ইতিহাস-ঐতিহ্যশিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য স্যার এ এফ রহমান

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভাইস চ্যান্সেলরের পদ। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, মনন, বিদ্যাবুদ্ধি, চাল-চলন, বচনবাচন, প্রশাসনিক বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতার ওপর নির্ভর করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীরা সবসময় প্রভাবিত হন তাদের ভাইস চ্যান্সেলরের কর্মকাণ্ড দ্বারা। প্রথম যে চারজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন, তার মধ্যে দুজন ছিলেন ব্রিটিশ আর দুজন স্বদেশী তথা বাঙালি। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল ও গুণী শিক্ষাবিদ। প্রথম উপাচার্য স্যার পি জে হার্টগ (০১.১২.১৯২০—৩১.১২.১৯২৫), দ্বিতীয় উপাচার্য প্রফেসর জি এইচ ল্যাংলি (০১.০১.১৯২৬—৩০.০৬.১৯৩৪), তৃতীয় উপাচার্য স্যার এ এফ রহমান (০১.০৭.১৯৩৪—৩১.১২.১৯৩৬), চতুর্থ উপাচার্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার (০১.০১.১৯৩৭—৩০.০৬.১৯৪২)।

১৯২৭ সালে পুনরায় বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এফ রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯২৮ সালে তার ইস্তফা কার্যকর হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নানা অবদানের মূল্যায়ন করে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এফ রহমানকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ১৯৩৪ সালে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। এফ রহমান হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য। এফ রহমান ছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অন্তঃপ্রাণ একজন অভিভাবক। আগের ন্যায় সমান আবেগ আর ভালোবাসা নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। সেকথা উল্লেখ করে এফ রহমানের পরবর্তী উপাচার্য রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন—

Mr. Rahman left the University as the Provost of the Muslim Hall and Reader of history, but returned a few years later as its Vice-Chancellor. The fact that he owed this post to the selection by his old Colleagues shows the great hold he had over them even long after he had left the University, As Vice-Chancellor he gave evidence of the same zeal for service and loyalty to the high ideals of the University which distin-guished him in his earlier career, Although he was the head of the institution, he maintained the same cordial relations with his old Colleagues. His urbanity and polite manners endeared him to all and made him a popular figure in Dacca. He was a perfect gentleman in every sense of the word and was highly respected as such.১

সহকর্মী শিক্ষকদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে এফ রহমান যে কতটা সজাগ ও যত্নশীল ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি উপাচার্য হওয়ার পর ইংরেজ সেনাসদস্যদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের একটি ঘটনায়। ঘটনাটির সূত্রপাত এফ রহমানের আগের উপাচার্য জি এইচ ল্যাংলির সময়ে। জানা যায়, উপাচার্য ল্যাংলি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বি. সি. প্রান্সকে ১২ জানুয়ারি বিস্তারিতভাবে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন সময় বিশেষভাবে সন্ধ্যার পর ও রাতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীদের আবাসস্থলে সেনাসদস্যদের সন্দেহমূলক চলাফেরা ও তাদের শয়নকক্ষে উঁকি দেয়া ইত্যাদি বিষয় জনমনে সাধারণভাবে সন্দেহ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী এমনকি ছাত্রীবৃন্দ সেনাবাহিনীর অশোভন আচরণ সম্পর্কে উপাচার্য ও প্রক্টরের নিকট লিখিতভাবে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানিয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; অন্যদিকে ছাত্রীবৃন্দ ক্লাসের সময় পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছে। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা বি. সি. প্রান্স যথাযথভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে পুলিশি তত্পরতা তথা টহল ও পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম হন। এর ফলে এক বছরেরও বেশি সময়কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেনাসদস্যদের অশোভন আচরণ তেমন লক্ষ করা যায়নি।

