ইতিহাস-ঐতিহ্যধর্মমুক্তমত

মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

রুহিনা ফেরদৌস : পৃথিবীতে জেরুজালেমের মতো দ্বিতীয় আর কোনো শহর নেই, যেটি কিনা ধারাবাহিকভাবে বিশ্ব-সম্প্রদায়ের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম। বিশেষ করে এমন একটি শহর, যা একই সঙ্গে তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারী—ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ধর্মীয় কেন্দ্রিকতা যেমন শহরটিকে ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ভিত্তি বুননের নেপথ্যে কাজ করেছে, তেমনি আছে কিছু প্রতীকী প্রভাবও। তবে সবকিছুর মূলে রয়েছে মূলত শহরটির ধর্মীয় গুরুত্বই।

কোন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক অনুসারীদের জন্য জেরুজালেম সবচেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ? এমন জিজ্ঞাসার কোনো সহজ জবাব নেই। কারণ এক এক ধর্মের অনুসারী গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মানুষ শহরটির সঙ্গে তাদের যে অপার্থিব সম্পর্ক অনুভব করে তা পরিমাপের জন্য কোনো দাঁড়িপাল্লা নেই। কেননা অনুভবের বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক আর তা ভীষণভাবে বিষয়ভিত্তিকও।

মুসলমানরা, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ও আরবের মুসলিমরা জেরুজালেমের মুসলিম বৈশিষ্ট্য এবং এর ওপর মুসলমানদের অধিকারের ওপর জোর দেয়। মুসলমানরা মনে করেন শহরটির সঙ্গে তাদের সংযোগ ও সম্পর্ক মূলত তাদের ধর্মীয় ও নীতিগত বিষয়গুলোরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ধর্মীয় প্রাধান্য

গোটা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডসহ জেরুজালেমের বহুমাত্রিকতা সারা বিশ্বের মুসলমানদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্র। মুসলমানদের হূদয়ে জেরুজালেমের স্থান অনেক উঁচু ও গভীরে। তাদের কাছে এ যেন স্মৃতিজাগানিয়া আর পবিত্র অনুভূতিতে আচ্ছন্ন এক শহর। সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পরে এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম শহর হিসেবে বিবেচিত। এখানে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মেরাজ গমনের সঙ্গেও জুড়ে আছে জেরুজালেমের নাম। বিশেষ বাহন বোরাকে চড়ে সপ্তম আসমান ভ্রমণ করেন তিনি। যার উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআনেও। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন জেরুজালেমে অবস্থিত ডোম অব দ্য রক নামক জায়গাটি থেকে তিনি বোরাকে আরোহণ করেছিলেন।

মূলত তিনটি কারণে মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম গুরুত্বপূর্ণ। এক. এখানে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা। দুই. ইসলামের অন্যান্য পয়গম্বরদের সঙ্গেও এটি সম্পর্কযুক্ত। তৃতীয়ত, শহরটিকে রক্ষা করা মুসলমানরা তাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে, বিশেষ করে শুরু থেকেই বাইজেন্টাইন কিংবা পার্সিয়ানদের দখল থেকে জেরুজালেমকে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে কাজটি তারা করে আসছে।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) বাইজেন্টাইনদের কাছ থেকে জেরুজালেমকে অধিকার করেছিলেন। জেরুজালেম ত্যাগের আগে পবিত্র ডোম অব দ্য রকের কাছে প্রথম মসজিদ নির্মাণের কৃতিত্বও তার। তাছাড়া নবীর সাহাবিদের অনেকেই এখানে এসেছেন এবং অন্ততপক্ষে তাদের মধ্যে একজন এখানে সমাহিত হয়েছেন।

