আলোচিত

এবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজেই ‘বালিশ রোগে’ আক্রান্ত: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম নিজেই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও প্লট বরাদ্দের অনিয়মসহ ১২ দফা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে গোপন প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি।’

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও বালিশসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটার দায়িত্বে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

রূপপুরের বালিশকাণ্ড নিয়ে যখন সমালোচনা চলছে, ঠিক তখনই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গোপন প্রতিবেদন জমা দেয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। গত ২৬ মে গোয়েন্দা সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাশিদুল ইসলামের কাছে জবাব চেয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিরপুরের ১০/বি/১-৯ প্লটটি জনৈক মিজানুর রহমানের নামে বিনামূল্য দেখিয়ে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর অনুমতি দিয়েছেন মো. রাশিদুল ইসলাম। এই সুবিধা দিতে মিজানুর রহমানের কাছ থেকে চেয়ারম্যান কয়েক দফায় দুই কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় বিভিন্ন প্লটের লিজ দলিল তৈরি, নামজারি, বিক্রি অনুমতি দেওয়াসহ নানা অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন বলেও প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে।

মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি ফ্ল্যাট প্রকল্পেও দুর্নীতি করেছেন মো. রাশিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি ১ হাজার ৮৫০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ৮৫০টি ফ্ল্যাটের নাম জারি করার ক্ষমতা নিয়ম ভেঙে তার ঘনিষ্ঠজনকে হস্তান্তর করে ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।’ মিরপুর ডিভিশন-১ নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে জয়নগর আবাসিক প্রকল্পের ১০০টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ০৮ (আট) কোটি টাকা ঘুষ আদায় নিয়েছেন বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাশিদুল ইসলাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সদস্য হিসেবে যোগ দেন। সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান অবসরে যাওয়ার তিনমাস আগে দাফতরিক প্রয়োজনে বিদেশ সফরের সময় বিপুল অর্থ খরচ করে রাশেদুল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পদায়ন নিশ্চিত করেন।

এছাড়া, তিনি ফাইল থেকে ক্লায়েন্টদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ত্রুটির অজুহাতে গৃহায়নের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব ব্যক্তিদের ফোন করিয়ে ঘুষ নেন।

রাজশাহীতে তেরখাদিয়া প্রকল্পের ৫০ টি প্লটের ৪৪টি লটারির মাধ্যমে এবং ৬টি চেয়ারম্যান নিজে অসৎ উদ্দেশ্যে একক সিদ্ধান্তে বরাদ্দ দিয়েছেন।

রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্লট, ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোটা রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আবেদনপত্র দাখিল করতে হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্ধারিত সময়ে আবেদন না করে, বোর্ড সদস্য হিসেবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া প্রকল্পে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নিজের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশেদুল ইসলাম নিম্নপদে বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি অল্প সময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ১১ জন পিয়নকে বিভিন্ন সেকশনে বদলি করেছেন।

মোহাম্মদপুরের এফ ব্লকের আবাসিক প্রকল্পের কাজ ‘বি আলম’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিশেষ সুবিধা নিয়েছে চেয়ারম্যান। প্রতিবেদনে চেয়ারম্যানকে অনিয়ম ও দুর্নীতির সহযোগিদেওর নাম আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গাড়িচালক জড়িত।

মো. রাশিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ তার গাড়ির ড্রাইভার, ড্রাইভারের স্ত্রী ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাও এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জাড়িত আছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এছাড়া, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাকে যারা সহযোগিতা করছেন, তাদের নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশ

এসব অপরাধের জন্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অফিসে বহিরাগতদের প্রভাব ও সিন্ডিকেট চলছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদনের পর রাশিদুল ইসলামের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়ে গত ১৭ জুন একটি চিঠি দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। উপসচিব সু্মাইয়া বেগম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আগামী সাতদিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামের বক্তব্য

এসব বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলামকে ফোন ও ম্যাসেজ দিলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর বক্তব্য

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের কাছে এর লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছি। সাত দিনের ভেতরে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’ ব্যাখ্যা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button