কিন্তু সেখানেই এই ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। ১৯৩৪ সালের ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিমল রায় উপাচার্যকে ঢাকায় অবস্থানরত ইংরেজ সেনাবাহিনীর অপর একটি শাখার সৈনিকদের উগ্র আচরণ নিয়ে পত্র দেন। পরিমল রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে বকশীবাজারে সপরিবারে অবস্থান করতেন। তিনি উপাচার্যকে জানান, ২১ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি যখন তার বাসভবনের বাইরে ছিলেন তখন নরফোকশায়ার রেজিমেন্টের দুজন সৈন্য তার বাসস্থানের নিকট ঘোরাফেরা করছিল। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে মনে করে তিনি উপাচার্যের নিকট স্থান ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত অবস্থার অবসান ঘটাতে সমর্থ হন। কিন্তু সেনাসদস্যদের অশোভন ও অশালীন আচরণ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি। ইংরেজ সেনাসদস্যরা মাঝে মধ্যেই ঢাকা হলের নিকটে অবস্থিত ছাত্রী নিবাসের নিকট রাতে ঘোরাফেরা প্রায় অব্যাহত রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাদের উদ্বিগ্নতার তথ্য সেনাবাহিনীকে জানায়। ইংরেজ সেনাবাহিনী নিজেদের নৈপুণ্যের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে, যা ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্কের সৃষ্টি করত। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরিবর্তন ঘটে। উপাচার্য জর্জ হ্যারি ল্যাংলি অবসর গ্রহণ করেন এবং নতুন উপাচার্য হিসেবে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক স্যার আহমেদ ফজলুর রহমান তার কার্যকাল শুরু করেন।

১৯৩৪ সালের নভেম্বর মাসে ইংরেজ সেনাবাহিনীর অশোভনমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানান উপাচার্য আহমেদ ফজলুর রহমান। বস্তুত, ইংরেজ উপাচার্য জর্জ হ্যারি ল্যাংলির তুলনায় এক্ষেত্রে বাঙালি আহমেদ ফজলুর রহমান ছিলেন অনেক বেশি সোচ্চার ও শক্তিশালী। তিনি ইংরেজ সেনাধ্যক্ষকে এসব ঘটনার কারণ দর্শানোর ব্যবস্থা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আহমেদ ফজলুর রহমান ছিলেন অবিতর্কিত ব্যক্তিত্ব এবং শ্রেণীকক্ষে পাঠদান, সহকর্মী শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দের নিকট তিনি ছিলেন অতিকাঙ্ক্ষিত প্রাণপুরুষ। ইংরেজ সেনাবাহিনীর অশোভন আচরণের প্রতিবাদে উপাচার্য আহমেদ ফজলুর রহমানের তত্পরতায় ইংরেজ সেনাবাহিনীর তত্কালীন প্রধান তথা নবম ঝানসি পদাতিক ব্রিগেডের স্টাফ ক্যাপ্টেন এএইচ শ্লেলিং এই ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হন। ক্যাপ্টেন এএইচ শ্লেলিং উপাচার্য আহমেদ ফজলুর রহমানকে জানান যে ঢাকা হল ও সন্নিহিত ছাত্রী নিবাস এলাকায় সৈন্যদের চলাচলের ওপর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং এসব তথ্য বেডফোর্ডশায়ার ও হার্টফোর্ডশায়ার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।২

এর মধ্যে আরেকটি সমস্যা হাজির হয়। জানা যায় বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক পি বি জুন্নারকরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্থান ১৮ নং বাংলোতে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্য প্রবেশ করলে তিনি রেগে যান এবং এর প্রতিবাদ জানিয়ে এএইচ শ্লেলিংকে পত্র দেন। ইতোমধ্যে ইংরেজ সৈন্যরা ১৮ নং বাংলোর কাছে খোলা প্রশস্ত মাঠে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। খেলার সময় বল খুঁজতে গিয়ে তারা শিক্ষকের বাসার এলাকায় চলে আসতেন। এ সময় পি বি জুন্নারকর উপাচার্য এফ রহমানকে পত্র দিয়ে ঘটনা জানিয়ে প্রতিকার নেয়ার অনুরোধ করেন।৩ কারণ বল খোঁজার অজুহাতে সৈন্যরা ঘরের অভ্যন্তরে উঁকি দিত। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের প্রাণপ্রিয় উপাচার্য আহমেদ ফজলুর রহমান এই বিষয়টির গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। উপাচার্যের অনুরোধে ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ব্যক্তিগতভাবে সেনাবাহিনীর ক্রিকেট খেলার স্থান ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে উপাচার্যকে জানান যে এই খেলার মাঠে উঁচু জাল বিস্তার করে দিলে কোনোভাবেই ক্রিকেট বল শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করবে না। অন্যদিকে সৈন্যবাহিনীর সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় যথেচ্ছ গমনাগমনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা শিগগিরই কার্যকর করা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাদি গ্রহণ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