ইসলামের প্রাথমিক সময়কাল থেকে পরবর্তী ৫০ বছরে মুসলমান স্থাপত্যের নিদর্শন স্থাপনের মাধ্যমে জেরুজালেমকে মুসলমানরা তাদের পবিত্র ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। রোমানদের দেয়া নাম মিটিয়ে নতুন নামকরণ করা হয় বায়তুল মুকাদ্দাস (পবিত্র গৃহ)। তাছাড়া কখনো এটিকে বলা হতো বায়তুল মাকদিস কিংবা কখনো আল কুদস (পবিত্র শহর)। আর এখন এটিকে বলা হয় আল-কুদস-আশ-শরীফ (পবিত্র ও পুণ্যনগরী)।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় উভয় শাসনামলেই জেরুজালেমের ধর্মীয় তাৎপর্য ও বৈধতার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। উমাইয়াদের প্রথম খলিফা মুয়াবিয়া তার নিজস্ব রাজধানী দামেস্কের পরিবর্তে নিজেকে জেরুজালেমের খলিফা হিসেবে ঘোষণা দেন। মুয়াবিয়ার উত্তরসূরিরা জেরুজালেমকে কার্যত তাদের ধর্মীয় রাজধানীতে পরিণত করেছিল। এদিকে আব্বাসীয় খলিফাদের কাছেও অনুরূপ শ্রদ্ধার পুণ্যভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে জেরুজালেম। মামলুক ও অটোমান থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে সব মুসলিম শাসকদের কাছেও সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ শহর হয়ে ওঠে এটি।

ইতিহাসের আলোকে বলা যায় জেরুজালেম মুসলমানদের অন্যতম তীর্থস্থান। একাধারে প্রার্থনা, অধ্যয়ন আর বসবাসের স্থানও। বিশেষ করে আল আকসা মসজিদ ছিল জ্ঞানপীঠ। বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসলিম পণ্ডিতরা জেরুজালেমে এসেছেন।

ক্রুসেডের আধিপত্যের ১০৩ বছর ছাড়া মুসলমানরা সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি (৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ) থেকে তেরো শতক ধরে জেরুজালেম অধিকারে রাখেন। সময়ের সঙ্গে কিছু ঘটনার মাধ্যমে মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জেরুজালেম। মুসলমান শাসন ও তাদের আধিপত্য ইউরোপের অবশিষ্ট অঞ্চলের খ্রিস্টান শাসকদের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর পটভূমিতে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের ডাক দেয়া হয়। অ-খ্রিস্টান, মুসলমান ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত খ্রিস্টানদের ধর্মীয় যুদ্ধ ক্রুসেড ফিলিস্তিনি ও আরব মুসলিমদের চরমভাবে কোণঠাসা করে। ১০৯৯ শতকে ক্রুসেডে জেরুজালেম মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেলে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ক্রুসেডে জেরুজালেমের অ-খ্রস্টানদের নিশ্চিহ্ন করা হয়, তাদের সম্পত্তি লুঠ করা হয়, দখল নেয়া হয় ঘরবাড়ির।

১১৮৭ শতকে মুসলিম নেতা সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে পুনরুদ্ধার হয় জেরুজালেম। সাড়ে পাঁচ শতাব্দী আগে খলিফা উমরের প্রথম জেরুজালেম অধিকারের পর ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনাটি বিরাট গুরুত্ব বহন করে। কাকতালীয় হলেও নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) মেরাজ যাত্রার বার্ষিকীতে সালাহউদ্দিনের জেরুজালেমে প্রবেশের ঘটনাকে মুসলমানেরা আল্লাহর ইচ্ছা হিসেবেই মনে করেন। জেরুজালেমে বর্তমান ইসরায়েলি দখলকে (১৯৬৭ সাল থেকে) ফিলিস্তিনি এবং অনেক মুসলমান ক্রুসেডের সমপর্যায় হিসেবে দেখেন।

ফিলিস্তিনিদের কাছে জেরুজালেম

সৌদি আরবের শেখ আবদ-আল-আজিজ বিন বাজ ছিলেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইসলামী পণ্ডিত এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যাটি প্রথমত ও শেষ পর্যন্ত একটি ইসলামিক সমস্যা আর তাই জমিটি এর মূল মালিকানায় ফিরে না আসা পর্যন্ত মুসলমানদের ইহুদিদের বিরুদ্ধে একটি ইসলামিক জিহাদে লড়াই করতে হবে।’

মুসলমান ও ইসলামপন্থীদের পাশাপাশি ধর্মীয় বৈধতা বৃদ্ধিতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক শাসক আর সরকারগুলোর কাছেও জেরুজালেম বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ফিলিস্তিনে মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ও পিএলওর (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) প্রয়াত চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত জেরুজালেমকে ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী’ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন। আল আকসা মসজিদের অবস্থান এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মেরাজ যাত্রার স্থানকে আরাফাত তার আলোচনার ধ্রুবক অংশ হিসেবে উল্লেখ করতেন। আরাফাত সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন ফিলিস্তিনি জনগণ এবং ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থীদের প্রতি জেরুজালেমের কেন্দ্রিকতা সম্পর্কেও।

