
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশের সাড়ে তের লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাইকেই পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত বছর যে পাবলিক পরীক্ষাটি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি, সেটির পরীক্ষা নেয়া ছাড়াই ফলাফল প্রকাশ করা হলো। সকালে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই ফল প্রকাশ করা হয়।
এভাবে ফল প্রকাশের জন্য অবশ্য কয়েকটি আইনও সংশোধন করতে হয়েছে সংসদে।
আগেই বলা হয়েছে, ফলাফল প্রকাশ করা হবে অনলাইনে, কোন শিক্ষার্থী যেন ফল আনতে স্কুলে না যায়।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এই ফল ঘোষণা করা হয়।
গণভবন থেকে এক অনাড়ম্বর ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে একটি বছর নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থায় ফল দিয়ে দেয়া হলো।
এর আগে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানেরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির হাতে এসএইচসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেন।
সব মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন।
গত বছরের এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এইচএসসি অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরীক্ষা না হওয়ার কারণে এই পরীক্ষার্থীদের একজনও অকৃতকার্য হননি।
এছাড়া গত বছর যারা এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও তাদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
মূলত, জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫% এবং এসএসসির ফলকে ৭৫% বিবেচনায় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হয়।
বিষয়ভিত্তিক গড় নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করায় এবার কোনও বিষয় বাদ দেওয়া বা নম্বর কমিয়ে মূল্যায়ন করা হয়নি।
এবারে মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ১১.৮৩%।
এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৩ জন শিক্ষার্থী আছেন যারা জেএসসি ও এসএসসি দুটি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ না পেলেও এইচএসসিতে জিপিএ -৫ অর্জন করেছেন।
এরিমধ্যে অনলাইনেও ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সবাইকে বিনা পরীক্ষায় এভাবে পাশ করিয়ে দেয়াকে একটি ‘বিকল্প, কিন্তু ভাল বিকল্প নয়’ বলে মনে করেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা অধিকারকর্মী রাশেদা কে. চৌধুরী।
তিনি অবশ্য মনে করেন, এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। এখন স্বাস্থ্যঝুঁকি মাথায় রেখে পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছিল না, আবর অপেক্ষা করতে গেলে ছেলেমেয়েদের একটা বছর নষ্টও হয়ে যেত। পরে এটা নিয়ে জটিলতা বাড়তো বই কমতো না।
তাছাড়া সবাইকে পাশ করিয়ে দেয়া হলেও, শিক্ষার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে সবাইকেই প্রতিযোগীতা করেই যেতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মিসেস চৌধুরী। ফলে সবাই পাশ করে গেলেও প্রতিযোগীতা বা যোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার সুযোগ চলে যায়নি বলেও মনে করেন তিনি।
দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড মিলিয় মোট ১১টি বোর্ডে থেকে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল।
এই মূল্যায়ন ফলে দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফল প্রকাশের এই পদ্ধতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের যেন একটি বছর নষ্ট না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই বিকল্প পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করার কথা জানান তিনি।