উপাচার্য হিসেবে এফ রহমান শুধু শিক্ষকদের নিরাপত্তা নয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে সমান সজাগ এবং দায়িত্বশীল ছিলেন। এরই মধ্যে একটা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে ১৯৩৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে। এ সময় রাতে কয়েকবার ছাত্রী নিবাসে অকস্মাৎ কে বা কারা টর্চের আলো ফেলে। এই ঘটনায় ছাত্রীবৃন্দ ভয় পায়। ঘটনাটি বিবৃত করে ছাত্রী নিবাসের সুপারিনটেনডেন্ট লাবণ্য সেন ঢাকা হলের প্রাধ্যক্ষকে লেখেন: গত রাতে ২ বার Torch ফেলিয়া ছিল। প্রথমবার রাত্রি ৮টা। দ্বিতীয়বার রাত্রি ১টা। সে সময় মশারির মধ্যে ফেলাতে ২ মেয়ে ভয় পেয়ে নিচে চলে আসে। যাহা হয় প্রতিবিধান করিবেন।৪

ছাত্রী নিবাসের এই ঘটনায় উপাচার্য আহমেদ ফজলুর রহমান প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ঢাকার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট খান বাহাদুর আবদুল খালেককে জানান যে ছাত্রী নিবাসে অবস্থানরত ছাত্রীবৃন্দ ও তাদের সুপারিনটেনডেন্ট খুবই ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত। উপাচার্য সন্দেহ প্রকাশ করেন যে এই ঘটনা ছাত্রী নিবাসের সন্নিকটে অবস্থিত কিংকরদের বাসস্থানের কোনো বদমাশ লোকের দুষ্কর্ম। উপাচার্য পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টকে ঘটনাটি জানিয়ে ছাত্রী নিবাসের নিরাপত্তা আরো জোরদার করার অনুরোধ জানান। কিন্তু পরে জানা যায় টর্চের আলো পুলিশই নিক্ষেপ করেছিল, তবে কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে নয়। পুলিশ বাহিনীর টহল দেয়ার সময় সংগত কারণেই দল পরিবর্তন করা হয়, যা রুটিনমাফিক কাজ। দল পরিবর্তনের সময় পুলিশ বাহিনী টর্চের আলো ফেলে সবকিছু ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে এবং স্থান ত্যাগের সময় টর্চের আলো ফেলে। এরই ফলে কোনো অসতর্ক মুহূর্তে ছাত্রী নিবাসে টর্চের আলো পড়ে। ঢাকায় পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর উপাচার্যের সমীপে উপস্থিত হয়ে এই পরিস্থিতির বর্ণনা করেন এবং উপাচার্য পুলিশের বক্তব্য ঢাকা হলের আবাসিক শিক্ষক নির্মলচন্দ্র পালকে জানিয়ে আশ্বস্ত করেন।

উপাচার্যরূপে এফ রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ছিলেন। হূদয়ের ভালোবাসা এবং অসাধারণ দক্ষতায় তিনি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতেন—একথা উল্লেখ করে অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার গুহ লিখেছেন,

When Mr Rahman came back to the University as its first Indian Vice-Chancellor he demonstrated a broad-minded Indian’s capacity to win the esteem and confidence of all communities by holding the administrative balance perfectly even in complete disregard of all considerations of caste or creed. His tenure of office as the Head of the University brought out, even more strikingly than before, his great qualities of head and heart, unfailing courtesy and tact, keen sense of justice and the refinement and liberality of genuine culture. Whenever there was a communal dispute his magic touch eased the situation and led to an immediate restoration of friendly feelings.৫

বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সর্বত্রই এফ রহমান একজন গ্রহণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গঠনে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রমেশচন্দ্র মজুমদার তার আত্মজীবনীতে লেখেন—

বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। আমার পূর্ববর্তী ভাইস-চ্যান্সেলর ফজলুর রহমান সাহেব এ বিষয়ে একজন আদর্শ ছিলেন বললেও চলে। সাম্প্রদায়িক কোনো ভাব মনে একেবারেই নেই, এ রকম তার মতো আর দ্বিতীয় কোনো মুসলমান আমি দেখিনি। অনেকটা তার প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল।৬

১৯৩৪ সালে উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার পর এফ রহমান বাংলার ইতিহাস লেখার কাজে গুরুত্ব দেন। এজন্য তিনি একটি কমিটিও গঠন করেন। এফ রহমানের গঠিত এ কমিটিতে বেশ কয়েকজন বিদগ্ধ গবেষক ও পণ্ডিত ছিলেন। তারা হলেন রমেশচন্দ্র মজুমদার, কালিকারঞ্জন কানুনগো, নলিনীকান্ত ভট্টশালী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই ইতিহাস লেখার ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দেয়। পরে অবশ্য এর জন্য চাঁদাও সংগ্রহ করা হয়েছিল। উপাচার্য রহমান তার দায়িত্বকালে নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এসবের লক্ষ্য ছিল বিশ্বমানের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা। যে প্রতিষ্ঠানকে সকল মানুষ শ্রদ্ধার সাথে দেখবে। এখান থেকে এমন গ্র্যাজুয়েটরা বের হবে, যারা একটি উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ১৯৩৪ সালের সমাবর্তনে এই প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করে এফ রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন—

অত্যন্ত মর্যাদার সাথে শিক্ষাজীবন সমাপনান্তে তোমাদের ডিগ্রি প্রাপ্তির এই শুভক্ষণে আমিও তোমাদের সাথে আনন্দ প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের এক বড় গণ্ডির জীবনে তোমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আর এ পথ পাড়ি দিতে হবে তোমাদের অর্জিত সাহস, স্থিরতা ও অদম্য মানসিকতা দিয়ে। আমরা সকলেই আজ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি; নতুন নতুন চিন্তা আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে আসছে; কঠিন অবস্থাকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হয়, ঘৃণা দিয়ে নয়। তোমাদের ওপরই দেশ গড়ার প্রকৃত দায়িত্ব; ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক ক্ষেত্রে তোমরাই হবে সেতুবন্ধের কারিগর। ঘৃণা করার সংস্কৃতি সর্বত্র পরিহার করতে হবে। এসব কথা মামুলি মনে হতে পারে; কিন্তু নিজেদের জীবনে যদি তোমরা তা প্রয়োগ করো, তাহলে জীবন হবে সমৃদ্ধ ও আনন্দময়।৭

১৯৩৪ সালের সমাবর্তনে প্রথমবারের মতো একজন বাঙালি উপাচার্য এফ রহমান ভাষণ দেন। তখন চ্যান্সেলর ছিলেন জন উডহেড, যিনি একজন ইংরেজ ব্যক্তি। এই সমাবর্তনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন। এফ রহমান তার ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চ্যান্সেলর ও গভর্নর এন্ডারসনের প্রাণনাশের অপপ্রয়াস বিফল হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং পূর্ববর্তী উপাচার্য জি এইচ ল্যাংলি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে সংযুক্ত থেকে দর্শনের শিক্ষকরূপে, ঢাকা হলের প্রাধ্যক্ষরূপে সেবা দিয়েছেন, সেকথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে ধন্যবাদ জানান। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও বেগম শামসুন্নেছা খানম সাহেবা (খান বাহাদুর নাজিমউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক অনুদানের কথা উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন। নারী শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি উল্লেখপূর্বক বলেন, ১৯২২-২৩ সালে ২৩ জন থেকে বেড়ে ১৯৩৪ সালে তা ৩৭ জনে পৌঁছেছে।

১৯৩৫ সালের সমাবর্তনে উপাচার্য ও আচার্যরূপে ভাষণ দেন যথাক্রমে এফ রহমান ও জন এন্ডারসন। এফ রহমান তার ভাষণে ইংল্যান্ডের রাজা ও রানীর ২৫ বছর রাজত্বকাল পূর্তি হওয়ায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে মি. শাহাবুদ্দিনের পুনর্নিয়োগে তাকে স্বাগত জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আর্থিক খাতের স্বল্পতা নিয়ে সবাইকে অবহিত করেন। গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে উপাচার্য রহমান বলেন—