হামাসের সনদে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিন শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত মুসলিম প্রজন্মের জন্য ইসলামিক সম্পত্তি (ওয়াকফ)। তাই পবিত্র এ ভূমিটিকে ত্যাগ করা, এমনকি এর কিছু অংশ ছেড়ে দেয়া কিংবা আংশিক পরাজয় মেনে নেয়াটাও সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া বর্তমান সময় থেকে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত মুসলিম প্রজন্মের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কার আছে?’

১৯৫০ সালে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বাকি অংশগুলো জর্ডানের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পরে হাশেমীয় সরকার এ শহর এবং পবিত্র স্থানগুলোর বিশেষ যত্ন নিয়েছিলেন। ইসরায়েলের দখল ও শহরটি অবরোধের পরবর্তীও জর্ডান জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা চালু রাখে। তবে সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদের জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রচেষ্টা একসময় জর্ডানের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। জর্ডানের বাদশাহ হুসেন তার শাসনামলে সৌদি বাদশাহ ওই প্রয়াসকে জর্ডানের দিকে ছুড়ে দেয়া উসকানি হিসেবেই আমলে নেয়। জেরুজালেমকে ঘিরে কর্তৃত্বারোপের এ প্রতিযোগিতাটি মূলত ঐতিহাসিকভাবে হাশেমীয় ও সৌদি পরিবারের মধ্যে গভীরে প্রথিত অবিশ্বাসের বুনিয়াদ থেকে উদ্ভূত।

বিপরীতে আল আকসা মসজিদটি সংস্কারের জন্য মরক্কোর বাদশা হাসানের অনুদান কিন্তু জর্ডানের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে আসেনি। বাদশা হাসান জর্ডানের সঙ্গে জেরুজালেমের বিশেষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে আগ্রহী ছিলেন না। কাজের মাধ্যমে তিনি মূলত তার জনগণকে এটা স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে জেরুজালেম রয়েছে তার হূদয় ও মনজুড়ে।

মিসরের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল সাদাতও নিজের দেশের পাশাপাশি আরব আর মুসলমানদের কাছে জেরুজালেমের ধর্মীয় ও প্রতীকী গুরুত্বের বিষয়ে সচেতন ছিলেন। তাই ১৯৭৭ সালে রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রশমিত করার উদ্দেশে ইসরায়েল সফরে যেয়ে তিনি আল আকসা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেছিলেন। ১৯৮০ সালে মুসলিম উগ্রপন্থীদের হাতে খুন হন সাদাত। ধারণা করা হয় ইহুদিদের থেকে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে মিসর-ইসরায়েলের শান্তি চুক্তিতে জেরুজালেম ইস্যুটির দিকে নজর না দেয়া বা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিপরীতে চালেঞ্জ ছুড়ে না দেয়ার কারণগুলো তাকে হত্যার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।

