আলোচিতরাজনীতিসারাদেশ

নীতিহীন রাজনীতির ফাঁদে ‘এমপি লীগ’ই শেষকথা ত্যাগীরা কোণঠাসা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজশাহীতে এখন ‘এমপি লীগ’ই শেষকথা। আদর্শের রাজনীতি বলতে কিছু নেই। যারা যতক্ষণ এমপির স্বার্থ হাসিলসহ মন জুগিয়ে চলতে পারবে, ততক্ষণ তারাই এমপির ডান হাত। তাদের হাতেই থাকে সবকিছু। যে কোনো বিষয়ে তারা যেটি বলে, সেটিই সিদ্ধান্ত। প্রশাসনও তাদের সমীহ করে চলে।

প্রতিটি সংসদীয় আসনে শাসক দল আওয়ামী লীগে সদর-অন্দরের এমন চিত্র ধরা দিয়েছে অনুসন্ধানে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিশেষ কিছু ব্যক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত এক যুগে সরকারদলীয় দলে এমন দুরবস্থার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে।

এই যখন অবস্থা, তখন আওয়ামী শিবিরে চাপা অসন্তোষের পালে প্রতিবাদের জোরালো বাতাস বেশ জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সাহস করে কথা বলছেন। ফাঁস করে দিচ্ছেন সব গুমোর। অনেকে আবার কৌশলী। হেনস্তা হওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে চান না। তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নানা বঞ্চনা আর ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন-কীভাবে তাদের চোখের সামনে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহাসিক বড় দল থেকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ পালিয়ে গেল, ক্ষমতার অপরাজনীতির কাছে হেরে গেল আদর্শের রাজনীতি।

আশার আলোর বাতিঘরগুলো নিভু নিভু প্রায়। চারিদিকে জেঁকে বসেছে হাইব্রিড। তোষামোদকারীদের জয়জয়কার। যুগান্তরের কাছে তারা এমন ভাষায় তুলে ধরেছেন সেসব কষ্টের কথা।

তবে আশার কথা, এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্ল্যাটফরমে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করছেন। চাইছেন কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয় দলের এই দুর্বৃত্তায়নের বৃত্ত ভাঙতে কঠোর হবেন। বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে থাকবেন, মূল্যায়ন করবেন।

সূত্রগুলো জানায়, টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের আদর্শিক রাজনীতি প্রায় উধাও। এই এক যুগে দলের দুর্দিনের সঙ্গী ত্যাগী নেতাকর্মীদের বড় অংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তেমনইভাবে হাইব্রিডদের অনেকেই সেসব পদ-পদবিতে আসীন। জেলার প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় এখন সংগঠন চলছে এক ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর। যাকে সবাই নাম দিয়েছেন ‘এমপি লীগ’।

এমপিরা ভবিষ্যতে ক্ষমতার রাজনীতির রোডম্যাপ ঠিকঠাক রাখতে বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চান না। বরং রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রে রূপ দিতে যে যার মতো আস্থাভাজনদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব শক্তির নিশ্ছিদ্র বলয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বহাল এই নিখুঁত কারুকাজ। ত্যাগীদের ত্যাগ করে বসিয়ে দিচ্ছেন নিজের ধ্বজাধারীদের।

এ সুবাদে বিতর্কিতরাও এমপিদের আশীর্বাদে যেখানে-সেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে শক্ত আস্তানা গেড়ে বসছেন। কেউ কেউ মনোনয়ন পেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন।

এসব নিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাবলু মুখ খোলেন। রাখঢাক না রেখে খোলাখুলি তুলে ধরেন বাস্তব চিত্র।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতি রাজশাহীতে এখন ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। সংসদ সদস্যরা এলাকায় নিজের মতো করে দল চালান। যারা কেবল শুধু হুজুর হুজুর করতে পারেন; পদপদবি, সুযোগ-সুবিধা তারাই লুটছেন। ত্যাগীরা উপেক্ষিত। দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। জেলা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে সংসদ সদস্যরা প্রায়ই থাকেন না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘এমপি সাহেবরা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন ও কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে হয়তো তারা জেলা কমিটির কর্মসূচিতে থাকতে পারেন না। সংসদ সদস্যরা জেলা কমিটির সদস্য। তাদেরকে ডাকা হয়। কিন্তু আসতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে দলকে শক্তিশালী করতে হলে পদবঞ্চিতদের মান-অভিমান ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। এটা অব্যাহত থাকলে তা দলের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ চলে মূলত এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুগত দুই নেতার ইশারায়। তারা হলেন উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এলাকার সবাই তাদেরকে এমপির ডান ও বাম হাত বলে জানে। এমপির কাছে পৌঁছাতে নেতাকর্মীদের এই দুই নেতার কাছে ছুটতে হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বদি রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে উধাও দুই বছর। গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এমপি ফারুকের বিরাগভাজনে পরিণত হন। এ কারণে তাকে শেষ পর্যন্ত দলীয় পদও হারাতে হয়। অবশ্য এ ঘটনার আগে বদিউজ্জামানও এমপির ডান হাত বলে পরিচিত ছিলেন।

