আলোচিতসারাদেশ

হেফাজতের হরতাল: হামলা, সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হেফাজতের হরতালে রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পৌর এলাকায় ওই দুই জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী৷ তবে পুলিশ বলেছে তাদের কাছে এধরনের কোনো খবর নেই।

হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, বাস-ট্রেনে হামলা এবং আগুন দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেনে এবং বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছে৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কয়েকটি মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে, বন্ধ আঠে রেল যোগাযোগ।

পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবির সাথে সরকার সমর্থক হরতাল বিরোধীরাও মাঠে আছে৷ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ অব্যাহত আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ট্রেন ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনার পর সিলেট, নোয়াখালী চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে। চট্টগ্রামগামী সোনারবাংলা এক্সপ্রেসে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই ঘটনায় ১০ জন যাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী জানান যে সকাল ১০টার পর থেকে এই হামলা ও ভাঙচুর ঘটনা শুরু হয়। তারা ৩০ টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা ও আগুন দিয়েছে। প্রেসক্লাব, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত অ্যাকাডেমি এবং একটি মন্দিরেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘‘হামলার সময় শহরে পুলিশ, র‌্যাব বা বিজিবিকে তেমন প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি।”

চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিকেলে আমি পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পৌর এলাকায় দুইজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছি। তাদের একজনের নাম আল-আমীন এবং আরেকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, তারা নিহত হওয়ার খবর শুনেছেন।

তবে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, ‘‘কতগুলো স্থাপনায় আগুন ও হামলা হয়েছে সে হিসাব এখনো আমরা পাইনি। কোনো হতাহতের খবরও জানা নাই৷ আমরা জনগণের জানমাল রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।”

টানা তিন দিনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে বিরোধিতায় এই সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। এর আগে শুক্র ও শনিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোট ছয়জন নিহত হয়েছে। আর চট্টগ্রামে পাঁচজন।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে মিশরাইল পর্যন্ত অবরোধের কারণে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে সকাল থেকে। ওই এলাকায় পুলিশ-বিজিবির সাথে হেফাজত কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গাড়িতে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে তারা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেয়। পুলিশের সাথে সরকার সমর্থকরাও মাঠে আছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ওইসব এলাকায় পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছুড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক আমির হোসাইন স্মিথ জানান, সকাল থেকেই হেফাজতের কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। আরও ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থকদের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে দুইবার বৈঠকও হয়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত থাকেনি। হরতাল সমর্থকরা ৩০টির মত গাড়িতে ভাঙচুর করেছে। এখন বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কোনো হতাহতের খবর এখনো আমরা পাইনি।”

হেফাজতে ইসলামের অর্থ সম্পাদক মনির হোসাইন কাসেমি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধকারীদের সঙ্গে আছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হেলমেট বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে। সেই কারণেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে। প্রায় অর্ধশত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা-মাওয়া রোডের কুচিয়ামরায় মধুপুরের পীর আবদুল হামিদ গুলিতে আহত হয়েছেন।”

এর বাইরে নোয়াখালীতে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবরোধ অব্যাহত আছে।

হেফাজতে ইসলামের মুখপাত্র ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করছে। গুলি চালাচ্ছে। আমরা হতাহতের অনেক খবর পাচ্ছি।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘‘যারা এই অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদের কঠোর হাতে দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই কাজে হেফাজতের সাথে জামায়াত, শিবির ও বিএনপিও যুক্ত হয়েছে।”

তবে তিনি পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, ‘‘মিডিয়া তাদের উসকে দিচ্ছে।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button