আলোচিত

দেশে শিশু পর্নোগ্রাফির থাবা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ২০১৪ সালের পর আরেকটি শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের সদস্যদের আটক করতে পেরেছে পুলিশ। আর সেই চক্রের কাছ থেকে ভয়ঙ্কর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এই চক্রের জাল দেশের বাইরেও বিস্তৃত।

সর্বশেষ ঢাকায় এই চক্রের আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন এবং অভি হোসেন তিনজনই বেসরকারি বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রায় আট মাস অনুসন্ধান চালিয়ে ১৫ অক্টোবর তাদের আটক করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তিনজনই এরই মধ্যে আদালতে তাদের অপরাধের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিটিটিসি জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে বোরহানের কম্পিউটার থেকে এ সংক্রান্ত ফাইল ও ছবি পেয়েছেন তারা। চক্রটি যে কৌশলে শিশুদের অনলাইনে পর্নোগ্রাফির ফাঁদে ফেলে তার টিউটোরিয়ালও পাওয়া গেছে তাদের কম্পিউটারে।

সিটিটিসি এই চক্রটির সন্ধান পায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বাইরে থেকে পাওয়া একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে। তারা যে পর্নো ছবি উদ্ধার করেছে তারমধ্যে অভিযোগকারীর ছবিও রয়েছে। হোয়্যাটস অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা এক পর্যায়ে তার পর্নো ছবি তুলে তা ‘ব্যবসার’ কাজে লাগায়।

সিটিটিসির সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ২০১৫ সাল থেকে তারা শিশুটিকে ব্ল্যাকমেইল করে অনেক ছবি তুলতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে তারা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে তার বাবা মায়ের সাথেও ওই ছবি শেয়ার করে৷ তারা ইনস্টাগ্রামে বেশ কয়েকটি ক্লায়েন্ট গ্রুপেও ছবি দেয়।

তিনি আরো জানান, তাদের কাছ থেকে ৩০ জিবি পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট উদ্ধার করা হয়। তাদের ক্লাউড এবং ড্রপ বক্সে স্টোরেজ আছে। আর কম্পিটারে ভিন্ন ভিন্ন নামে ৪৫টি ফোল্ডার পাওয়া গেছে। তাতে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশি মেয়েদের ভিকটিম হিসেবে ছবি আছে। আর তাদের কাছে যে ম্যানুয়ালটি পাওয়া গেছে তাতে মেয়েদের ফাঁদে ফেলার ১৫টি কৌশলের কথা বলা আছে।

তিনি জানান, ‘‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি এরকম আরো অনেক শিশু পর্নোগ্রাফির চক্র ঢাকায় সক্রিয়। আমরা আরো কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তাদের পেমেন্ট মেথডও জানতে পেরেছি৷ তারা ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করে।’’

এই গ্রুপটি ২০১৫ সাল থেকে এই অপরাধে যুক্ত। তারা কি পরিমাণ অর্থ আয় করেছে তাও অনুসন্ধানে বের হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘‘এখন আর শিশু পর্নোগ্রাফি সারফেস ওয়েবে হয়না। এর বাজার ডার্ক ওয়েবে। এটা মনিটর করার জন্য ডিপ এন্ড ডার্ক ওয়েব মনিটরিং প্লাটফর্ম আছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই প্লাটফর্মটি নেই। ফলে সরাসরি সেটা এখান থেকে মনিটর করা যায় না। তদন্ত বা অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু চক্র মাঝে মাঝে চিহ্নিত হয়।’’

তবে তিনি সাধারণ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলেন, ‘‘কিছু চক্র আছে যারা শিশুদের নিয়ে নানা ধরনের কাজ করার নামে শিশু পর্নোগ্রাফিতে যুক্ত। কারা এই শিশু পর্নোগ্রাফির অবৈধ বাজারটি এখন সবচেয়ে লাভজনক।’’

তার মতে, ‘‘ভালো করে তদন্ত করলে দেশীয় চক্রের সাথে যুক্ত আন্তর্জাতিক চক্রটিও চিহ্নিত করা সম্ভব।’’

তবে ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘‘সিটিটিসি এখন ডার্ক ওয়েব মনিটরিং-এ সক্ষম। এ নিয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’’

অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু সাইবার অপরাধের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতাই যথেষ্ঠ নয়। এব্যাপারে অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর সরাসরি পর্নো তৈরিতে অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের টার্গেট করা হয়। সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। একই কথা বলেন ইশতিয়াক আহমেদ। তার মতে, অভিভাকদের উচিত হবে তাদের সন্তানদের ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক করা এবং তাদেরও সতর্ক থাকা। কারণ শিশুরা এখন সব ধরনের অনলাইন ডিভাইস ব্যবহার করছে।

২০১৪ সালে ঢাকায় একই রকম আরেকটি চক্রকে আটক করে সিআইডি। ওই চক্রটি শিশুদের নিয়ে এসে সরাসরি পর্নো তৈরি করত। টিপু কিবরিয়া নামে একজন কথিত শিশু সাহিত্যিক ও তার তিন সহযোগীকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়। তারা খিলগাঁও এর একটি স্টুডিওতে শিশুদের নিয়ে গিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি করত৷ তাদের এসব ছবির ক্রেতা জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের৷ ওই অভিযুক্তেরা এখন কারাগারে।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button