অপরদিকে উপজেলা যুবদলের সভাপতি রবিউল আলম দলে ভিড়েই রাতারাতি হিরো বনে যান। এমপির বদান্যতায় পেয়ে যান পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের টিকিট। এই আলমও একসময় এমপি ফারুকের দক্ষিণহস্ত ছিলেন। কিন্তু এমপির মতের বাইরে কিছু কাজ করায় তার নাম এমপির আস্থার খাতা থেকে বাদ পড়ে। এখন আবার এমপির কাছে ভিড়তে মরিয়া আলম।

আব্দুল মজিদ মাস্টার ছিলেন বিএনপির উপজেলা সভাপতি। সরকার দলীয় দলে যোগ দিয়েই কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। দলের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তবে এবার মনোনয়ন পাননি। এমপি ওমর ফারুকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই নেতার এখন বড়ই দুর্দিন।

এদিকে এমপির নিজস্ব বলয় তৈরির এ রকম বহু ঘটনা ও অঘটনের কারণে আওয়ামী লীগে দুর্দিনের কান্ডারি উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি রবু মিয়াসহ অনেক ত্যাগী নেতার এখন দলে কোনো পদ নেই। প্রাণপ্রিয় সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলেও তারা অনেকটা কোণঠাসা।

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনি আরেক উপজেলা তানোর। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন একসময় ছিলেন তার দুটি শক্তিশালী হাত। কিন্তু মধুর সে সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমপির সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এ কারণে রাব্বানী-মামুনকে আর দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হয় না।

এমপি ফারুক চৌধুরী তার চাচাতো ভাই বাবু চৌধুরীকে উপজেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেন। অবশ্য বর্তমানে এমপি ফারুক তার ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশীদ হায়দার ময়নার ওপর বেশি নির্ভরশীল। তাই তানোরে এমপির সব কাজ ময়নার হাতের কবজায়। দলের পুরোনো ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন নিষ্ক্রিয়। প্রবীণ নেতাদের কেউ এখন খোঁজও নেন না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘বদি কিংবা রাব্বানী-মামুনই বলেন-কারও সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। তারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করেন। সব সময় নৌকা ডুবাতে মরিয়া। আমি বাঁচাতে চাই। বিরোধ বলতে এটুকুই। এজন্য নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা দলীয় কর্মসূচিতে আসেন না।’

এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের কোনো বলয় নেই। যারা দলকে ভালোবাসেন, তারাই আমার সব। এছাড়া মনে রাখতে হবে, রাজশাহী আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য উর্বর এলাকা না। ভোটের রাজনীতির হিসাবনিকাশ মেলাতে সব সময় কিছু লোক অন্য দল থেকে যুক্ত হয়। সারা দেশেই একই চিত্র। যোগ্য মনে করলে রাজনৈতিক কারণেই তাদের দলে জায়গা দেওয়া হয়। সংগত কারণে রাজশাহীতেও কিছু নেতা অন্য দল থেকে এসেছেন। কেউ পদপদবিও পেয়েছেন। আবার কেউ পাননি।’

এদিকে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও দলীয় রাজনীতিতে কয়েকজনের ওপর নির্ভরশীল। দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকে তিনি প্রশ্রয় দেন না বলে তার যথেষ্ট সুনাম আছে এলাকায়। মন্ত্রী নিজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তবে বাঘায় মন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতদের স্থানীয়রা ‘চার খলিফা’ বলে নাম দিয়েছেন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু, অধ্যক্ষ নছিমুদ্দিন ও সদস্য মাসুদ রানা তিলু। আসল কথা হলো-এই চারজনের কথার বাইরে এখানে কিছুই হয় না।

আওয়ামী লীগের প্রথম সারির ত্যাগী নেতা বলে পরিচিত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্কাছ আলী এবং তার অনুসারীরা দলে এখন গুরুত্বহীন। এ কারণে তারা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় সময় পার করছেন।

অপরদিকে চারঘাটে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলামই দলের শেষকথা। তবে বাঘা-চারঘাট সংসদীয় আসনে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অথবা বিপক্ষের কোনো নেতাই যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

রাজশাহী-৩ সংসদীয় আসন পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। সরকারি দলের এমপি আয়েন উদ্দিন। তবে অভিযোগ আছে তিনি নিজস্ব ক্ষমতাবলয় দিয়ে এখানে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য।

গুরুতর অভিযোগ, সরকারি ও ব্যক্তিগত কয়েক শ বিঘা জমির কিছুটা কিনে বাকিটা নিয়েছেন দখল করে। এভাবে গড়ে তুলেছেন বিশাল মৎস্য খামার। মাঠের ভেতরে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। এসব কাজে সঙ্গী হাইব্রিড ও বিতর্কিতরা। যারা এখন এমপি আয়েন উদ্দিনের অতি আস্থাভাজন। নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি নিজের ভাইকে বানিয়েছেন ঘাসিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান। ভগ্নীপতি আব্দুস সালাম মোহনপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি। একেবারে নিখুঁত পরিবারতন্ত্র।

