক্ষিণের নেতা। ‘সবুজ সংকেত’ পেলে যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটও নজরদারিতে আছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করে সমকাল।

প্রসঙ্গত, ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবারের পর থেকে কাকরাইলের কার্যালয়ে কার্যত ‘বন্দি’ আছেন রাজধানী যুবলীগ দক্ষিণের এই সভাপতি।

এরই মধ্যে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। তারা অনেক তথ্য দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ব্যাপারে মুখ খুলছেন না।

শামীম জানান, একজন সাবেক মন্ত্রীর ছেলেকে ম্যানেজ করে বহু ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ বাবদ তাকে মোটা অঙ্কের কমিশন দিয়েছেন তিনি।

দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্য মতে, মতিঝিল, আরামবাগ, রমনা, পল্টন ও পুরান ঢাকায় ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নজরদারিতে রয়েছেন যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, জসীম উদ্দিন, মনির, খায়রুল ও রানা। এছাড়া উত্তরার শ্রমিক লীগ নেতা কাজী জাকারিয়া, যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আরো কয়েকজনের ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে।

যুবলীগ নেতা মনার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি সম্রাটের বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত। তিনি একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে যুবলীগে ভেড়েন তিনি। আরমান একসময় সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় লাগেজ আনার ব্যবসা করতেন। ওই সময় সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর ঢাকায় ক্যাসিনোর কারবার খুলে বসেন। তার ‘গুরু’ সম্রাট।

এছাড়া নজরদারিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান। যুবলীগের কার্যালয়ে পিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সম্পাদক হয়েছেন তিনি। অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আনিসুর। যুবলীগের কমিটির ‘কেনাবাচা’র সঙ্গে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া যুবলীগ নেতা মতিঝিলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ নেতার জাকির হোসেনের ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি আনোয়ার ইকবাল সান্টুর ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, ওয়াসা, রাজউক, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ ভবনের ঠিকাদারিতে তার প্রভাব রয়েছে। আরেক যুবলীগ নেতা গাজী সরোয়ার বাবুর ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি কমিশন দিয়েই ঠিকাদারি কাজ পেতেন। এ ক্ষেত্রে শুধু গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই-ই নন, আরো কয়েকজনকে নিয়মিত ঘুষ দিতেন তিনি। মোটা কমিশনের বিনিময়ে একচ্ছত্রভাবে কাজ পেতে তাকে প্রকৌশলীরা সহায়তা করতেন। কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে গেলে তাদের সব খরচ তিনিই বহন করতেন। এছাড়া গণপূর্ত থেকে যারা অবসরে যেতেন, তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতেন। ঠিকাদারি কাজ পেতে সাবেক এসব কর্মকর্তাকেও ব্যবহার করতেন তিনি। তবে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, যুবলীগ নেতা সম্রাট তাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। কোনো চাপে পড়ে তারা পিছপা হবেন না। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। সম্রাট তার এলাকার একাধিক কাউন্সিলর ও অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। অনেককে অভয়ও দিচ্ছেন তিনি।

গোয়েন্দারা বলছেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্রাটসহ সন্দেহভাজনের নামে-বেনামে সম্পদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। গ্রেপ্তার খালেদ ও শামীমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।

সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর তার মালিকানাধীন জিকেবি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার হিসেবে তার স্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ সংক্রান্ত চিঠি পায়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জিকেবির মালিকানা পরিবর্তন-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাইনি। এনবিআর তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান তো একজনের ওপর নির্ভরশীল নয়। অন্যরা হয়তো প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেবেন। তবে যদি সরকারি প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন হয়, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ও নেপালি জুয়াড়িদের যারা পালাতে সহায়তা করেছে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া নেপালি নাগরিক ছাড়াও মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা মো. মাছুমকে খোঁজা হচ্ছে। তার মাধ্যমে বাসা ভাড়া নিয়েছিল ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত নেপালিরা।

তবে গোয়েন্দারা বলছেন, ক্যাসিনোর কারণে নামিদামি ক্লাবগুলো ইমেজ সংকটে পড়েছে। যেসব ক্লাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তা আদালতের অনুমতি নিয়ে খুলে দেয়া হবে। তবে সেখানে শুধু স্বাভাবিক বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকবে। কোনো ধরনের জুয়া ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বসতে দেয়া হবে না।

জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনো বিস্তারে নেপালের নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমারকে কাজে লাগান যুবলীগের কয়েক নেতা। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে দীনেশ, রাজকুমার, বিনোদ মানালি ক্যাসিনো চালাতেন। যুবলীগ নেতা আরমান ও খোরশেদ ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে প্রতিদিন তাদের চাঁদার ভাগ নিতেন। কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও অজয় পাকরাল। ক্লাবের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজের তত্ত্বাবধানে সেখানে ক্যাসিনো চলত। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন নেপালি নাগরিক হিলমি। সেখান থেকে সরকারদলীয় এক নেতা দিনে পাঁচ লাখ টাকা করে চাঁদা তুলতেন।

আরো জানা গেছে, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ছিল মহিউদ্দীন মাহির নিয়ন্ত্রণে। দিলকুশা ক্লাবে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন নেপালের ছোট রাজকুমার। সেখান থেকে আরমান প্রতিদিন চার লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন। আরামবাগ ক্লাবে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ। ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন তিন লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন সাঈদ। ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণে ছিল খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার হাতে। কমলাপুর আইসিডির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চীন থেকে অবৈধভাবে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আনেন তিনি।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Získejte skvělé tipy, triky a recepty na našem webu o lifestylových návodech, vaření a užitečných článcích o zahradničení. Učíme vás, jak si užít každodenní život plně a efektivně! Zůstaňte s námi a objevte nové způsoby, jak vylepšit svůj život. 5 užitečných zvyků Japonců, které jim pomáhají žít Jak vařit těstoviny s vepřovým tukem" - Výhody recyklace ořechových skořápek pro výrobu cenného hnojiva Lahodný a výživný recept na kuřecí polévku k obědu Největší mýty o fermentovaných potravinách a kyselých okurkách, kterému všichni Ne písek, ale sůl: Cínidlo na náledí 5 chyb při výrobě tvarohových koláčů: Proč pokrm Jak správně uklidit dům, když je někdo Trhané maso: zajímavý recept na výdatný pokrm Sladká pochoutka může být jedovatá: Způsobuje přibírání na Lepší než v obchodě: jak chuťně nasolit Perfektní pečení pro zaneprázdněné hospodyňky: recept od Liny Charlotty Vložte tyto 8 dovedností do svého každodenního života Je možné instalovat kamna na dřevo v bytě? Příprava 6 potravin, které neobsahují téměř žádné kalorie: Jak správně vařit ovesnou kaši: Kuchař odhalil Vepřové koleno pečené v troubě - lahodný Perfektní snídaně, která pomůže zhubnout mužům i Jak udělat borsč: jasné červený triky šéfkuchaře pro hostesky Jak vařit Vánoční rolky na pánvi Cvičení a make-up: Co se stane s vaší pletí, když Tipy a triky pro kuchyni, zahradu a zdravý životní styl: Objevte nové recepty, lifestylové hacky a užitečné články pro svou zahradu na našem webu.