ভুয়া রিপোর্টে কি বিশ্বে একঘরে হবে বাংলাদেশ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বুধবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান বাংলাদেশের ১২৫ যাত্রী নিয়ে ইতালির রোমে অবতরণ করেছিল। কিন্তু ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতীর্ণ করা বিমানের ১২৫ যাত্রীর একজনকেও নামতে দেওয়া হয়নি। বরং ঐ বিমানটিকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কাতার এয়ারওয়েজের এই বিমানটি সেই ১২৫ জন যাত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। এর আগেও বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে গিয়েছিল আরো কিছু যাত্রী, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করে ১২ জন যাত্রীর দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ থেকে সকল ধরণের যাত্রীদের প্রবেশ ৭ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ইতালি সরকার। বৃহস্পতিবার সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। রাতে এ সংক্রান্ত নোটাম (নোটিস টু এয়ারম্যান) জারি করেছে ইতালি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে , যে ১২ জন যাত্রীদের করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল, তাঁরা সবাই বাংলাদেশ থেকে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলেন। নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার পর ইতালিতে করা পরীক্ষায় তাঁদের পজিটিভ আসে এবং এর ফলে ইতালিতে বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু ইতালি নয়, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াও বাংলাদেশিদের তাঁদের দেশে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের মধ্যে এই ভূয়া রিপোর্ট নিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে।
প্রথমে জিকেজি নামক একটি প্রতিষ্ঠান, যাঁদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্রেপ্তার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। জিকেজির রেশ কাটতে না কাটতেই রিজেন্ট হাসপাতালে হাজার-হাজার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে র্যাবের অভিযানে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করোনা রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আন্তজার্তিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ বিশ্বের যেকোন দেশে যেতে হলে এখন করোনা পরীক্ষা করে যেতে হবে এবং বাংলাদেশের রিপোর্ট যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় তাহলে এই রিপোর্ট নিয়ে বিদেশে প্রবেশ অসম্ভব হবে। এখন কেবল তিনটি দেশ বাংলাদেশিদের তাদের দেশে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এই পরিস্থিতিতে আরো অনেক দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
বিশ্বে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের জন্য এখন পর্যন্ত কোন দেশে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আসেনি। বরং করোনার রিপোর্ট নিয়ে ভারতের নাগরিকরা যেকোন দেশেই যেতে পারছে। কিন্তু বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভারতের থেকে ভালো হওয়ার পরেও রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে বাংলাদেশের জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই পরিস্থিতি যদি অনতিবিলম্বে বন্ধ করা না যায়, যদি করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্যতা না পায় তাহলে বিশ্বের দুয়ার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকাই করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য যে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এখন করোনার সঙ্গে বসবাসের নীতি গ্রহণ করেছে এবং অনেক দেশের বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানের জন্যে। যেন সেই দেশে যে সকল অভিবাসীরা নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিল, তাঁদের এখন সেই দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের অভিবাসন খাত একটি বড় খাত এবং অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং টিকিয়ে রাখার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের যদি এরকম ভুয়া রিপোর্ট হতে থাকে তখন মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসমস্ত দেশে আমাদের অভিবাসীরা থাকতেন যারা করোনা পরিস্থিতিতে দেশে এসেছিলেন তাঁদের ফিরে যাওয়া দুষ্কর হবে। সেক্ষেত্রে এটা শুধুমাত্র আমাদের অর্থনৈতিক খাতে বড় আঘাত আনবে না, আমাদের দেশের ইমেজকেও ক্ষুণ্ন করবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়তো বিশ্বে একঘরে হয়ে যাবে। সেজন্য করোনা পরীক্ষায় যেন ভুয়া রিপোর্ট না দেওয়া হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে- এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার