
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মেজর (অব.) সিনহা হত্যার জেরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের আরো এক হাজার ৩০৯ জন কর্মকর্তা ও সদস্যকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। আগে এসপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘‘আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। ভালো কিছু করতে চাই।’’
এবার যাদের বদলি করা হলো তাদের মধ্যে আছেন এসআই, এএসআই এবং কনেস্টবল। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৩৪০ জনকে বদলি করা হয়েছে বলে ডিআইজি জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজারে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ শীর্ষ ৮ কর্মকর্তা, ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শক, ১৫৮ জন এসআই, ৯২ জন এএসআই, ১০৫৫ জন নায়েক ও কনস্টেবল। তাদের সবাইকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে বদলি করা হয়েছে।
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও এসআই লিয়াকত সিনহা হত্যায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়৷ বুধবার কক্সবাজারে নতুন এসপি হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৭ শীর্ষ কর্মকর্তাকে। আর বৃহস্পতিবার রাতে ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শককে বদলি করা হয়৷ ওই সব পদে নতুন কর্মর্তাদের কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন। অন্যরা দুই-একদিনের মধ্যেই যোগ দেবেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘কক্সবাজার পুলিশকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আমরা চাই এখানকার পুলিশ যাতে সুন্দরভাবে কাজ করে। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হকে। আইনের বাইরে যারা যাবেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
‘‘যারা নতুন যোগ দিচ্ছেন তাদের পেশাদারিত্ব ও সততার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। আগে অনেকেই এখানে ঘুরে ঘুরে থাকতেন। আমরা তার প্রমাণও পেয়েছি,’’ জানান ডিআইজি।
জানা গেছে, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ। আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পর্যায়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর চাইছে পুরনো পুলিশ সদস্যদের কোনো ছায়াও যেন কক্সবাজারে না থাকে। বিশেষ করে টেকনাফের অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘ক্রসফয়ার বাণিজ্য’, ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে। সেই সব অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে।
মেজর (অব.) সিনহা হত্যার তদন্ত:
৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ‘‘এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ তাদের মধ্যে ১২ জন স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখনো তদন্তের কাজ চলছে৷ আমরা আশা করি, যথাসময়ে চার্জশিট দিতে পারবো। এই মামলায় সব আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’’ অবশ্য এই মামলার প্রধান আসামিদের একজন ওসি প্রদীপ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
এদিকে মেজর (অব.) সিনহার বোন শারমীন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তবে তদন্তের এই পর্যায়ে আমাদের খুব সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা তখনই সন্তুষ্ট হবো, যখন সিনহা হত্যার বিচার পাব।’’ কক্সবাজারের তখনকার এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন নথিভূক্ত করে বলেছেন এটা তদন্ত কর্মকর্তার এখতিয়ার। তিনি চাইলে আসামি করতে পারেন। আমরা তো আর তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করতে পারি না। তিনি কী করেন দেখি। তারপর তো আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।’’
সূত্র: ডয়চে ভেলে