জেরুজালেম ঘিরে ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো মুসলিম মৌলবাদের অনুভূতিকে বারবার উসকে দিয়েছে। ১৯৬৭ সালের লড়াই পরবর্তী পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও ‘ইউনাইটেড সিটি’ হিসেবে দেয়া বিবৃতি ফিলিস্তিনি ও আরব ইসলামপন্থীদের ক্রোধ ও অসন্তোষে ভরিয়ে দেয়। তাছাড়া তখন শহরটি দখলের পরপরই ইসরায়েল মাগরিবা এলাকাকে ধ্বংসের পাশাপাশি এখানে বসবাসরত আরব বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে। শুধু মাগরিবা এলাকা নয়, ইহুদিরা ওই সময় আল বারাক ও আল-আফদালি নামে দুটো মসজিদও গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। ১৯৬৮ সালের আল আকসা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়, সে ঘটনায় মসজিদের আসবাবসহ কয়েক পাশের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন লাগার ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিল ইসরায়েল—এমন দাবি মুসলমানদের। শুধু এ ঘটনাটি নয়, আল আকসা মসজিদে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়েছে বারবার। যেমন ১৯৮০ সালের মার্চে এখান থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। দুই বছর পর ১৯৮২ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলের এক সৈন্য ডোম অব দ্য রকে আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে দুজন ফিলিস্তিনি নাগরিককে। আহত হয় ৪৪ জন বেসামরিক লোক। ১৯৮৩ সালের মার্চে ইসরায়েলের ৪৬ জনের একটি দল ভয়াবহ বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে এসে আল আকসা মসজিদের নিচে পুতে রাখে। মসজিদের পাহারাদারের নজরে পড়ে বিষয়টি। চরমপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীগুলো মুসলমানদের পবিত্র স্থানগুলোয় তাদের দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের একটি উগ্রবাদী দল টেম্পেল মাউন্ট ফেইথফুলের সদস্যরা বারাবার আল হারাম শরীফে প্রবেশের চেষ্টা করছে, উদ্দেশ্যে এখানে ইহুদিদের বহু প্রতীক্ষিত থার্ড টেম্পল নির্মাণ। ১৯৯০ সালের ৮ অক্টোবরে চরমপন্থী এ দলটি আল হারামে প্রবেশের চেষ্টা করলে পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি এককাট্টা হয়ে তাদের প্রতিহত করে। ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি সেনা ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ২১ জন ফিলিস্তিনি মারা যায় ও আহত হয় ১৫০ জন। তাই ফিলিস্তিনি ও আরবরা জেরুজালেম ঘিরে ইসরায়েলের বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ ও খননকাজগুলোকে মোটেই উদ্দেশ্যহীন কর্মকাণ্ড হিসেবে মনে করে না, বরং তারা মনে করে ইসরায়েল শহরটিকে তাদের মতো করে পুনর্নির্মাণ করতে চায়।

জেরুজালেমকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়

জেরুজালেম ফিলিস্তিনের লড়াইয়ের অংশ, যা ১৯১৭ সালের বেলফোর ডিক্লারেশন ও পরবর্তী সময়ে ১৯২২ সালে ব্রিটিশ মেন্ডেটের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনার অধীনে যখন জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রস্তাব দেয়া হয়, তখন আরবের মুসলমান ও ইহুদিরা তা প্রত্যাখ্যান করে। মুসলমানদের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যানের কারণ হচ্ছে তারা মনে করে, জেরুজালেম সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পদ। জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে আরব ও ইহুদি রাষ্ট্র গঠন এবং জেরুজালেম শহরের জন্য বিশেষ আন্তর্জাতিক শাসন চালুর সুপারিশ করা হয়।

জেরুজালেমকে ঘিরে একচ্ছত্র দাবির বিষয়টি পবিত্র লিপিতে লিপিবদ্ধ থাকার কারণে শহরটি ঘিরে সৃষ্ট সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান কঠিন। জেরুজালেম সমস্যার স্থায়ী সমাধান যেমন ফিলিস্তিনের প্রশ্নের সমাধানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তেমন ঠিক উল্টোটাও। তবে জেরুজালেম ইস্যুকে সমাধান না করে ফিলিস্তিন প্রশ্নের স্থায়ী সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলিদের মধ্যে শান্তি তৈরির পথে জেরুজালেম অন্যতম প্রধান কারণ। তাছাড়া ইসরায়েলের চূড়ান্ত রাজধানী হিসেবে ‘ইউনাইটেড জেরুজালেম’-এর জোর দাবি ক্রমেই জটিল করে তুলেছে দুই পক্ষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য চুক্তি প্রচেষ্টাকেও। এভাবে জেরুজালেম ঘিরে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র বিরোধ জারি রয়েছে। তাছাড়া জেরুজালেম ঘিরে আরব-ইসরায়েল শান্তির বিষয়টি ফিলিস্তিনি ও আরব ইসলামপন্থীরা কীভাবে দেখছেন তার ওপরও নির্ভরশীল। তবে ফিলিস্তিনি, আরবদের হাতে যদি জেরুজালেম ও এর মুসলিম ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণ না দেয়া হয়, তবে তা মুসলমানদের অসন্তোষ, আন্দোলন আর লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক হয়ে থাকবে।

জিয়াদ আবু-ওমরের দ্য সিগনিফিকেন্স অব জেরুজালেম: আ মুসলিম পার্সপেকটিভ শীর্ষক নিবন্ধ ও টাইম ম্যাগাজিন অবলম্বনে

রুহিনা ফেরদৌস: সাংবাদিক ও লেখক

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button