তবে এমপি আয়েন উদ্দিন সংগঠনের কোনো ধার ধারেন না। সাধারণ লোক তো দূরের কথা, হামলা-মামলার ভয়ে দলের পদধারী কোনো নেতাও আয়েনের অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

এসব অভিযোগের পুরোটাই অস্বীকার করেন এমডি আয়েন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি করেন। দলে যার যেমন অবদান, তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা হয়।’

তার দাবি, কেউ বিপক্ষে নেই, সব নেতাকর্মী তার পক্ষে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জমি কিনেই মৎস্য খামার গড়েছেন। যারা এসব বলছে সেগুলো নিছক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। বরং কেউ তার বিরুদ্ধে একটি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারবে না।

ওদিকে জেলার বাগমারায় বিরাট এক লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। বিভিন্ন দল থেকে লোক এনে তিনি নিজের মতো করে দল সাজিয়েছেন। সেখানে জামায়াত নেতাদেরও ঠাঁই দিতে ভুল করেননি। বলা যায়, একেবারে ‘রাজনীতির ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’। সেখানে সব দলকে পাওয়া যাবে।

২০০৯ সালে এমপি হওয়ার পর তিনি এলাকার রাজনীতিতে এমন অভূতপূর্ব মিলন ঘটিয়েছেন। নিজেই উপজেলা কমিটির সভাপতি। বিএনপি থেকে আসা মাসুদুর রহমান উপজেলা কমিটির আইন সম্পাদক। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির ক্যাডার আতাউর উপজেলা কমিটির সদস্য। জামায়াত নেতা হাফিজুর ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। জাপার লাঙ্গল নিয়ে ভোট করা মোজাম্মেল হক এখন আওয়ামী লীগের সদস্য। কুখ্যাত রাজাকার সাহেব আলির ছেলে আয়েন উদ্দিনও উপজেলা কমিটির সদস্য (!)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা বলেন, বাগমারার সংসদ সদস্য এনামুলের বদান্যতায় এখানে সর্বদলীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে কারও কিছু বলার নেই, করারও নেই। এটিই হলো বাস্তবতা।

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘উন্নয়ন আর ভোটের রাজনীতিতে দলকে এগিয়ে নিতে কিছু লোক অন্য দল থেকে এসে ভালো কাজ করছেন। দল লাভবান হয়েছে। দলের ত্যাগীদেরও সম্মান ও মূল্যায়ন করেছি। বিভক্তি বিভাজনের রাজনীতি বাগমারায় নেই। মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। বাগমারার মানুষ খুশি।’

রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান রাজনীতির বাইরের লোক। এখানকার চিত্র অন্য এলাকার ঠিক বিপরীত। পুঠিয়া দুর্গাপুরে এমপির কোনো রাজনীতি নেই। এই আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা এখন জেলা কমিটির সম্পাদক। সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপির যোগাযোগও প্রায় শূন্য। নেতাকর্মীরা সাবেক এমপি দারার নেতৃত্বে চলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ডা. মনসুর এমপির সঙ্গে দলের কেউ না থাকার কারণ তিনি কাউকে চেনেন না। চেষ্টাও করেন না। এমপি দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন না।

সাবেক এমপি দারা বলেন, ‘পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের নেতাকর্মীরা সংগঠিত। এমপি সাহেব তার মতো চলেন। ওসব নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। দলের নেতাকর্মীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন। আমি সাধ্যমতো দেখি।’

ডা. মনসুর রহমান এমপি বলেন, ‘আমি এলাকার উন্নয়নে মনোযোগী। রাজনীতির জটিল গর্তে আটকাতে চাই না।’ তার দাবি, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।

এদিকে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের সম্মেলনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল ঘটে। আগের কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদ পড়েন। ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এই দুই নেতার অনুসারীরা কেউ পদ পাননি। অন্যদিকে জেলা কমিটিতে ঢুকে পড়েন হাইব্রিডরা।

অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার অগ্রনায়ক ছিলেন জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। কিন্তু প্রকৃত আদর্শিক নেতা হওয়ায় অনেক অপ্রিয় সত্য বলে দেওয়াই তার কাল হয়েছে। হারাতে হয়েছে পদও। এসব কারণে তিনিসহ তার অনুসারীরা এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। এর ফলে মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে পড়েছে।

জেলা কমিটিতে পদবঞ্চিত হয়েছেন সাবেক কমিটির সহসভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা রবু মিয়া, মোকবুল হোসেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক হিরু মাস্টার। এই হিরু মাস্টার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ৩১ বার জেলে গেছেন। অবজ্ঞা আর বঞ্চনার কারণে সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মজিদ সরদারসহ শতাধিক একনিষ্ঠ নেতা এখন দল থেকে কার্যত ছিটকে পড়েছেন।

রাজশাহী-২ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো সংসদ সদস্য নেই। সরকারের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা এখানে এমপি। তবে অবাক বিষয় হলো-বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ খুবই সুসংগঠিত।

 

সূত্র: যুগান্তর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button