আলোচিতশিক্ষাসারাদেশ

শিক্ষা কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসছে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিভাগ তুলে দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষাও হবে একবারই৷ ২০২২ সাল থেকে শিক্ষার এই কারিকুলাম চালু হবে।

এর আগে পুরো ব্যবস্থাটি চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন শিক্ষাবিদেরা। তবে ভালো শিক্ষক ছাড়া এই পরিবর্তনে কোন সুফল মিলবে না বলেই মনে করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘এই পরিবর্তনগুলো ইতিবাচক। আসলেই তো শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের ব্যাগের যে বোঝা এটা কমানো দরকার। পরীক্ষা একবারই হওয়া ভালো। তবে এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভালো শিক্ষকের সংকট৷ যে ব্যবস্থাই করা হোক না কেন, এর জন্য প্রথম দরকার ভালো শিক্ষক। আগে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই এই পরিবর্তন কাজে আসবে। এখন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রমানিত হল সরকারের আগে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ঠিক ছিল না।’’

নতুন যে পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেখানে দশম শ্রেণী শেষে ঐ শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ওপর প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা হবে, দু’টি মিলিয়ে হবে চূড়ান্ত ফল। আর তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শতভাগ শ্রেণী কে মূল্যায়ন হবে। পাঠদানের সময় ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ (শ্রেণীকে মূল্যায়ন) ও বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সামষ্টিক মূল্যায়নের’ ভিত্তিতে শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এরই মধ্যে বিষয়টি সংসদে তুলে আলোচনাও করেছেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় পরীক্ষা নিয়ে এমনই ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও দেশের শিক্ষাবিদদের মতামতের আলোকে পরীক্ষা নিয়ে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই রূপরেখা তৈরি করেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এটা করা হচ্ছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘এটা এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে দিয়েছিলাম। গত ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণ মানুষ মতামত দিয়েছেন৷ এখন তাদের সেই মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে আমরা সিলেবাস প্রণয়নের কাজ শুরু করব। ২০২২ সাল থেকেই এই কারিকুলাম অনুযায়ী লেখাপড়া হবে।’’

নতুন এই ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কী ইংলিশ মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়বে না? জানতে চাইলে অধ্যাপক সাহা বলেন, ‘‘এটা এখনই চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’’ তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই হবে না? কিভাবে মূল্যায়ন হবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শিশুদের জন্য কোন বই রাখব না। ক্লাস ওয়ানে একটি বই থাকবে, এরপর আস্তে আস্তে বাড়বে। যাতে শিশুরা বইয়ের বোঝার চাপে না পড়ে।’’ বর্তমান সরকারই তো আগের কারিকুলাম ও শিক্ষা পদ্ধতি ঠিক করেছিল। তাহলে কি সেই পদ্ধতি ঠিক ছিল না? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এটার সংস্কার করছি৷ বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনায় সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হয়। এখানে আনা হচ্ছে।’’

জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে সব শিক্ষার্থীকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১০টি বিষয় পড়তে হবে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। এছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়- জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিতে পুরোটাই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ২০২৫ সালে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আর একাদশ শ্রেণী শেষে ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্তরে ৩০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।

অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, ‘‘দশম শ্রেণী পর্যন্ত কোন বিভাগ না থাকাই ভালো৷ কারণ শিক্ষার্থীরা তখন তো ছোট থাকে, ফলে বুঝতে পারে না, কোন বিভাগে পড়বে৷ অভিভাবকরা তাদের উপর যে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন সেটাই তারা মেনে নিতে বাধ্য হন। এখন ইন্টারমিডিয়েটে গিয়ে বিভাগ নিতে হলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, তিনি কোন বিভাগে পড়বেন। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও হতাশাও অনেক কমে যাবে।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button