হাসপাতালের বিল মেটাতে সন্তান বিক্রি: বিল পরিশোধ করে সন্তান ফিরেন দেন জিএমপি’র কমিশনার
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হাসপাতালের বিল মেটাতে না পেরে সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন শরীফ-কেয়া দম্পত্তি। বিল মিটিয়ে সন্তান ছাড়াই বাড়ি ফেরেন তারা।
শুক্রবার (১ মে) গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানা এলাকার ’সেন্ট্রাল মেডিকেল হাসপাতালে’ এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন। ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে তড়িৎ পদক্ষেপ নেন তিনি। নিজেই টাকা পরিশোধ করে সন্তানকে তার মার কোলে ফিরিয়ে দেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের এনায়েতপুর এলাকায় বাড়ি শরীফ-কেয়া দম্পত্তির। তার জানান, গত ২১ এপ্রিল গর্ভবতী স্ত্রী কেয়া খাতুনকে কোনাবাড়ির সেন্ট্রাল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিনই সিজারের মাধ্যমে কেয়া খাতুনের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান।
এই কয় দিনে ওই হাসপাতালে তাদের বিল আসে ৪৭ হাজার টাকা। কিন্ত দরিদ্র শরীফ-কেয়া দম্পতি হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে ২৫ হাজার টাকায় নবজাতকটিকে বিক্রি করে দেন। পরে সেই টাকায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে বাড়ি চলে যান।
পুলিশ কমিশনার খবর জানতে পেরে মো. আনোয়ার হোসেন নবজাতককে কিনে নেওয়া ওই ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেন। পরে নবজাতকে নিয়ে হাজির হন শরীফ হোসেনের বাড়ি। মায়ের কোলে তুলে দেন ফুটফুটে শিশুটিকে। পাশাপাশি সন্তানকে লালন-পালনের জন্য আরো পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন ওই দম্পতির হাতে।
কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এডিশনাল আইজি (এসবি) স্যারের মাধ্যমে ঘটনাটি শোনার পর খুব খারাপ লেগেছিল। খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সন্তানটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।’
এদিকে মায়ের কোলে সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তার প্রশংসা করেন।
শাজানহান সুমন নামে একজন হাসপাতালের উদ্দেশ করে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘এরুপ ডাকাতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হউক’। পাশাপাশি গাজীপুর পুলিশ এর জন্য রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
রোকসানা আফরুজ নামে এক নারী লেখেন ‘একজন ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকা প্রতিটি মানুষই অসাধারণ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিভাবক যখন অসাধারণ তখন স্যারের অধিনাস্থ সকলেই অসাধারণ। সবার জন্য স্যালুট ও শুভকামনা। স্যারের অধিনস্থ হতে পেরে আমি গর্বিত’।
মাহবুব আজিজ নামে এক জন লেখেছেন-‘মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । এ কাজ কেবল তাঁর দ্বারাই সম্ভব। এ রকম হাজারো কাজ করে যাচ্ছেন । দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।’