আজ যারা ডিগ্রি ও পুরস্কার গ্রহণ করছে তাদের সকলকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তোমাদের অনেকেই জীবনের প্রয়োজনে এই শিক্ষায়তন ছেড়ে যাবে এবং নানা কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হবে, আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি তোমরা তোমাদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দ্বারা অতিক্রম করতে সমর্থ হবে। আমি তোমাদের বিশেষভাবে বলব যে জীবনযুদ্ধে কখনই হতাশ হবে না, মাঝে মাঝে অসফলও হতে পারো কিন্তু থেমে যাবে না। কারণ অসফলতা অনেকের জীবনেই আসতে পারে এবং এটি হলো আত্মার মহৎ অভিজ্ঞতাবিশেষ, কারণ আত্মা এভাবেই এগিয়ে যায় আর বিকশিত হয় আধ্যাত্মিকতা। আর এর দ্বারা আমি বলতে চাইছি যে সফলতা ও অসফলতা দুটোকেই নিয়ে চলতে হবে।৮

১৯৩৫ সালের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জন এন্ডারসন তার ভাষণে এফ রহমানের বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিযুক্তিতে আনন্দ প্রকাশ করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,

এফ রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর আচার্য হিসেবে এটিই আমার প্রথম সুযোগ তাকে নিয়ে সকলের সাথে কাজ করার এবং তাই প্রথমেই আমি তাকে স্বাগত জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন জানাই একজন কৃতী ব্যক্তিকে উপাচার্যরূপে পাওয়ায়। মি. রহমান প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পদে আসীন হলেন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি সম্মানজনক অধ্যায়। আমার বিশ্বাস আগামীতে মি. রহমানের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমা ছাড়িয়ে অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়বে।৯

১৯৩৬ সালের সমাবর্তনে উপাচার্য এফ রহমান, আচার্য জন এন্ডারসন এবং সমাবর্তন অতিথিরূপে স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার ভাষণ প্রদান করেন। উপাচার্য তার ভাষণে সম্রাট পঞ্চম জর্জের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেন, পাশাপাশি সম্রাট অষ্টম এডওয়ার্ডের জীবননাশের চেষ্টার নিন্দা জানান। এই সমাবর্তনে এফ রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আব্দুর রহিম, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার যদুনাথ সরকার, স্যার মোহাম্মদ ইকবাল ও শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের কথা অবহিত করেন। এছাড়া এই সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক History of Bengal প্রকাশের সিদ্ধান্ত অনুমোদন এবং এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার জন্য জনসাধারণ ও সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে কী দিশায় চলা প্রয়োজন তার উল্লেখ করতে গিয়ে উপাচার্য এফ রহমান বলেন,

You will agree with me that many of the ills from which we suffer to-day are due to the absence of understanding and agreement about the end of our politics. We tend to become wholly occupied with the form of institutions- with votes, elections, separate representation – and forget the purpose for which politics exists. What is required of you, from educated men, is, that the underlying ideas of politics should be stated free from Prejudice and outworn terminology and a sufficient number of men should arrive at an agreement about the aims. With the possibility of agreement about the aims, our politics would be raised to a higher level. All the agreement is about words; and terms and phrases like ‘Capital’, ‘Labour’, ‘Socialism’, ‘Communalism’ provide the armaments of political conflict and keep men apart. The realities that underlie them are ignored. The duty of all of us is first of all to put ourselves right and then help democracy; that is help others to use their minds so as to end the unconsciousness in which they pass their lives and become fully conscious of their natures and power. It is in this sphere that your education is of value of to you – the education that develops the latent consciousness in you. It has been rightly said ‘True democracy is not an external Government but an inward rule.’১০

উপাচার্য রহমান তার দায়িত্বে থাকাকালীনই সরকারের দ্বারা ভারতীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তার এ নতুন নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্ষতি হিসেবে সকলের নিকট প্রতিভাত হয়। অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার গুহের লেখায়ও পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে প্রস্থানের সময়ে সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং উপাচার্যের নিজের কী রকম অনুভূতি হয়েছিল,

