টঙ্গীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বজনদের দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যা
বিশেষ প্রতিনিধি : টঙ্গীর ইসলামপুর (দত্তপাড়া) আলম মার্কেট এলাকায় তানজিনা ইসলাম টুম্পা (১৭) এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা বলে অভিযোগে নিহতের স্বজনদের।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গৃহবধূ টুম্পার স্বামী সাকিব মৃধাকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
টঙ্গী পূর্ব থানার ইসলামপুর (দত্তপাড়া) আলম মার্কেট এলাকার মাইনুল ইসলাম টিটুর মেয়ে। যৌতুকের দাবীতে টুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে টুম্পার স্বামী সাকিবের ফাঁসির দাবীতে মঙ্গলবার রাস্তায় বিক্ষোভ করে নিহত টুম্পার স্বজনরা।
টুম্পার নানা আবু হানিফ জানান, যৌতুকের জন্য টুম্পার ওপর প্রায়ই নির্যাতন চলতো। টুম্পার সুখের জন্য তার স্বামী সাকিব মৃধাকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ফার্নিচার, একটি মোটর সাইকেল ও নগদ প্রায় ১৫ লাখ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়। কিন্তু এতো কিছু দেওয়ার পরও সাকিবের চাহিদার শেষ ছিল না। সর্বশেষ কথিত ব্যবসার পূঁজির জন্য টুম্পাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিল সাকিব ও তার বাবা-মা। কিন্তু টুম্পা রাজি না হওয়ায় তার ওপর প্রায়ই নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ টুম্পা সম্প্রতি পিত্রালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানিয়ে টুম্পা পরবর্তীতে স্বামীর বাড়িতে আর না দেওয়ার জন্য তার বাবা-মাকে অনুরোধ জানায়। সম্প্রতি টুম্পাকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিতে স্বামী সাকিব দলবল নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে হানা দেয়। এ ঘটনায় থানায় জিডি করেন টুম্পার নানা আবু হানিফ। কিন্তু অবশেষে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে এক ধরণের জোর করেই টুম্পাকে শ্বশুর বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার কয়েক দিন পরই এ ঘটনা ঘটে।
নিহত টুম্পার ভাই সাজিদুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে একই এলাকার (আলম মার্কেট) সাইদ মৃধার ছেলে সাকিব মৃধার সাথে টুম্পার বিয়ে হয়। বয়স কম ও স্কুলে লেখা-পড়া করায় তাদের পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে একধরণের জোর করেই টুম্পাকে সাকিবের সাথে বিবাহ দিতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের আগে কথা ছিলো, টুম্পা পরীক্ষায় পাশ করলে তাকে লেখা-পড়ার সুযোগ দিতে হবে। টুম্পা এবছর ৪.৮৯ পয়েণ্ট পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করার পর কলেজে ভর্তির জন্য তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু তারা কলেজে ভর্তি হতে টুম্পাকে নিষেধ করে এবং সাকিবের কথিত ব্যবসার কথা বলে যৌতুকের জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে টুম্পার শ্বশুর বাড়ি থেকে ফোনে জানানো হয়, টুম্পা ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
টুম্পার নানা আবু হানিফ অভিযোগ করে আরো জানান, টুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। তারা টুম্পাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাননি। এমনকি পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়নি। বরং তারা টুম্পার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার আগেই লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায় সাকিব ও তার স্বজনরা।
তবে টুম্পার শ্বশুর আবু সাঈদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টুম্পা আত্মহত্যা করেছে এবং তারা কখনো যৌতুক দাবী করেননি। এমনকি টুম্পাকে কখনো কোন ধরণের নির্যাতনও করা হয়নি। টুম্পার আত্মহত্যার জন্য তারা কেউ দায়ী নন বলেও দাবী করেন টুম্পার শ্বশুর আবু সাঈদ।
এদিকে নিহত টুম্পার সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই সেলিম জানান, টুম্পার লাশ তারা হাসপাতালে পেয়েছেন এবং সেখানেই সুরতহাল করেছেন। গলায় ফাঁসির দাগ ছাড়া শরীরে আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাননি বলেও তিনি জানান। ‘ময়না তদন্ত রিপোর্টের পরই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে’ বলেন এসআই সেলিম। টুম্পার স্বামী সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।