গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : এবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে৷ তবে কালো টাকা আসলে কী তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছ।
এর পরিমান নিয়ে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব৷ প্রশ্ন আছে, কালো টাকা সাদা করলে দেশের কোনো লাভ হয় কিনা?
অর্থনীতিবিদ এবং আয়কর আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কালো টাকা বলতে সে সম্পদ বা আয়কে বুঝায় যে সম্পদ বা আয়ের বিপরীতে কর প্রদান করা হয়নি। কিন্তু এর আবার দু’টি ভাগ আছে বলে তাঁরা জানান। এর একটি হলো বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ, আরেকটি হলো অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘‘আইনে কালো টাকা হলো অপ্রদর্শিত আয়। যে আয়ের কর দেয়া হয়নি৷ সেই আয় বৈধ এবং অবৈধ দুটোই হতে পারে। কিন্তু এনবিআর আয়কর নেয়ার সময় আয়ের উৎস জানতে চায়না। এখানে আয় বৈধ না অবৈধ সেটা আলাদা করার সুযোগ নেই। তবে খরচের খাত যখন দেখানো হয় তখন তার আয়ের উৎস বলতে হয়। এটি আয়কর দেয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’’
বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো গবেষণা নেই। বিশ্বব্যাংক ২০০৫ সালের এক গবেষণায় বলছে, ২০০২-২০০৩ সালে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ছিল মোট জিডিপি’র ৩৭ দশমিক সাত ভাগ। এদিকে ২০১১ সালে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রনালয় কালো টাকা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে৷ জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১০ সালে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬২ দশমিক ৭৫ ভাগ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গবেষণায় আরো বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে কালো টাকার পরিমান ছিল জিডিপির ৩৫.৬ ভাগ। আর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কালো টাকার পরিমাণ ছিলো জিডিপির মাত্র ৭ ভাগ। বিশ্বব্যাংক অবৈধ আয়ের যে কালো টাকা, তার উৎস হিসেবে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ব্যবসা, ঘুস ও দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন ‘‘কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ, সেখানে এই সুযোগ দেয়ার পর কি করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা উচিত। যারা এই সুযোগ নেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে কালো টাকা যে খুব বেশি সাদা হয়েছে তা বলা যাবেনা। আর যারা সাদা করেননি, তারা যে কোনো ব্যবস্থার মুখে পড়েছেন বা তাঁদের কালো টাকার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমনটি কখনো দেখা যায়নি।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে মোট ১৭ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হওয়ার একটা রেকর্ড আছে। তবে তার মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তাহলে পরিমাণটা তেমন বেশি না।’’
কালো টাকা অর্থনীতির কোনো উপকার করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কালো টাকা আমাদের অর্থনীতিতে ঢুকে আছে। কিন্তু এতে দুই ধরণের সমস্যা হচ্ছে৷ প্রথমত সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর যারা সৎ বিনিয়োগকারী, তাঁরা কালো টাকার সঙ্গে পেরে উঠেন না৷ ফলে অর্থনীতিতে ভারসাম্য নষ্ট হয়।”
বাংলাদেশ থেকে কি পরিমান টাকা দেশের বাইরে পাচার হয় তা থেকেও কালো টাকা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বাংলদেশ থেকে প্রতিবছর ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত পাচার হয় বলে ধারণা করা হয়।’
সূত্র: ডয়চে ভেলে