ক্লাব চলে জুয়ার টাকায় এটা সবাই জানে: ওসি মতিঝিল
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হঠাৎ করেই জানা গেল ঢাকায় ৬০টির মতো ক্যাসিনো আছে। আর তার নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতারা। অভিযানও হলো। এই ক্যাসিনোগুলো তো আর রাতারাতি গজিয়ে ওঠেনি। তাই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ আর সাংবাদিকরা তাহলে কি করেছেন?
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে বুধবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে র্যাব, পুলিশ নয়। তারা অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবসহ চারটি ক্লাব সিল করে দিয়েছে। আর খালেদকে আটক করেছে অভিযান শুরুর আগে তার গুলশানের বাসা থেকে। চারটি ক্লাবের মধ্যে একটি বনানীর ‘গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ’৷ আর বাকিগুলো মতিঝিল থানা এলাকায় এবং থানার কয়েকশ’ গজের মধ্যে। ফকিরেরপুলের- ‘ইয়ংমেন্স ক্লাব’, গুলিস্তানের ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র’ এবং আরামবাগের ‘ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব’ ৷
র্যাব অভিযান চালালো পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি জানতে চাইলে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ওমর ফারুক বলেন,‘‘মতিঝিল এলাকা ক্লাব পাড়া, এখানে জুয়া খেলা হয় আমরা জানি। এটা সবাই জানে। ক্লাব চলে জুয়ার টাকায়। ক্যাসিনো-ম্যাসিনো কী আমি বুঝি না। ক্যাসিনোর খবর আমাদের জানা নেই।”
জুয়া বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘জুয়া অবৈধ৷ তারপরওতো চলে।” তবে তিনি দাবী করেন, ‘‘পুলিশও মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। আবার কয়েকদিন পর শুরু হয়।”
অভিযান চালালে কোনো চাপ আসে কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘না চাপ নাই।”
আর বনানীর ‘গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গে ওই জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন,‘‘এই এলাকায় একটিই ক্যাসিনো ছিলো। আমরা এটাকে ১৬ অক্টোবরই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিই। র্যাব বুধবার রাতে গিয়ে সিল করে দিয়েছে। আমরাই আগে বন্ধ করেছি৷”এই ক্যাসিনো ক্লাবটি দুই বছর ধরে চলে আসছিলো।
নানা সূত্রে কথা বলে জানা গেছে আগে ঢাকায় এই ক্যাসিনো জুয়ার মূল নিয়ন্ত্রক ছিলো ধানমন্ডি এলকার একটি ক্লাব। আর গুলশানে একটি বাণিজ্যিক এন্টারটেইনমেন্ট ক্লাবেও ক্যাসিনো চালু হয় কয়েক বছর আগে। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ধানমন্ডির ওই ক্লাবটিতে জুয়া খেলতে গিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি এবং খালেদ মাহমুদ সিংগাপুরের ক্যাসিনোতে গিয়েও জুয়া খেলতেন। তিন বছর আগে তারাই ঢাকায় এই ক্যাসিনোর বিস্তৃতি ঘটায়। এর প্রধান কেন্দ্র হয় মতিঝিল, গুলশান ও বনানী এলাকা৷ ওইসব এলাকার ক্লাবগুলোতে তারা প্রভাব বিস্তার করে ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করে। তবে এর উপরে আরো প্রভাবশালী নেতা আছেন যারা নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক। এই ক্যাসিনো ব্যবসার টাকা ঠিকমত ভাগ করার জন্য যুবলীগে একজন ক্যাশিয়ারও আছেন। এই ক্যাসিনো ব্যবসা যুবলীগের একটি চেইনের মাধ্যমে চলে। এটাই যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে অনেকের আয়ের উৎস। এটার জন্য তারা থানা পুলিশ থেকে শুরু করে সব সেক্টরকেই ম্যানেজ করে চলেন।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে এইসব ক্যাসিনো নিয়ে সংবাদ মাধ্যম কি পর্যাপ্ত প্রতিবেদন করেছে। খোজঁ নিয়ে জানাগেছে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা এবং অনলাইন ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ছবিসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন হয়েছে। কিন্তু সেটা খুব বেশি নয়।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক জানান,‘‘২০১৭ সালে আমি এই ক্যাসিনো নিয়ে ফুটেজ এবং বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠান তা প্রচার করতে দেয়নি।”
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদ দীপু সারোয়ার বলেন, ‘‘অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো নিয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া আগেই অনেক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সে তুলনায় ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় রিপোর্ট কম হয়েছে। জুয়ার আসরগুলো নিয়ে ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় আরও অনেক কিছু করার ছিলো।”
আর বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন,‘‘২০১৬ সাল থেকেই এই ক্যাসিনো নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। তিনি নিজের পত্রিকাসহ আরো কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনের তারিখ উল্লেখ করে বলেন পুলিশের দায়িত্ব ছিলো ব্যবস্থা নেয়ার। কিন্তু তারা নেয়নি। ক্যাসিনোর নানা সরঞ্জামতো আমদানি করা হয়েছে। এগুলো কিভাবে আমদানি করা হলো?”
সূত্র: ডয়চে ভেলে