এফ রহমানকে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালেই সরকার তাকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যুক্ত করে আর এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উপাচার্য অধ্যায় সমাপ্ত হয়। তবে এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র এটা অনুভূত হয় যে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্ষতিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাগণ যেসব বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে তাতে এ কথাই বারবার উচ্চারিত হয়। শিক্ষকরা উপাচার্য এফ রহমানকে বিদায় জানানোর সময় তাকে স্মারকচিহ্নস্বরূপ একটি স্বর্ণের তৈরি সিগারেট রাখার বাক্স দেয়। এ উপহার পেয়ে তিনি তার অনুপম ভঙ্গিতে রসবোধ সহকারে বলেন, ‘আমার সহকর্মীরা এর চাইতে ভালো আর কোনো উপহার আমার জন্য খুঁজে পায়নি! যাহোক এ উপহার দিনে অন্তত ৫০ বার তাদের স্মৃতি আমায় মনে করিয়ে দিবে।’১১

এফ রহমানের পর তারই বন্ধু, সহকর্মী রমেশচন্দ্র মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৭ সালে এ এফ রহমানের স্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘ডক্টর অব ল’ উপাধি দিয়ে সম্মান জানায়। সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে উপাচার্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার অভিভাষণে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী অধ্যাপক রহমানের অতুলনীয় অবদানের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন।

তথ্যসূত্র

১. Salimullah Muslim Hall Magazine, p. 11

২. I am directed to thank you for your letter No. 6860 dated 15th November and to state that it is regretted that men have been walking through the demesne of the Dacca Hall. The officer commanding the 1st Battalion, the Bedfordshire and Hertfordshire Regiment has been asked to draw the attention of his men to the fact that this is forbidden. The Brigade dogshooter has been directed not to trespass within the precincts of the Dacca Hall. The fact that he did so was. I am sure you will agree, probably due to an excess zeal. It could be appreciated if you could assure the Provost of the Dacca hall that it will not occur again within his area and that, elsewhere, there will be no ‘indiscriminate firing’ and that special precautions are taken to avoid any unfortunate accidents.

[দ্রষ্টব্য: রতনলাল চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রন্থিত ইতিহাস, পৃ. ৫৯]

৩. I deeply regret, I have to write you again in this connection but the soldiers jump of the wall and still continue to disturb us. There has been no improvement in this situation since I wrote to you last. I do not think, even a European lady will tolerate strangers loitering about the privy and the bathroom. Fankly the present position is absolutely intolerable. Wherever cricket is played with any regard for decency and safety, an open field is always selected at some distance from the habitation. A cricket ball driven with force is certainly not a joke. A flower pot was broken and a rose plant was badly injured during the last week. And a child may well be injured. [দ্রষ্টব্য: রতনলাল চক্রবর্তী, পূর্বোক্ত]

৪. It has been brought to my notice that in the evenings (sic) torch lights are flushed on the Woman Students’ Residence, Bungalow No. 7, in the University area. This has agitated both the lady Superintendent and the girl boarders of the house. Sometimes the torches are flashed earlier in the evening and sometimes very late at night. We are unable to say who is responsible for this, but we suspect that it is the work of some Budmashes who probably live in the servants’ Quarters in the next house, namely, the house that belonged to the inspector of schools. I shall be very greatly obliged if you would kindly see your way to offer some protection to the Residence in question. [দ্রষ্টব্য: রতনলাল চক্রবর্তী, পূর্বোক্ত]

৫. Salimullah Muslim Hall Magazine, p. 57

৬. রমেশচন্দ্র মজুমদার, জীবনের স্মৃতিদীপে, পৃ. ১০০

৭. Dacca University The Convocation Speeches, Vol. 1, 1923-1946, p. 230

৮. পূর্বোক্ত, পৃ. ২৫২

৯. পূর্বোক্ত, পৃ. ২৫৫

১০. পূর্বোক্ত, পৃ. ২৭১

১১. Salimullah Muslim Hall Magazine, p. 57-58

আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন: ডিন, কলা অনুষদ এবং চেয়ারম্যান, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মিলটন কুমার দেব: সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[কথাপ্রকাশ প্রকাশিত, লেখকদ্বয় রচিত স্যার এ এফ রহমান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য (২০২১) গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়টি লেখক ও প্রকাশকের অনুমতিক্রমে এখানে সংকলিত হয়েছে]

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button